ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ায় কমিশন প্রধানের উদ্বেগ

ঝুঁকিতে ইইউ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক

প্রকাশিত: ০৬:১১, ১৩ নভেম্বর ২০১৬

ঝুঁকিতে ইইউ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক

ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় হুমকির মুখে পড়তে পারে ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক। ইউরোপীয় ইউনিয়ন কমিশন প্রধান জ্যঁ ক্লদ জাঙ্কার শুক্রবার লুক্সেমবার্গে এক ছাত্র সমাবেশে এ কথা বলেছেন। তিনি আরও বলেন ইউরোপ কিভাবে চলে তা ট্রাম্পকে শেখানো দরকার। খবর এএফপি ও বিবিসি অনলাইনের। জাঙ্কার ধারণা করেন, বাকি বিশ্ব সম্পর্কে ধারণা পেতে ট্রাম্প সম্ভবত আগামী দুটো বছর অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণে ব্যয় করবেন। যুক্তরাষ্ট্রে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে জয়ী হন ট্রাম্প। বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশই এ জয়ের জন্য ট্রাম্পকে উষ্ণ অভিনন্দন জানায়নি, বরং অধিকাংশ দেশ কিছুটা নীরব থেকে ট্রাম্পকে নিয়ে তাদের উৎকণ্ঠাই প্রকাশ করেছে। ইইউ কমিশন প্রধানের বক্তব্য সেদিক থেকে ব্যতিক্রমধর্মী। তিনি খোলাখুলিভাবে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হওয়ায় উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। ট্রাম্পের জয়লাভের প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের শহরে শহরে এখন বিক্ষোভ চলছে। আগামী ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। তার আগে তিনি এখন নিউইয়র্কে তার ভবিষ্যত প্রশাসনের রূপরেখা ঠিক করার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রধান ডোনাল্ড টাস্কের সঙ্গে যৌথ বিবৃতিতে জাঙ্কার বুধবার ট্রাম্পকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। কিন্তু শুক্রবার লুক্সেমবার্গের ছাত্র সমাবেশে তিনি যা বলেন তাতে ওই নির্বাচনের ফল নিয়ে তার ক্ষোভই সরাসরি প্রকাশিত হয়েছে। জাঙ্কার বলেন, ‘সাধারণভাবে বলতে গেলে ইউরোপ নিয়ে আমেরিকানদের কোন মাথাব্যাথা নেই।’ নির্বাচনী প্রচারাভিযানকালে ট্রাম্পের বক্তব্য উদ্ধৃত করে জাঙ্কার বলেন ‘বেলজিয়াম হচ্ছে আমাদের দেশের গ্রামের মতো’। জাঙ্কার আরও বলেন, ‘ট্রাম্প আটলান্টিকের এপার ওপারের সামরিক সহযোগিতা জোটের প্রয়োজনীয়তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। জাঙ্কারের মতো, বিষয়টি ইউরোপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর ওপরই মহাদেশটির নিরাপত্তা বহুলাংশে নির্ভর করে। ট্রাম্প ন্যাটোর সমালোচনা করেছেন যা পশ্চিম ইউরোপের প্রতিরক্ষার অন্যতম স্তম্ভ। তিনি রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কোন্নয়নের কথা বলেছেন। জাঙ্কার বলেন, ট্রাম্প নারী, জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু,অশ্বেতাঙ্গ ও অভিবাসীদের সম্পর্কে যেসব মন্তব্য ইতোপূর্বে করেছেন তা ইউরোপীয় মূল্যবোধের সঙ্গে খাপ খায় না। এছাড়া ট্রাম্প আরও বলেছিলেন, তিনি ক্ষমতায় যেতে পারলে ১শ’ দিনের মধ্যে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাতিল করে দেবেন। নিউইয়র্ক থেকে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন অবশ্য বলেছেন যে তিনি আশা করেন, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও ট্রাম্প জলবায়ু চুক্তি বাতিল করবেন না। জার্মানি, ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডসে আগামী বছর নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এসব নির্বাচনে চমক সৃষ্টিকারী উগ্র ডানপন্থী দলগুলোর ভাল ফল করার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ অভিবাসী ইস্যু ও ইউরোজোনে ঋণ সঙ্কট সমাধানের শ্লথগতি নিয়ে ইউরোপ জুড়ে সাধারণ মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ রয়েছে। এই বিষয়গুলো দক্ষিণপন্থী দলগুলোর অবস্থান শক্তিশালী করেছে। ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার আগে এ বছর ব্রিটেনের গণভোট নিয়ে ইইউ একবার ধাক্কা খেয়েছিল। ওই গণভোটে ইউতে থাকা না থাকা প্রশ্নে ব্রিটেনের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার ইইউ ছাড়াকেই সমর্থন করে। ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সঙ্কটের পর অভিবাসী ইস্যু এক নতুন মাত্রা। অনেক রাজনীতিকই এতে মানুষের ক্ষোভকে পুঁজি করার চেষ্টা করেন। ইতালিতে আগামী মাসের ৪ তারিখ সাংবিধানিক সংস্কার প্রশ্নে গণভোট হবে। এই গণভোটকে এখন মধ্যবামপন্থী প্রধানমন্ত্রী মাত্তেও রেনজির সরকারের জন্য একটি পরীক্ষা বলেই দেখা হচ্ছে। সংস্কারের লক্ষ্য ইতালির সিনেট এবং আঞ্চলিক সরকারের ক্ষমতা খর্ব করা। কিন্তু জনমত জরিপে বলা হচ্ছে, গণভোটে রেনজি অল্প ব্যবধানে হেরে যেতে পারেন। এর ফলে বিরোধী দল ফাইভ স্টার মুভমেন্টের অবস্থানই শক্তিশালী হবে।
×