ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গারো তরুণী ধর্ষণের প্রধান আসামি রুবেল গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৩ নভেম্বর ২০১৬

গারো তরুণী ধর্ষণের প্রধান আসামি রুবেল গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর বাড্ডায় হবু স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে গারো তরুণী ধর্ষণের বহুল আলোচিত ঘটনার প্রধান আসামি রাফসান হোসেন রুবেল অবশেষে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। রুবেল রামপুরা ও বাড্ডার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় নয়টি মামলা রয়েছে। এর আগে পুলিশের হাতে রুবেলের ঘনিষ্ঠ সহযোগী সালাহউদ্দিন গ্রেফতার হয়। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে মোঃ রাফসান হোসেন ওরফে রুবেলকে (৩০) গ্রেফতার করা হয়। তার পিতার নাম মফিজ উদ্দিন ওরফে মফু মিয়া। বাড়ি উত্তর বাড্ডার হাসান উদ্দিন সড়কের পুরাতন থানা রোডের মিশ্রীটেলায়। রুবেলের কাছ থেকে ওই গারো তরুণীর হবু স্বামীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া স্মার্টফোন ও সতেরো হাজার টাকার মধ্যে সাড়ে ৯ হাজার টাকা উদ্ধার হয়েছে। শনিবার দুপুর বারোটায় কারওয়ানবাজারের বিএসইসি ভবনের দশম তলায় র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ। তিনি জানান, রুবেলের বিরুদ্ধে গারো তরুণী ধর্ষণের মামলা ছাড়াও অস্ত্র, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও ডাকাতির অভিযোগে নয়টি মামলা আছে। একটি মামলায় রুবেল সাজাপ্রাপ্ত। আরও কয়েকটি মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি। ওই তরুণী গাজীপুর জেলার টঙ্গীর গাজীপুরা এলাকার একটি বিউটি পার্লারে চাকরি করেন। বসবাস করেন খিলক্ষেতের নিকুঞ্জ এলাকায়। বাড়ি জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জে। র‌্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, গত ২৫ অক্টোবর বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ওই তরুণী উত্তর বাড্ডার পুরাতন থানার ৬ নম্বর সড়কের হাজী রুহুল আমীনের বাড়িতে যান। বাড়িটিতে তার হবু স্বামী রিপন ম্রং বসবাস করেন। রিপন আরও ৫/৬ গারো যুবকের সঙ্গে মেস করে ওই বাড়িতে থাকেন। হবু স্বামী রিপন ম্রংয়ের বাড়ি শেরপুর জেলার নালিতাবাড়িতে। ওই তরুণী দেখা করতে গেলে মেসের ম্যানেজার হানিফ মেসের অন্য বাসিন্দা নাজমুল, সালাহউদ্দিন সালু, জয়নাল, আল-আমিন ও রনির উপস্থিতিতেই হবু স্বামীকে ১ নবেম্বর মেস ছেড়ে দিতে বলেন। তখনই ওই মেসের বাসিন্দা সালাহউদ্দিন সালু মোবাইল ফোনে তার ঘনিষ্ঠ স্থানীয় সন্ত্রাসী রুবেলকে মেসে ডেকে আনে। এরপর সন্ত্রাসী আল-আমিন, রনি, সুমন, নাজমুল ও সুমন ওই গারো তরুণীর হবু স্বামীকে মেসে নারী আনার অজুহাতে অপমান অপদস্ত করে। ওই যুবক আগত তরুণী তার হবু স্ত্রী বলে জানালেও সন্ত্রাসীরা গারো তরুণের কথা শোনেনি। সন্ত্রাসীরা জোরপূর্বক গারো তরুণের সঙ্গে থাকা ১৭ হাজার টাকা ও একটি স্মার্টফোন ছিনিয়ে নেয়। এরপর জোরপূর্বক গারো তরুণকে বাসায় আটকে রাখে। আর গারো তরুণীকে জোরপূর্বক জরুরী কথা বলার ছলে পাশের হাজী মোশাররফ মিয়ার পরিত্যক্ত বাড়ির একটি রুমে নিয়ে গিয়ে রুবেল ধর্ষণ করে। রুবেলের সহযোগীরা ধর্ষণের সময় রুবেলের সঙ্গে থেকে তাকে সহযোগিতা করে। পরবর্তীতে স্থানীয়দের সহায়তায় উদ্ধার হয়ে হবু স্বামী ও পরিবারের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে গত ২৮ অক্টোবর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন ওই তরুণী। এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে শুক্রবারই সন্ধ্যায় পুলিশ ওই তরুণীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করে। ওই তরুণী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কিনা সে বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। দায়েরকৃত মামলায় রুবেলসহ কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। গারো তরুণী ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গত ২৯ অক্টোবর বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন (বাগাছাস) ও ছাত্র ফেডারেশন। সমাবেশ থেকে জড়িতদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। অন্যথায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও করার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে। শেষ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আশ্বাসের মুখে সেই কর্মসূচী থেকে সরে আসেন বিক্ষোভকারীরা। আসামি গ্রেফতারের এ সংক্রান্ত সব কর্মসূচী বাতিল হয়েছে। শুধু জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়েছে।
×