ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মারাকাশ সম্মেলন বাংলাদেশের কার্বন কমানোর উদ্যোগের প্রশংসা

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৩ নভেম্বর ২০১৬

মারাকাশ সম্মেলন বাংলাদেশের কার্বন কমানোর উদ্যোগের  প্রশংসা

কাওসার রহমান, মারাকাশ থেকে ॥ নিজস্ব উদ্যোগে বাংলাদেশের কার্বন কমানোর পরিকল্পনা মারাকাশে চলমান জলবায়ু আলোচনায় প্রশংসা অর্জন করেছে। বৈশ্বিক কার্বন নির্গমনের জন্য বাংলাদেশ দায়ী নয়। কিন্তু তা সত্ত্বে¡ও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য উদ্যোগে অনেক উন্নয়নশীল দেশের চেয়েও বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। এটাই বাংলাদেশের প্রশংসা পাওয়ার মূল কারণ। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক উন্নয়নশীল বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্যও অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। জার্মান উন্নয়ন সংস্থা জিআইজেড ও বাংলাদেশ মিলে এচিভিং এনডিসি ও চ্যাম্পিয়নস ফ্রম এ সেক্টরাল ভিউজ বিষয়ে এক সাইড ইভেন্টের আয়োজন করে। এতে নামিবিয়া, মেক্সিকো, ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ অংশ নেয়। এতে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো তাদের কার্বন কমানোর পরিকল্পনা তুলে ধরে। বাংলাদেশের পক্ষে নিজস্ব উদ্যোগে কার্বন কমানোর ক্ষেত্রে খাতভিত্তিক পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। বলা হয়, বাংলাদেশ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী নয়। এ দেশকে মাথাপিছু দশমিক ৩৫ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ করে। যা বৈশ্বিক উষ্ণতায় কোন ভূমিকা রাখে না। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে তিনটি খাতে ৫ শতাংশ কার্বন কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। বিদ্যুত, পরিবহন ও শিল্পখাতে কার্বন কমানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ পরিকল্পনা গ্রহণ করেই বসে থাকেনি। তা বাস্তবায়নে রোডম্যাপও তৈরি করেছে। যা খসড়া পর্যায়ে রয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সব খাতের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন দেখভাল করার জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি উপদেষ্টা কমিটিও গঠন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় এই কমিটির সদস্য থাকবে। এছাড়া প্রত্যেকটি খাতে আলাদা আলাদা ওয়ার্কিং গ্রুপ কাজ করবে। যার নেতৃত্বে থাকবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা। আলোচনায় মেক্সিকোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জলবায়ুর পরিবর্তন রোধে মেক্সিকো অভিযোজন ও প্রশমন দুই বিষয়েই কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে সুশীল সমাজ ও বেসরকারী খাত সরকারকে সহায়তা করছে। ভিয়েতনাম বলেছে, আমাদের ঠিক এ্যাকশন প্লান নেই কার্বন নির্গমনের জন্য। কিন্তু আমরা ছোট ছোট প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। ভিয়েতনাম এমনিতেই একটি জ্বালানি দক্ষ দেশ। ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই থাকবে। নামিবিয়া বলেছে, তারা একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেছে। ইতোমধ্যে কম কার্বন নিঃসরণের জন্য গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এবং বেসরকারী খাতেও কম কার্বন নিঃসরণকারী যানবাহনকে উৎসাহিত করা হয়েছে। তবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তারা দক্ষতা ও অর্থায়ন নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তৃতায় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, কার্বন নির্গমন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। কার্বন আমাদের নানা সমস্যার সৃষ্টি করছে। এটা কমাতে হলে ক্যাপ পরাতে হবে। কোন দেশ কিভাবে ক্যাপ পরাবে তা এখনই ঠিক করতে হবে। কারণ পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে খারাপ হচ্ছে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো বেশি ভুগছে। শুধু অভিযোজন করে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা সম্ভব নয়। ফলে উন্নত দেশগুলোতে কার্বন কমানোর প্রতি জোর দিতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হলেও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় প্রতিরোধ দক্ষতা বাড়ছে। নিজস্ব উদ্যোগেই বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ৪০০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে বাংলাদেশের জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায়। তিনি বলেন, আমরাও কার্বন নির্গমন কমাতে চাই। তবে সকল দেশকেই এটা কমাতে হবে। আমরা কার্বন কমাতে গিয়ে উন্নয়ন কাজ ব্যাহত করতে পারব না। বাংলাদেশ এখন একটি উদীয়মান দেশ। গত এক দশক ধরে ৬ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করে চলেছে। এ বছর ৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে। ফলে এই অর্জনকে আমরা ব্যাহত করতে পারব না। উন্নয়ন করতে হলে আমাদের বিদ্যুত লাগবে। আমরা এখন গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রে পরিণত করছি। এ ক্ষেত্রে যাতে কার্বন নির্গমন না বাড়ে সে ব্যাপারে আমরা বেশ সতর্ক। ইতোমধ্যে আমাদের দেশে ৫ মিলিয়ন (৫০ লাখ) সোলার সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। দেশের গরিব মানুষ এই সোলার সিস্টেম থেকে বিদ্যুত পেেেয় খুব খুশি। তবে আমরা গ্রিডভিত্তিক সোলার বিদ্যুতে যেতে পারব না। কারণ আমাদের খুব বেশি পরিত্যক্ত জমি নেই। এসব সত্ত্বেও আমরা নিজস্ব উদ্যোগে কার্বন কমানোর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি তা বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। বর্তমানে বিশ্বের সব দেশ কার্বন কমানোর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা বাস্তবায়ন করলেও বৈশ্বিক উষ্ণতা ২ দশমিক ৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেড়ে যাবে। তাই বৈশ্বিক উষ্ণায়ন সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হলে তথা ধরণীকে রক্ষা করতে হলে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর কার্বন নির্গমনের ক্ষেত্রে অবদান আরও বাড়াতে হবে।
×