ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিবিধানের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি

মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে পলিথিন ও চায়না টিস্যুর ব্যবহার

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৩ নভেম্বর ২০১৬

মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে পলিথিন ও চায়না টিস্যুর ব্যবহার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীসহ সারাদেশে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিনের ব্যবহার। পাশাপাশি পলিথিন টিস্যু (চায়না টিস্যু ব্যাগ) ব্যাগের ব্যবহারেও সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেক দিন বাজারের সময় একজন ব্যক্তি গড়ে চারটি করে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করছেন। এভাবে রাজধানীতেই প্রতিদিন এক কোটি ৪০ লাখ পলিথিন ব্যাগ একবার ব্যবহার শেষে ফেলে দেয়া হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে পরিবেশে ও জনস্বাস্থ্যের ওপর। এ অবস্থায় পরিবেশে ক্ষতি বিবেচনায় পলিথিন ব্যাগের উৎপাদন ও ব্যবহার রোধে কঠোর আইন প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছে বিভিন্ন পরিবেশবাদী পেশাজীবী ও সামাজিক সংগঠনগুলো। শনিবার রাজধানীর শাহবাগের চারুকলা ইনস্টিটিউটের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচী পালনকালে তারা এ আহ্বান জানায়। সংগঠনগুলোর নেতারা বলেন, পরিবেশের গুরুত্ব বিবেচনায় সরকার ২০০২ সালে আইন করে পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন ও বাজারজাতকরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এ আইন দেশের জনগণ সানন্দে গ্রহণ করে। কিন্তু পলিথিন নিষিদ্ধের আইন বাস্তবায়নে সরকারের দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর মনিটরিং ও দায়িত্ব এবং কর্তব্যবোধের অভাবে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। পলিথিন নিষিদ্ধের আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচীতে অংশ নেয় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন পবাসহ ১৮টি পেশাজীবী, পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠন। বক্তারা বলেন, পলিথিন ছাড়াও কাপড়ের মতো দেখতে এক ধরনের রঙিন পলিথিন টিস্যু (যা চায়না টিস্যু নামে পরিচিত) ব্যাগে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরিতে বন্ড লাইসেন্সের মাধ্যমে আমদানিকৃত পলি প্রোপাইলিন বেআইনীভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের গবেষণায় টিস্যু ব্যাগে পলিথিনের মতো পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গেছে। নিষিদ্ধ পলিথিন ও টিস্যু ব্যাগ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের ফলে কাগজ, পাট ও কাপড়ের ব্যাগ উৎপাদন ও ব্যবহার ব্যাপকভাবে কমে গেছে। ফলে হাজার হাজার ক্ষুদ্র শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মানববন্ধন কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, ২০০২ সালে পলিথিন নিষিদ্ধের আইন দেশের জনগণ সানন্দে গ্রহণ করে। তা বাস্তবায়নের ফলে পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গীকারের অভাবে বর্তমানে আইনটি কার্যকর হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কোন কার্যকর তৎপরতা এবং মনিটরিং না থাকায় নিষিদ্ধ পলিথিন এবং টিস্যু ব্যাগে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। মানববন্ধনে পবার সাধারণ সম্পাদক ও পরিবেশ অধিদফতরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক আবদুস সোবহান বলেন, রাজধানীসহ সারাদেশে নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরির প্রায় এক হাজার দুই শত কারখানা রয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই পুরান ঢাকা কেন্দ্রিক। পুরান ঢাকার অলি-গলিতে রয়েছে প্রায় তিন শ’ কারখানা। বন্ড লাইসেন্সের মাধ্যমে আমদানিকৃত পলি প্রোপাইলিন অবৈধভাবে নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। ঢাকা শহরে একটি পরিবার প্রতিদিন গড়ে চারটি পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করে। সে হিসেবে শুধুমাত্র ঢাকা শহরে প্রতিদিন প্রায় এক কোটি ৪০ লাখের বেশি পলিথিন ব্যাগ একবার ব্যবহার শেষে ফেলে দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনেÑ যে কোন প্রকার পলিথিন শপিং ব্যাগ বা পলিইথাইলিন বা পলিপ্রপাইলিনের তৈরি বা অন্য কোন সামগ্রী পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হলে এরূপ সামগ্রীর উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রয়, বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বিতরণ, বাণিজিক উদ্দেশ্যে পরিবহন বা বাণিজিক উদ্দেশে ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পলিথন ব্যাগ উৎপাদন ও বাজারজাত করা হলে জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে। এছাড়া পরিবেশ আদালত আইন অনুযায়ী পলিথিন শপিং ব্যাগ সংক্রান্ত অপরাধসমূহের ব্যাপারে অনুসন্ধান, জড়িতদের আটক ও তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে। তারা বলেন, বিশ্বব্যাপী পলিথিন ব্যাগের বিকল্প চাহিদা বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্য ও শহরের গ্রোসারী মার্কেট এবং শপিং মলে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ। ফলে সেখানে বর্তমানে প্রায় ১শ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পাটের ব্যাগের চাহিদা রয়েছে, যা আগামী ৫ বছরে ৫০ গুণ বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশ এ চাহিদার শতকরা মাত্র তিন থেকে পাঁচ ভাগ রফতানি করছে। এ অবস্থায় পলিথিন নিষিদ্ধের আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা, পলিথিন শপিং ব্যাগ ও টিস্যু ব্যাগের উৎপাদন ও ব্যবহার বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, বাজারে পাট, কাপড় ও কাগজের ব্যাগের চাহিদা রয়েছে। পলিথিন বন্ধ করে এগুলোর ব্যবহার বাড়াতে হবে। এসব পণ্য সহজলভ্য করে জনগণকে ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। পলিথিন শপিং ব্যাগ ও টিস্যু ব্যাগের উৎপাদন ব্যবহার রোধে এর কাঁচামাল আমদানি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও পরিবেশ অধিদফতর, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় সাধন করার আহ্বান জানিয়েছেন।
×