ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

হুমায়ূন আহমেদের ৬৮তম জন্মদিন আজ ॥ নানা আয়োজন

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৩ নভেম্বর ২০১৬

হুমায়ূন আহমেদের ৬৮তম জন্মদিন  আজ ॥ নানা  আয়োজন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ দিয়েই ১৯৭২ সালে কথাসাহিত্যে পালাবদলের তাৎপর্যপূর্ণ ইঙ্গিত দিয়েছিলেন লেখক হুমায়ূন আহমেদ। পরবর্তীতে একের পর এক উপন্যাসে পাঠকের কাছে অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা নিয়ে নন্দিত হয়ে উঠেছেন তিনি। আমৃত্যু সেই জনপ্রিয়তার স্রোতে ভাটার টান পড়েনি। মধ্যবিত্ত জীবনের কথকতা সহজ-সরল গদ্যে তুলে ধরে তিনি আজও পাঠককে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছেন। সমকালীন বাংলা সাহিত্যের জননন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদের ৬৮তম জন্মদিন আজ রবিবার। নেত্রকোনার কুতুবপুরে, ১৯৪৮ সালের এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। যথাযথ মর্যাদায় হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উদযাপনের জন্য পারিবারিকভাবে এবং বিভিন্ন সংগঠন, সংবাদ মাধ্যম ও টিভি চ্যানেল নানা কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন জনকণ্ঠকে বলেন, বরাবরের মতো পারিবারিকভাবে এদিন হুমায়ুন আহমেদকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হবে। ধানম-ির বাসা দক্ষিণ হাওয়াতে শনিবার রাত ১২টায় জন্মদিন উপলক্ষে কেক কাটার পর হুমায়ূন আহমেদের গড়া গাজীপুরের পিরুজালী গ্রামের নুহাশপল্লীতে তার সমাধিতে ফুল দেয়া হবে। ঢাকায় ফিরে চ্যানেল আইয়ের হিমু মেলায় যোগদান করা হবে। হুমায়ুন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে চ্যানেল আই চেতনা চত্বরে আজ রবিবার বেলা আড়াইটায় আয়োজন করা হয়েছে ‘ডিউ-চ্যানেল আই হিমু মেলা’। এরপর সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে হুমায়ূন আহমেদের একক বইমেলায় যোগদান করবেন। হিমু পরিবহনের আয়োজনে ঢাকা মেডিক্যালে শনিবার থেকে শুরু হয়েছে স্বেচ্ছায় রক্ত দান কর্মসূচী। সংগঠনের পক্ষ থেকে আজ সকালে নুহাশপল্লীতে তাঁর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, বিকেল সাড়ে ৪টায় শিশু একাডেমিতে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও হিমু পরিবহনের ওয়েবসাইট উদ্বোধন করা হবে। বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে শনিবার বিকেলে প্রদান করা হয় ‘এক্সিম ব্যাংক অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার’। এবার কথাসাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক এবং নবীন সাহিত্য শ্রেণীতে স্বকৃত নোমান তার ‘কালকেউটের সুখ’ উপন্যাসের জন্য এ পুরস্কার পেয়েছেন। হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে এটিএন বাংলায় আজ সকাল ৮টা ২০ মিনিটে প্রচার হবে সঙ্গীতানুষ্ঠান ‘চাঁদনী পসর’। হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র আর নাটকের গানগুলো সংশ্লিষ্ট শিল্পীর মাধ্যমে তুলে ধরা হবে এই অনুষ্ঠানে। সঙ্গে থাকবে শিল্পীর সঙ্গে গানের প্রেক্ষাপট নিয়ে আলাপচারিতা। অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দী, সেলিম চৌধুরী ও বারি সিদ্দিকী। বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে প্রচার হবে হুমায়ূন আহমেদের রচনা ও পরিচালনায় বিশেষ নাটক ‘চরণ রেখা’। হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর পিতৃভূমি নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের উদ্যোগে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়েছে। তাঁর প্রতিষ্ঠিত কুতুবপুর গ্রামের শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের পক্ষ থেকে কোরানখানি, র‌্যালি, প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, কেক কাটা, চিত্রাঙ্কন ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের মেধাবী ছাত্র হুমায়ূন আহমেদ পাঠ শেষে ওই বিভাগেই প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। একপর্যায়ে তিনি অধ্যাপনা ছেড়ে লেখালেখি, নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাণে যুক্ত হন। হুমায়ূন আহমেদ ১৯৯০-এর প্রথম দিকে চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন। এর আগে বহু নাটক লিখে তিনি দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তার নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্রের নাম ‘আগুনের পরশমণি’। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৯৫ সালে। প্রথম ছবিতেই তিনি দর্শক নন্দিত হন। ছবিটি জনপ্রিয় হওয়ায় তার মনোবল আরও বেড়ে যায়। এরপর ২০০০ সালে নির্মাণ করেন ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ও ‘দুই দুয়ারী’। ছবি দুটিতে তার দক্ষতার পরিচয় ঘটে এবং ছবিটি প্রথম শ্রেণীর দর্শকদের কাছে দারুণভাবে সমাদৃত হয়। ২০০৩ সালে তিনি নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র ‘চন্দ্রকথা’। এরপর নির্মাণ করেন মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘শ্যামল ছায়া’। ছবিটি ’৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত। ২০০৬ সালে সেরা বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে একাডেমি পুরস্কারের জন্য বাংলাদেশ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। ছবিটি কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। তার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল নিজের ছবির গান তিনি নিজেই রচনা করেছিলেন। তিনি ২০০৮ সালে নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র ‘আমার আছে জল’। তার পরিচালনায় শেষ ছবির নাম ‘ঘেটুপুত্র কমলা’। এটি নির্মিত হয় ২০১২ সালে। এছাড়া হুমায়ূন আহমেদের লেখা উপন্যাস অবলম্বনে বেশ কিছু চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে ২০০৬ সালে মোরশেদুল ইসলাম পরিচালিত ‘দূরত্ব’, ও ‘প্রিয়তমেষু’, বেলাল আহমেদ পরিচালিত ‘নন্দিত নরকে’ এবং আবু সাইদ পরিচালিত ‘নিরন্তর’ ছবিগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ২০০৭ সালে নির্মিত হয় শাহ আলম কিরণ পরিচালিত ‘সাজঘর’ এবং তৌকির আহমেদ নির্মাণ করেন বহুল আলোচিত ‘দারুচিনি দ্বীপ’ চলচ্চিত্র। হুমায়ূন আহমেদ একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ দেশ-বিদেশে বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। তিনি কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই নিউইয়র্কে ইন্তেকাল করেন।
×