ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সাঁওতালপল্লীতে সমাবেশ

ভূমির অধিকারের বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য না থাকায় আদিবাসীরা হতাশ

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৪ নভেম্বর ২০১৬

 ভূমির অধিকারের বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য না থাকায় আদিবাসীরা হতাশ

নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা, ১৩ নবেম্বর ॥ গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারে জমি নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনার পর ঢাকা থেকে আসা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও মানবাধিকার সংগঠনের নেতাকর্মীর আগমনে সকাল থেকেই সাঁওতালপল্লী জয়পুর ও মাদারপুর এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। রবিবার আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ সেখানে গিয়ে গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন এবং মাদারপুর মিশন গির্জার সামনের মাঠে সমাবেশ করেন। একই স্থানে ঐক্য ন্যাপ সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, মানবাধিকার ও নারীনেত্রী খুশি কবির, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত পৃথক সমাবেশ করেন। আওয়ামী লীগের সমাবেশের শুরুতে স্থানীয় সাঁওতাল সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা তাদের দুঃখ, দুর্দশা এবং অসহায় অবস্থা তুলে ধরেন নেতৃবৃন্দের কাছে। তাদের ওপর যে অমানবিক নির্যাতন, হত্যা, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাট হয়েছে তার প্রতিকার দাবি করেন। সেই সঙ্গে বাপ-দাদার জমি ফিরিয়ে দেয়ারও দাবি জানান তারা। জবাবে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ সমাবেশে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তারা আদিবাসীর সমস্যা সমাধানের নির্দেশনা নিয়ে এখানে এসেছেন। তারা বলেন, যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের পুনর্বাসন করা হবে। ভূমিহীনদের কৃষি জমি দেয়া হবে। কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ব্যবসা করার জন্য পুঁজি দেয়া হবে। সেই সঙ্গে শিক্ষা বিস্তারের জন্য এলাকায় আরও একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। তারা বলেন, তালিকা পেলে ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হবে। সংখ্যালঘু প্রসঙ্গে বলেন, তাদের পূর্ণ নিরাপত্তা দেয়া হবে। এ ঘটনার নেপথ্যে কেউ ষড়যন্ত্র করে থাকলে তদন্তসাপেক্ষে জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আদিবাসীদের বাপ-দাদার জমির ব্যাপারে তারা বলেন, সবকিছু দেখেশুনে তার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে ভূমির অধিকারের ব্যাপারে সুস্পষ্ট বক্তব্য না থাকায় সাধারণ সাঁওতালদের কাছে বিষয়টি ধোঁয়াশা রয়ে গেল বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন। তাদের হতাশা এতে কাটেনি। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক টিপু মুন্সি এমপি, সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি এমপি প্রমুখ। সমাবেশে সাঁওতাল নেতৃবৃন্দের মধ্যে তাদের সমস্যা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন রমেনা কিসকু, রিটা মারডি, মেথিয়াস মারডি, বাহানাজ টুডু, এমেলি সরেন ও শ্যামল মারডি। অপরদিকে মানবাধিকার ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এবং রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে আয়োজিত পৃথক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ড. আবুল বারকাত, শারমিন মুর্শিদ, সনজিব ব্রম, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজল ভট্টাচার্য, যুব ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল আল কাফি রতন, সিপিবি প্রেসিডিয়াম সদস্য মিহির ঘোষ, ফাদার ড. সিভাস টিয়ান টুডু প্রমুখ। ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, সাঁওতাল বসতি উচ্ছেদে যে ঘটনা ঘটেছে তা মানবতাবিরোধী অপরাধ। ’৭১-এর ন্যায় অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, নারীর সম্ভ্রমহানি, হত্যা সবকিছুই করা হয়েছে। এ নির্মমতা মেনে নেয়া যায় না। সমাবেশে বক্তারা বলেন, নির্যাতিতরা মামলা করতে পারছেন না। কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে জমি ঘেরাও করে রাখা হয়েছে। এটা কি দেশের ভেতরে আরেক দেশ নাকি? তারা বলেন, সাঁওতালদের আন্দোলনের জন্য সংগৃহীত সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা লুট করে নেয়া হয়েছে। তারা প্রশ্ন করেন বসতি উচ্ছেদের ব্যাপারে কোর্টের কোন আদেশ ছিল কিনা। যদি তা না থেকে থাকে তবে কোন্ ক্ষমতাবলে এ নির্মম পদ্ধতিতে সাঁওতালদের উচ্ছেদ করা হলো, এ প্রশ্ন রাখেন তারা। নেতৃবৃন্দ সরকারের উদ্দেশে বলেন, একদিকে আপনারা মুখে সাঁওতালদের সহানুভূতি দেখাচ্ছেন, অপরদিকে আহত সাঁওতালদের হাসপাতালের বেডে হাতকড়া পরিয়ে চিকিৎসা নিতে বাধ্য করছেন; এ কোন্ মানবিক আচরণ? তারা বলেন,’৪০ সালের রেকর্ড অনুযায়ী যাদের জমি ছিল তাদের তা ফিরিয়ে দিতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে সবধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে। এদিকে সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের ভূমি উদ্ধার কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ফিলিমন বাসকে বলেছেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যে বাপ-দাদার জমি ফিরিয়ে পাওয়ার ব্যাপারে সে রকম কোন ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। আমরা জমির ব্যাপারে তাদের কাছ থেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য আশা করেছিলাম।
×