ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘চার বছর টিকতে পারবেন না ট্রাম্প’

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৩ নভেম্বর ২০১৬

‘চার বছর টিকতে পারবেন না ট্রাম্প’

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে যখন সবাই হিলারি ক্লিনটনকে দেখছিলেন; তখনও মাইকেল মুর বলছিলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনাই দেখেছেন তিনি। সেই কথা ফলে যাওয়ার পর এখন আলোচিত এই তথ্যচিত্র নির্মাতা বলছেন, ভোটে জিতে হোয়াইট হাউসে গেলেও চার বছর টিকতে পারবেন না ট্রাম্প। মুরের মতে, হয় কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে নিজেই পদত্যাগ করবেন ট্রাম্প, নয়ত তাকে অভিশংসনের মুখোমুখি হয়ে পদ ছাড়তে হবে। টাইম ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে বিশ্বের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির একজন মাইকেল মুর গত জুলাই মাসেই বলেছিলেন, হিলারির জোয়ার থাকলেও শেষ পর্যন্ত তার অপছন্দের রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পই ভোটে জিতবেন। খবর ওয়েবসাইটের। গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত ভোটে ইলেকটোরাল কলেজে স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েই ভোটে জেতেন ধনকুবের ট্রাম্প। বিরল ঘটনা হিসেবে তারপর থেকে বিভিন্ন শহরে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ চলছে। এর মধ্যেই শুক্রবার এমএসএনবিসি টিভিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে মাইকেল মুর বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প আমাদের চার বছর ভোগাতে পারবেন না বলে মনে হচ্ছে।’ এজন্য ট্রাম্পের ‘ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিন্তার’ বাইরে আর কোন কিছুকে গুরুত্ব না দেয়ার কথা বলেন বহুল আলোচিত তথ্যচিত্র ‘ফারেনহাইট নাইন-ইলেভেন’র নির্মাতা মুর। মুর বলেন, ‘আপনি যখন ট্রাম্পের মতো ব্যক্তিকেন্দ্রিক একজনকে পাবেন, যে নিজেকে ছাড়া কিছুই ভাবে না, সে হয়ত অনিচ্ছাকৃতভাবেই আইন ভাঙ্গবে। সে আইন ভাঙ্গবে। কারণ সে কেবল কোনটায় তার ভাল হবে তা নিয়েই চিন্তা করে।’ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন নীতির কড়া সমালোচক মুর ফারেনহাইট নাইন-ইলেভেনে সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী যুদ্ধকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলেন। মার্কিন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে আল কায়েদার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন তিনি। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন বলে নিজে বললেও শুরু থেকেই তার বিরোধিতা করে আসছেন মুর। বুধবার ম্যানহাটানে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভেও অংশ নেন তিনি। হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প বেশি সময় থাকতে পারবেন না- মুরের এমন মন্তব্যের পর তাকে উপস্থাপক মিকা ব্রেজিনস্কি জিজ্ঞেস করেন, তিনি ট্রাম্পের অসুস্থতা কামনা করছেন কি না? উত্তরে মুর বলেন, ‘সে তো অসুস্থ-ই। সে বর্ণবাদী, সে নারীবিদ্বেষী, সে স্বৈরাচার।’ ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ চলতেই থাকবে বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিরোধ করব, আমরা বাধা দেব। এটা চলতেই থাকবে, আজ রাত, তার পরের রাত, পরের রাত। সে যখন রুডি গিলিয়ানির মতো কাউকে এ্যাটর্নি জেনারেল বা সুপ্রীমকোর্টে মনোনয়ন দেবে, তখনও এটা চলতে থাকবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটা হবে ব্যাপক প্রতিরোধ। শপথের দিন নারীরা লাখো নারীর প্রতিবাদ সমাবেশ ডেকেছে; ওইদিন খুব সম্ভবত শপথের ইতিহাসে সেরা প্রতিবাদ দেখা যাবে’। ভোটে জয়ী ট্রাম্প আগামী ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন। এর আগেই পুরনো কয়েকটি মামলা সামাল দিতে হচ্ছে তাকে। ট্রাম্প যে হোয়াইট হাউসে পুরো মেয়াদ শেষ করতে পারবে না, সেপ্টেম্বরেই সেই আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন ইতিহাসবিদ এ্যালান লিখটম্যান। ওয়াশিংটন পোস্টকে লিখটম্যান বলেছিলেন, ‘রিপাবলিকানরা ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চায় না, কারণ তাকে তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না, সে কখন যে কী করে, তার ঠিক নেই। তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস, প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ট্রাম্প জাতীয় নিরাপত্তা বিঘিœত কিংবা পকেট ভরতে এমন কিছু করবে, যা তাকে ইমপিচ করার সুযোগ তৈরি করবে।’ ১৯৮৪ সাল থেকে এই পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনে ওয়াশিংটনের দি আমেরিকান ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক লিখটম্যানের ভবিষ্যদ্বাণী ফলেছে। এবারও হিলারির পক্ষে নানা জরিপের মধ্যেও তিনি বলছিলেন ট্রাম্পের জয়ের কথা। ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভে ওরেগনে গুলিবিদ্ধ ১ ॥ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে টানা তৃতীয় রাতের মতো বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। এ অবস্থায় ওরেগন অঙ্গরাজ্যে এক বিক্ষোভকারী গুলিবিদ্ধ হয়েছে। শনিবার এক বিবৃতিতে পুলিশ জানায়, শুক্রবার স্থানীয় সময় মধ্যরাতের পর ওরেগনের সবচেয়ে বড় শহর পোর্টল্যান্ডে একদল বিক্ষোভকারী মরিসন ব্রিজ অতিক্রম করার সময় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির গুলিতে এক বিক্ষোভকারী আহত হন। খবর অনলাইনের। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিক্ষোভকারীরা সেতুটি অতিক্রম করার সময় সেখানে আটকে পড়া গাড়িগুলোর কোন একটি থেকে এক ব্যক্তি নেমে গুলি চালায়।’ আহত বিক্ষোভকারীকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। তার অবস্থা গুরুতর নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। সন্দেহভাজন বন্দুকধারীর খোঁজ চলছে। খবরে বলা হয়, শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভকারীরা সড়ক অবরোধ করতে শুরু করে। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর আগের রাতেই পোর্টোল্যান্ডে দাঙ্গা পরিস্থিতি ঘোষণা করেছিল পুলিশ। এদিন রাতেও বিক্ষোভকারীরা দাঙ্গা পুলিশকে লক্ষ্য করে বিভিন্ন জিনিস ছুড়ে মারে। জবাবে পিপার স্প্রে ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে পুলিশ। পরে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের পিছু হটতে বাধ্য করে। এদিন অন্তত এক বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে লস এ্যাঞ্জেলেসেও শত শত বিক্ষোভকারী সড়ক অবরোধ করে। তারা ‘আমরা নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে প্রত্যাখ্যান করছি’ এবং ‘কাদের সড়ক ? আমাদের সড়ক’ বলে সেøাগান দেয়। মিয়ামিতে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী শহর জুড়ে মিছিল করে। পরে তাদের থেকে কয়েক শ’ বিক্ষোভকারী মহাসড়কে গিয়ে উভয় দিকের যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। নিউইয়র্কে বিক্ষোভকারীরা ওয়াশিংটন স্কয়ার পার্কে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে। অনেকে আবার ফিফথ এ্যাভিনিউতে ট্রাম্প টাওয়ারের সামনেও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তার বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভে ‘গণমাধ্যমের ইন্ধন’ দেখছেন বলে বৃহস্পতিবার রাতে এক টুইটে মন্তব্য করেছিলেন ট্রাম্প। শুক্রবার রাতে টুইটে তিনি বলেন, ‘গত রাতে বিক্ষোভকারীদের একটি ছোট্ট দলের মধ্যে আমি আমাদের মহান দেশের জন্য আবেগ দেখেছি, আমি এটা ভালবাসি। আমরা সবাই একসঙ্গে আসব এবং গর্বিত হব।’
×