ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ায় দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে পাঁচ পুলিশসহ নিহত ৭

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৪ নভেম্বর ২০১৬

বগুড়ায় দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে পাঁচ পুলিশসহ নিহত ৭

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ বগুড়ার শেরপুরের মহিপুর বাজার এলাকায় দুটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে পাঁচ পুলিশসহ সাতজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন কনস্টেবল শাজাহান করিম (৩৫), আলমগীর হোসেন (৩৩), প্রণব রায় (৩২), সোহেল রানা (৩২), সামসুল ইসলাম (৩০) এবং পুলিশে কর্মরত ক্লিনার শ্যামল চন্দ্র (৪২) ও ট্রাকচালক আব্দুর রহমান (৩২)। এ সময় আরও তিন পুলিশসহ পাঁচজন আহত হন। আহত পুলিশরা হলেন এসআই মঈনুল ইসলাম, এএসআই রুবেল চৌধুরী ও কনস্টেবল মনোয়ার হোসেন। আহতদের চারজনকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত এসআই মঈনুলকে ঢাকা পাঠানো হয়েছে। এছাড়া যশোরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর গাড়িবহরের ধাক্কায় নারীসহ ছয়জন আহত, নাটোরের বড়াইগ্রামে বাস খাদে পড়ে একজন নিহত, বগুড়ার ধুনটে গোসাইবাড়ি এলাকায় বাস উল্টে স্কুলছাত্রী আমেনা নিহত ও ফরিদপুরে চরভদ্রাসনে দুই জেএসসি পরীক্ষার্থী আহত হয়েছে। শনিবার রাত ও রবিবার পৃথক দুর্ঘটনায় এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের। শেরপুর থানার পুলিশ জানায়, কুড়িগ্রাম থেকে ৯ পুলিশ পোশাক, ওয়্যারলেসের যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য মাল আনতে একটি রিকুইজিশন করা ট্রাকে ঢাকা যাচ্ছিলেন। রাত দেড়টার দিকে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের শেরপুর উপজেলার মহিপুর বাজার এলাকায় পুলিশের ট্রাকটি পৌঁছে। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা দিনাজপুরগামী সার বোঝাই একটি ট্রাকের সঙ্গে পুলিশবাহী ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে দুটি ট্রাকেরই সামনের অংশ দুমড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই পুলিশসহ ঝাড়ুদার (পুলিশের ক্লিনার) ও ট্রাক চালক নিহত হন। দুর্ঘটনার পর পরই শেরপুর থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে হতাহতদের উদ্ধার কাজ শুরু করেন। দুর্ঘটনার কারণে বগুড়াÑঢাকা মহাসড়কে প্রায় এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। দুর্ঘটনাস্থল থেকে আহত পুলিশসহ সাতজনকে উদ্ধার করে বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। আহতদের মধ্যে সেখানে আরও তিন পুলিশ মারা যান। খবর পেয়ে পুলিশের উর্র্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও আহত পুলিশদের চিকিৎসার খোঁজ নিতে হাসপাতালে যান। আহতদের মধ্যে এসআই মঈনুলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এরফান আলী জানান, পুলিশ সদস্যরা কুড়িগ্রাম পুলিশ লাইন্সে কর্মরত ছিলেন। রবিবার দুপুরে পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি নিসারুল আরিফ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। দুপুরের পর বগুড়া পুলিশ লাইন্স মাঠে নিহত পুলিশদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। অতিরিক্ত ডিআইজিসহ উর্ধতন কমকর্তারা জানাজায় অংশ নেন। কুড়িগ্রাম পুলিশ লাইন্সে শোকের ছায়া ॥ বগুড়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচ পুলিশ নিহতের ঘটনায় কুড়িগ্রাম পুলিশ লাইন্সে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। প্রিয় সহকর্মীদের হারিয়ে মাতম করছে তারা। জেলা প্রশাসক খান মোঃ নুরুল আমিন জানান, নিহত পুলিশদের স্মরণে কালেক্টরেট সম্মেলন কক্ষে রবিবার দুপুরে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এছাড়া নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর গাড়িবহরের ধাক্কায় আহত ৬ ॥ যশোরের অভয়নগরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর গাড়িবহরের একটি গাড়ির ধাক্কায় ছয়জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। দুর্ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ লোকজন যশোর-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। নওয়াপাড়া পৌর মেয়র সুশান্ত দাস শান্তর অনুরোধে আধাঘণ্টা পর বিক্ষুব্ধ লোকজন অবরোধ প্রত্যাহার করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রবিবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়া নূরবাগ মোড়ে যশোর-খুলনা মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় ওই সড়কপথ দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর গাড়িবহর যশোর থেকে খুলনার দিকে যাচ্ছিল। তারা বলছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর গাড়িবহরের শেষের দিককার একটি গাড়ির ধাক্কায় ওই ছয়জন আহত হন। তবে হাইওয়ে পুলিশের অভয়নগর থানার ওসি কেএম আজিজুল ইসলাম বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর গাড়িবহরের কোন গাড়ির ধাক্কায় এ দুর্ঘটনা ঘটেনি। দুর্ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে অভয়নগর থানার ওসি ছিলেন, তিনি বিষয়টি বিস্তারিত জানেন। যোগাযোগ করা হলে অভয়নগর থানার ওসি আনিসুর রহমান বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর গাড়িবহর যাওয়ার সময় রাস্তা ফাঁকা ছিল। এ সময় একটি পাবলিক গাড়ি দ্রুত রাস্তায় উঠতে গেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান দুর্ঘটনার কথা নিশ্চিত করেছেন। তবে তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বহরে থাকা কোন গাড়ির ধাক্কায় কেউ আহত হয়নি। দুর্ঘটনার জন্য অন্য কোন গাড়ি দায়ী হতে পারে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আহতদের মধ্যে পাঁচজন নারী ও একজন পুরুষ। এদের মধ্যে চারজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন অভয়নগরের শংকরপাশা গ্রামের সোনিয়া বেগম (২৪), দীঘিরপাড় গ্রামের আসমা বেগম (৩৫), আনজিরা বেগম (৪৬) ও খুলনার দৌলতপুর থানার পাবলা এলাকার বীরেন্দ্রনাথ দত্ত। তারা গাড়িতে ওঠার জন্য রাস্তার ধারে অপেক্ষা করছিলেন। সুন্দরবনের দুবলারচরের আলোরকোলে চলমান রাসমেলায় অংশ নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল যশোর হয়ে ওই পথে যাচ্ছিলেন। বড়াইগ্রামে নিহত ১ ॥ নাটোরের বড়াইগ্রামে যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে বাচ্চু মিয়া (৩৫) নামে এক ফুলঝাড়ু বিক্রেতা নিহত ও আরও ১০জন আহত হয়েছে। রবিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বনপাড়া পৌরসভার কালিকাপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত বাচ্চু মিয়া নীলফামারীর ডোমারের বামনিয়া গ্রামের মৃত সৈয়ম উদ্দিনের ছেলে। বাইক চাপায় পথচারী নিহত ॥ সিরাজদিখানে বাইক চাপায় পথচারী ভানু বেগম (৭৫) নিহত হয়েছেন। উপজেলাটির কুসুমপুর রোডের আবিরপাড়া নামক স্থানে রবিবার এই দুর্ঘটনা ঘটে। বেপরোয়া বাইকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ভানু বেগমের ওপর আছড়ে পড়ে। এতে ভানু বেগম গুরুতর আহত হন। পরে এলাকাবাসী উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে চিকিৎসারত অবস্থায় তিনি মারা যান। তিনি সিরাজদিখান বাজারের সরদার বাড়ির মৃত ফল আলু মিয়ার স্ত্রী। তার স্বজনরা হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে গেছে। সিরাজদিখান থানার পুলিশ বাইক ও চালক সম্পর্কে কিছু জানাতে পরেননি।
×