ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নানা আয়োজনে হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন পালন

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৪ নভেম্বর ২০১৬

নানা আয়োজনে হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন পালন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জন্মদিনে ব্যক্তিগতভাবে আড়ম্বর বা আনুষ্ঠানিকতা পছন্দ করতেন না হুমায়ূন আহমেদ। তবে শুভানুধ্যায়ী, সুহৃদ ও স্বজনের ভালবাসায় শেষ পর্যন্ত লেখকের জন্মদিনটি হয়ে উঠত আনন্দময়। অনানুষ্ঠানিক জন্মদিনটিও হয়ে যেত আনুষ্ঠানিকতাপূর্ণ। বাংলাদেশ ও বাংলা সাহিত্যের এই জননন্দিত লেখক, নাট্যকার ও চলচ্চিত্রকারের ৬৮তম জন্মদিন ছিল রবিবার। অজানা ভুবনে পাড়ি দেয়া এই সাহিত্য ও শিল্পস্রষ্টা না থাকলেও তাঁর জন্মদিনকে ঘিরে ছিল নানা আয়োজন। হুমায়ূনের বইয়ের প্রকাশক, পাঠক, অনুরাগী, বন্ধু ও সান্নিধ্যপ্রাপ্তদের আনন্দ-উচ্ছ্বাস ও শ্রদ্ধা-ভালবাসায় উদযাপিত হলো তাঁর জন্মদিন। সেখানে ঘটেছিল হুমায়ূনের হাজারও ভক্তের সমাগম। তিনি যেমন অবিরাম সৃষ্টি দিয়ে মানুষকে বিনোদিত করেছেন, এটা যেন ছিল তারই প্রতিদান। তাঁকে নিবেদন করে অনুষ্ঠিত হয়েছে হুমায়ূন আহমেদের একক বইমেলা ও হিমু মেলাসহ নানা আয়োজন। গাজীপুরের পিরুজালি গ্রামের নুহাশ পল্লীতে লেখকের সমাধিসৌধে ফুলেল ভালবাসা জানিয়েছে পরিবারের সদস্য ও ভক্ত-অনুরাগীরা। জননন্দিত এ কথাশিল্পীর পিত্রালয় নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর ও হুমায়ূন আহমেদের জন্মস্থান মোহনগঞ্জেও ছিল বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা। শনিবার রাত ১২টা ১ মিনিটে প্রতিবছরের মতো এবারো ধানম-ির দখিন হাওয়ায় লেখকের বসার ঘরের টেবিলে রাখা ছিল জন্মদিনের কেক। সেই কেক কেটেছেন লেখকের সহধর্মিণী মেহের আফরোজ শাওন এবং দুই ছেলে নিষাদ ও নিনিত। নুহাশপল্লীতে ভক্ত ও পরিবারের সদস্যদের শ্রদ্ধাঞ্জলি ॥ রবিবার সকাল থেকেই হুমায়ূনের প্রিয় প্রাঙ্গণ গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে ভিড় জমে ভক্ত ও অনুরাগীদের। সমাধিতে ফুল দিয়ে প্রিয় লেখকের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়েছে তারা। লেখকের সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন এবং তাঁর দুই ছেলে। এরপর লেখকের পরিবারের সদস্যরা কবর জিয়ারত করেন। হুমায়ূন আহমেদের ম্যুরালের সামনে আপেলতলায় বাবার জন্মদিনের কেক কাটে নিষাদ ও নিনিত। সকাল ১০টার পর নুহাশপল্লীতে হাজির হন লেখকের দুই ভাই অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও আহসান হাবিবসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্টিকর্মগুলো এখন দেশের বাইরেও বিভিন্ন ভাষায় প্রচার হচ্ছে। এর ফলে দেশের বাইরেও লেখকের সৃষ্টিকর্ম ছড়িয়ে যাচ্ছে। তবে সেগুলো যেন নিয়ম মেনে হয় সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। কারণ, লেখকের উত্তরাধিকার হচ্ছে তাঁর সন্তানেরা। এ কারণে লেখকের সৃষ্টিকর্ম প্রকাশের ব্যাপারে পরিবারের সদস্যরা রয়েলটি পাচ্ছে কিনা সে বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। মেহের আফরোজ শাওন বলেন, হুমায়ূন আহমেদকে প্রকৃতভাবে জানতে হলে শুধুমাত্র তাঁর একটি বা দু’টি বই পড়লে চলবে না। পড়তে হবে তাঁর সবগুলো বই। গণগ্রন্থাগারে হুমায়ূনকে নিবেদিত বইমেলা ॥ হুমায়ূন আহমেদের ১৭টি প্রকাশনা সংস্থার আয়োজনে সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারে রবিবার বিকেলে শুরু হলো সপ্তাহব্যাপী হুমায়ূন আহমেদের একক বইমেলা। এ মেলার উদ্বোধন করেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন, হুমায়ূন আহমেদের ভাই কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব, গণগ্রন্থাগার অধিদফতরের মহাপরিচালক আশীষ কুমার সরকার। এসময় বক্তব্য রাখেন লেখক-পতœী মেহের আফরোজ শাওন। এছাড়া উদ্বোধনী পর্বে চারটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এগুলো হলো অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত ‘ হুমায়ূন আহমেদ রচনাবলীর নবম ও দশম খ-’। আর কাকলী প্রকাশনীর ‘ হুমায়ূন আহমেদের কথামালা’ এবং মেহের আফরোজ শাওন রচিত ‘হুমায়ূন সংগীত: নদীর নামটি ময়ূরাক্ষী’। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, হুমায়ূন পাঠক সৃষ্টি করেছেন, প্রকাশকদের সবসময় বড় ধরনের সমর্থন দিয়েছেন। সেলিনা হোসেন বলেন, তিনি ছিলেন বহুমাত্রিক সৃজনশীল মানুষ। তিনি সৃজনশীলতা প্রকাশের চাইতে চারপাশের মানুষের জীবনকে নন্দিত করতে চেয়েছেন। মানুষকে স্বপ্ন দেখানোর জন্য নিজেকে নিবেদন করেছিলেন। এরকম ভিন্নমাত্রার মানুষকে আবিষ্কারের চেষ্টা যে কোন মানুষ তার জীবনে নতুন মাত্রায় উন্নীত করবে। মেহের আফরোজ শাওন হুমায়ূন আহমেদের রচনাবলীর সম্পাদক সাংবাদিক সালেহ চৌধুরীকে হুমায়ূন আহমেদের জীবনী রচনার অনুরোধ জানান। আর আহসান হাবীব প্রকাশকদের হুমায়ূন আহমেদের বই নির্ভুলভাবে প্রকাশের অনুরোধ জানান। চ্যানেল আইয়ে হিমু মেলা ॥ হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে চ্যানেল আই চেতনা চত্বরে অনুষ্ঠিত হলো ‘৫ম হিমু মেলা’। রবিবার দুপুরে হিমুপ্রেমীরা হলুদ পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে উপস্থিত থেকে হলুদ বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের সদস্য মেহের আফরোজ শাওন অন্যপ্রকাশের স্বত্বাধিকারী মাজহারুল ইসলাম, প্রকাশক ফরিদ আহমেদ, মনিরুল হক, হিমু পরিবারের সদস্যসহ বিভিন্ন অঙ্গনের হুমায়ূন ভক্ত বিশিষ্টজনরা। এ সময় উন্মুক্ত মঞ্চে পরিবেশিত হয় হুমায়ুন আহমেদ নির্মিত চলচ্চিত্রের গান ও নাটকের গান। গানগুলো গেয়েছেন মোঃ খুরশীদ আলম, সেলিম চৌধুরী, শাহনাজ বেলী, এস আই টুটুল, সেরাকণ্ঠ ও ক্ষুদে গানরাজের শিল্পীরা। হুমায়ূন আহমেদ স্মরণে স্মৃতিকথা বলেছেন ইমপ্রেস গ্রুপের পরিচালক জহির উদ্দিন মাহমুদ মামুনসহ মেলায় আগত বিশিষ্টজনরা। নৃত্য পরিবেশন করেছে ক্যামব্রিয়ান স্কুলের শিক্ষার্থীরা। মেলায় ছিল হুমায়ুন আহমেদের বই, চলচ্চিত্র ও নাটকের ভিডিও সিডির স্টলসহ নানান পণ্যসামগ্রীর স্টল। এর আগে, ১২ নবেম্বর রাত ১২টা এক মিনিটে হুমায়ূন আহমেদের বাসায় কেক কেটে জন্মদিন উদযাপন করেন পরিবারের সদস্যরা। টরেন্টোতে চলছে হুমায়ূন আহমেদের একক বই মেলা।
×