ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দিল্লীতে কাল শুরু হচ্ছে বাণিজ্য সচিব পর্যায়ে বৈঠক

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৪ নভেম্বর ২০১৬

দিল্লীতে কাল শুরু হচ্ছে বাণিজ্য সচিব পর্যায়ে বৈঠক

এম শাহজাহান ॥ সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এবার বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির কৌশল নির্ধারণের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আগামীকাল ভারতের রাজধানী দিল্লীতে (১৫-১৬ নবেম্বর) দু’দিনব্যাপী দু’দেশের বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠক শুরু হবে। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য-বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং এক্ষেত্রে যেসব বাধা ও প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা দূরীকরণে করণীয় নির্ধারণ করা হবে। বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বর্ডারহাট চুক্তি নবায়ন, বাণিজ্য সহজীকরণ, অশুল্ক প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণসহ কিছু সমস্যার দ্রুত সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করছে দু’দেশ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল বৈঠকে যোগ দিতে আজ রাতে দিল্লীর উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ নিবিড়করণের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। দ্বিপক্ষীয়, উপআঞ্চলিক ও আঞ্চলিক পর্যায়ে যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করার লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপ ও চুক্তির প্রসঙ্গ বিবেচনাধীন রয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মোটর ভেহিকেল এ্যাগ্রিমেন্টের প্রস্তাব আছে। এছাড়া বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে উপআঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগের কথা আলোচিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তিন-পাঁচ বছরের জন্য নৌ প্রটোকল হয়েছে। এর বাইরে বিসিআইএম ইকোনমিক করিডরের অধীনে ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা নিবিড়করণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ হয় স্থলবন্দর দিয়ে। কিন্তু বর্তমানে স্থল যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা, স্থলবন্দরের দুর্বল অবকাঠামো, ওয়ানস্টপ সার্ভিস, ইলেক্ট্রনিক ডেটা এক্সচেঞ্জ ও সিঙ্গেল উইন্ডোর অনুপস্থিতিতে ব্যবসার খরচ বেড়ে গেছে। ফলে বাংলাদেশের রফতানি সেভাবে বাড়ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ২০১৮ সাল নাগাদ এক হাজার কোটি ডলারে উন্নীত হতে পারে। এটা বর্তমানের ৬৬০ কোটি ডলারের বাণিজ্যের দ্বিগুণের কাছাকাছি? তবে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য পুরোপুরিই ভারতের অনুকূলে। আর বড় ধরনের ঘাটতিতে আছে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় বাণিজ্যের পরিমাণ কাক্সিক্ষত হারে বাড়ানোর জন্য বিদ্যমান অশুল্ক বাধাগুলো অপসারণ এবং অবকাঠামোসংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। ভারতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠন কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজও (সিআইআই) দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য পুরোপুরি ভারতের অনুকূলে থাকায় এবং সে দেশে বাংলাদেশের রফতানি না বাড়ায় সম্প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি করতে হলে বাংলাদেশী পণ্যের রফতানি বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। আর এক্ষেত্রে যৌথ বিনিয়োগ করার পাশাপাশি যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে দা দূরীকরণে কাজ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, সচিব পর্যায়ের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে বড় অঙ্কের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। বাণিজ্য বৈষম্য দূরীকরণে ইতোমধ্যে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, সীমান্ত বাণিজ্য বৃদ্ধিতে বর্ডারহাট চালু করা হয়েছে। এ ধরনের হাটের সংখ্যা বাড়িয়ে বাংলাদেশের রফতানি বাড়ানোর পাশাপাশি যৌথ বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা হবে। জানা গেছে, বর্তমানে ২৫টি পণ্য (তামাক ও মাদকজাতীয় পণ্য) ছাড়া সব পণ্যেই বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা দিয়েছে ভারত? ফলে পণ্য রফতানিতে এখন শুল্কগত তেমন বাধা নেই। ভারত বাংলাদেশে প্রধানত তুলা, চিনি, খাদ্যশস্য, গাড়ি, কাপড়, মাছ, খনিজ জ্বালানি, লবণ ও সিমেন্ট রফতানি করে থাকে। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রধানত কাঁচাপাট ও পাটপণ্য, হিমায়িত খাদ্য, কৃষিপণ্য, রাসায়নিক পণ্য, চামড়া, নিট ও ওভেন পোশাক এবং চা রফতানি হয়? বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য কয়েকটি সম্ভাবনাময় শিল্প খাতও চিহ্নিত করেছে সিআইআই। এর মধ্যে ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম, প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য, গাড়ি, বস্ত্র, জৈব রসায়ন এবং হালকা প্রকৌশল। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের সেবা খাত Ñতথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, ওষুধ, হাসপাতাল ও চিকিৎসা সরঞ্জাম, পর্যটন খাতে ভারতের বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ জনকণ্ঠকে বলেন, ভারতে পণ্য রফতানি বাড়াতে হলে যৌথ বা একক বিনিয়োগ প্রয়োজন। সান ফার্মা, এশিয়ান পেইন্টস, ডাবর, ম্যারিকোর মতো কয়েকটি বড় ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠান এদেশে বিনিয়োগ করেছে, পণ্যও তৈরি করছে। কিন্তু তারা নিজের দেশে রফতানির চেয়ে এদেশের বাজার ধরায় ব্যস্ত। অথচ এসব পণ্য এখানে উৎপাদন করে ভারতে রফতানি করা সম্ভব। তিনি বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হবে। জানা গেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে শীঘ্রই দেশটিতে সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দু’দেশের সরকারপ্রধান পর্যায়ের বৈঠকে এবার গুরুত্ব পাবে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক বিষয়। ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত বিষয় সমাধানে জোর দেয়া হবে। বিশেষ করে বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল (বিবিআইএন) কার্যকর এবং নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধিতে ভারতের ভূখ- ব্যবহার করতে চায় বাংলাদেশ। এ বিষয়গুলো এবারের বৈঠকের কার্যসূচীতে রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারতের বাজারে বাংলাদেশী পণ্য শুল্কমুক্ত রফতানির সুযোগ দেয়ার কারণে দু’দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ দ্রুত বাড়ছে। তবে দু’দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি অন এরাইভ্যাল ভিসা দ্রুত চালু করা প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রথম সহসভাপতি আবুল কাশেম আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসছে। বাংলাদেশে মানসম্মত উৎপাদনমুখী শিল্প গড়ে উঠেছে। কিছু কোম্পানি ভারতে বিনিয়োগের সক্ষমতা অর্জন করেছে। একই সঙ্গে ভারতের বড় বড় কিছু কোম্পানি বাংলাদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছে। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে আমদানি-রফতানি বাধাপ্রাপ্ত হয় দুর্বল অবকাঠামোর কারণে। এসব সমস্যা সমাধানে যৌথ পদক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে।
×