ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

যোগ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ॥ শুরু হচ্ছে কাল

জলবায়ু সম্মেলনে এবার শক্তিশালী ভূমিকায় বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৪ নভেম্বর ২০১৬

জলবায়ু সম্মেলনে এবার শক্তিশালী ভূমিকায় বাংলাদেশ

কাওসার রহমান, মারাকেশ, মরক্কো থেকে ॥ আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের উচ্চপর্যায়ের অধিবেশন। এ অধিবেশনে বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধান এবং মন্ত্রীরা তাদের নিজ নিজ দেশের বক্তব্য ও অবস্থান তুলে ধরবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার সম্মেলনের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্য রাখবেন। তিনি বাংলাদেশের পক্ষে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয় ও ক্ষতির (লস এ্যান্ড ড্যামেজ) ইস্যুটি ওয়ারশ ইন্টারন্যাশনাল মেকানিজম অনুযায়ী প্যারিস চুক্তিতে অন্তর্ভুক্তির জোরালো দাবি জানাবেন। সেই সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য সবুজ জলবায়ু তহবিলে আলাদা উইন্ডো চাইবেন। যেখান থেকে স্বল্পোন্নত দেশগুলো সবুজ জলবায়ু তহবিল থেকে সহজে ও দ্রুততম সময়ে অর্থ ছাড় পায়। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বাস্তুহারাদের অভিবাসনের বিষয়টিও তুলে ধরবেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর জন্য তৈরি খসড়া বক্তৃতায় এসব বিষয় তুলে ধরা হচ্ছে বলে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল সূত্রে জানা গেছে। বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের উচ্চপর্যায়ের অধিবেশনে যোগ দিতে আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মরক্কোর পর্যটন নগরী মারাকাশে আসছেন। মারাকাশে অবস্থানকালে তিনি জলবায়ু আলোচনায় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। ২০০৯ সালের পর এই প্রথম প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব উচ্চপর্যায়ের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিচ্ছে। দলে থাকছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিব, কৃষি সচিবসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল আসায় এবারের সম্মেলনে বাংলাদেশ শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের হারিয়ে যাওয়া কণ্ঠস্বর আবার উচ্চ হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্যারিস চুক্তি কার্যকরের ঘোষণা আসায় বাংলাদেশ জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে অর্থ পাওয়ার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। বিশেষ করে সবুজ জলবায়ু তহবিল থেকে বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো যাতে সহজে অর্থ ছাড় পায় সে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী জোরালোভাবে তুলে ধরবেন। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সম্মেলনে যোগ দেয়ায় বাংলাদেশের দরকষাকষির জায়গাটি আরও জোরালো হলো। বাংলাদেশ যে এই চুক্তিকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের সম্মেলনে যোগ দেয়ায় বিষয়টি আরও স্পষ্ট হলো। বিশ্বের অন্যান্য দেশও বাংলাদেশের এ বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। বিশেষ করে এবারের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতির বিষয়টি স্বল্পোন্নত দেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মনোবল বৃদ্ধি করবে বলে জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এদিকে জলবায়ু সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্য প্রদান ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েকটি দেশের সরকার প্রধানদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। এসব বৈঠকে জলবায়ু ইস্যু ছাড়াও দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে। গত ৭ নবেম্বর থেকে শুরু হওয়া বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা শনিবার শেষ হয়েছে। আলোচনায় প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের রূপরেখার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব পেয়েছে। এছাড়া অর্থায়ন, প্রযুক্তি বিনিময়, দক্ষতা বৃদ্ধি প্রবৃদ্ধি বিষয়ে কন্টাক্ট গ্রুপগুলো আলোচনা করেছে। এসব আলোচনায় ২০২০ সাল নাগাদ প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার যোগানের বিষয়ে উন্নত দেশগুলো একাধিক মতামত দিয়েছে। তবে সবুজ জলবায়ু তহবিল থেকে জলবায়ু অভিযোজন ও প্রশোমনে ভারসাম্যপূর্ণ অর্থায়নের বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি। উন্নত দেশগুলো জলাবায়ু তহবিল ২০ শতাংশ অভিযোজনে এবং ৮০ শতাংশ জলবায়ু প্রশমনে অর্থায়নের জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। অন্যদিকে উন্নয়নশীল দেশগুলো চাইছে জলবায়ু অভিযোজন ও প্রশমনে সমান সমান হতে হবে, যা ভারসাম্য রক্ষা করবে। গত ৬ দিনের আলোচনায় জলবায়ু অভিযোজন তহবিল নিয়ে উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে উন্নয়ন দেশগুলো। উন্নত দেশগুলো বলছে অভিযোজন তহবিল বাতিল হয়ে যাক। আর উন্নয়নশীল দেশগুলো বলছে প্যারিসে বলা হয়েছে, মারাকাশে অভিযোজন তহবিল চূড়ান্ত করে তা প্যারিস চুক্তিতে অন্তর্ভুক্তি করা হবে। কিন্তু তা স্বীকার করছে না উন্নত দেশগুলো। উন্নত দেশগুলো বলছে সবুজ জলবায়ু তহিবল থেকেই সকল অর্থায়ন করা হোক। এ বিষয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলো বলছে আগে থেকেই যেহেতু অভিযোজন তহবিল আছে তা বিলুপ্ত না করে এ তহবিল থেকেও অর্থায়ন করা হোক। এতে করে অর্থায়নের সুবিধা হবে। অভিযোজন তহবিল নিয়ে আলোচনার শেষের দিকে বেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠে। কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই প্রথম ধাপের আলোচনা শেষ হয়েছে।
×