ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অনুলিখন : ওয়ালীউল্লাহ মিঠু

‘এখানে সেশনজট নেই’

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৩ নভেম্বর ২০১৬

‘এখানে সেশনজট নেই’

তুরস্কের সকাল শুরু হয় খুব ভোরে। সকালে ক্লাস থাকলে ডরমিটরির ক্যান্টিনে গিয়ে নাস্তা করে শ্বিবিদ্যালয়ের দিকে যেতে হয়। এ ক্ষেত্রে ডরমিটরির একটু কাছে থাকি বলে প্রায়ই হেঁটে যাই। কিন্তু অন্য বাংলাদেশীদের ডরমিটরি অনেক দূরে থাকায় তাদের ক্লাসে যেতে প্রায় ১.৩০-২.০০ ঘণ্টা লেগে যায়। কারণ সাধারণত আমার শহরে কোথায়ও যেতে কয়েক বার বাস এবং ট্রেন এবং মেট্রো চেঞ্জ করতে হয়। এর পর সকালের ক্লাস শেষে দুপুর ১২ টা থেকে ১.৩০ পর্যন্ত লাঞ্চ ব্রেক। সকাল এবং রাতে ডরমিটরি থেকে খাবার দেয়া হয়। আর দুপুরেরটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটিরিয়া থেকে স্বল্প মূল্যে খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। আমার এখনও ল্যাব শুরু হয়নি আর আমি পিএইচডি ছাত্র হওয়ায় আমার ক্লাস কম থাকে। হোম ওয়ার্ক বেশি থাকে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফরমাল অফিস শেষ হয় বিকেল ৪.০০ টা। তবে যাদের ল্যাব থাকবে তাদের নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। এ দেশে ডরমিটরির রুমে পড়ার কোন ব্যবস্থা নেই। পৃথক একটি স্টাডি রুম থাকে সেখানে গিয়ে ছাত্ররা পড়ে আর অনেকে লাইব্রেরিতে গিয়ে পড়ে। এখানে সারা রাত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি খোলা থাকে। এখানে বাঙালী খাবার পাওয়া যাওয়া আকাশের চাঁদের মতো। তার্কিশ খাবার যদিও স্বাস্থ্যসম্মত কিন্তু প্রাথমিকভাবে কোন বাঙালী তেমন কিছু খেতে পারবে না। তবে আমরা এখন অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এ দেশে প্রত্যেক শহরে কিছু এনজিও, আন্তর্জাতিক ছাত্র সংগঠন, সরকারী সংস্থা, রাজনৈতিক সংগঠন আছে যারা বিভিন্ন উপলক্ষে আমাদের মতো বিদেশী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন শহরে ঘুরতে নেয়, পিকনিক করে। বিভিন্ন জাদুঘরেও নিয়ে যান শিক্ষকরা। এ ক্ষেত্রে ইজমীর শহরে ইফেস, আগোরাসহ নাম করা বিভিন্ন প্রতœস্থানে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। এখানে থিওরিটিক্যালের সঙ্গে সঙ্গে প্রাকটিক্যাল থাকে সমানভাবে। যেটা আমরা বাংলাদেশে তেমন পাই না। প্রায় প্রত্যেকটি ডিপার্টমেন্টে ল্যাব রয়েছে। ১ম বর্ষ থেকে তেমন ল্যাব না থাকলেও পরের বছর থেকে ল্যাব করতে হয়। আর এ দেশের মানুষ খুবই বন্ধুভাবাপন্ন তারই ধারাবাহিকতায় শিক্ষকরা বন্ধুর মতো আচরণ করেন। এখানকার শিক্ষাব্যবস্থা সম্পূর্ণ নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলে। পুরো বছরে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৯ মাস চলে সেপ্টেম্বর-জুন পর্যন্ত। বাকি ৩ মাস সামার ভেকেশন থাকে। তবে আবার সামার স্কুল হয়ে থাকে। তবে আমার বিভাগে শিক্ষকগণ প্রতœতাত্ত্বিক উৎখননে চলে যান। কেননা এখানে সামারে কোন বৃষ্টি হয় না। এখানে শীতকালে বৃষ্টি হয়। এখানে ইউরোপ স্টাইলে শনি এবং রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকে। আমরা এই ছুটিতে সকল বাঙালী একসঙ্গে হয়ে ঘুরি। আড্ডা দিয়ে বাজার করে রান্না করে বাঙালী খাবার খাই। এছাড়াও প্রায় সময় দূরে কোথাও ঘুরতে যাই সবাই মিলে। এখানে বছরের শুরুতেই সকল পরীক্ষার রুটিন এবং খাতা দেখে নম্বর জমা দেয়ার তারিখ দিয়ে দেয়া হয়। তাই এখানে কোন সেশনজট নেই। লেখক : মোহাম্মদ মাহমুদুল হাছান খান দোকুজ এইলুল বিশ্ববিদ্যালয়, ইজমীর, তুরস্ক।
×