ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইক্ষু খামারের জমি এবং তীর ধনুকের লড়াই ॥ সাহেবগঞ্জের ঘটনার নেপথ্যে

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৩ নভেম্বর ২০১৬

ইক্ষু খামারের জমি এবং তীর ধনুকের লড়াই ॥  সাহেবগঞ্জের  ঘটনার  নেপথ্যে

নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা, ১২ নবেম্বর ॥ ভূমিদস্যু একটি প্রতারক চক্রের প্রলোভনে পড়ে রংপুর চিনিকলের ইক্ষু খামারের প্রায় ১শ’ একর সরকারী সম্পত্তি পাঁচ মাস ধরে দখল করে রেখেও শেষ রক্ষা হয়নি সহজ-সরল আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের একদল মানুষের। ৬ নবেম্বর চিনিকলের রোপণ করা বীজ আখ কাটতে বাধা দিতে তীর-ধনুক নিয়ে চিনিকল শ্রমিকদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উচ্ছেদ অভিযানের সময় প্রশাসনের পাশাপাশি ওই সম্পত্তি দখল করতে এক সময়ের সহযোগীদেরই একটি অংশের উল্টো ভূমিকার কারণে দখল করা জমি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হলো তারা। আর দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে সে সময় প্রশাসনের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা না পেলেও বহিরাগত সশস্ত্র সাঁওতালদের মারমুখী ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের কারণে স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হওয়ায় চিনিকল কর্তৃপক্ষ একপ্রকার অনায়াসেই তাদের জমি ফেরত পেয়েছেন বলে মনে করছেন এখানকার লোকজন। গত কয়েকদিন ধরে এ সংক্রান্ত পরস্পরবিরোধী বিভিন্ন প্রকার সংবাদ প্রকাশের পর প্রকৃত পরিস্থিতি জানতে শনিবার ওই এলাকায় গিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে। শনিবার সকালে দেশের সকল চিনিকলের বাণিজ্যিক ইক্ষু খামারগুলোর মধ্যে একক খামার হিসেবে সবচেয়ে বড় এ খামারে গিয়ে দেখা যায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ ও চলতি রোপণ মৌসুমের আখ রোপণের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারীরা। দখলমুক্ত মাদারপুর মৌজার ভূমি উদ্ধার কমিটির স্থাপিত ক্যাম্প এলাকায় এখন চলছে আখ রোপণের কাজ। এখানে কথা হয় রংপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আবদুল আউয়ালের সঙ্গে। এ সময় তিনি জানান, গাইবান্ধা জেলার কৃষিভিত্তিক একমাত্র ভারি শিল্প কারখানা মহিমাগঞ্জের রংপুর চিনিকলের মালিকানাধীন এই সাহেবগঞ্জ বাণিজ্যিক ইক্ষু খামার। এ খামারটি স্থাপনের জন্য ১৯৫৮ সালে রংপুর চিনিকল স্থাপনের পর গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাপমারা এবং কাটাবাড়ী ইউনিয়নের কয়েকটি মৌজার মালিকদের কাছ থেকে ১ হাজার আট শ’ বিয়াল্লিশ একর জমি ন্যাযমূল্যে কিনে নিয়ে চিনিকলের কাছে হস্তান্তর করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক সরকার। সে সময় থেকে নিয়ম মেনে কর্তৃপক্ষ এ খামারে আখ চাষ করে তা চিনি উৎপাদনে ব্যবহার করে আসছে। এর মধ্যে গত ২০০৪ সালে লোকসানের অজুহাতে চিনিকলটি বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার। এ সময় খামারের কিছু জমি এলাকার লোকজনের কাছে দরপত্রের মাধ্যমে এক-দেড় বা দু’বছরের স্বল্প মেয়াদে চাষের জন্য লিজ দেয়া হয়। এরপর মাত্র দু’বছর পর চিনিকলটি পুনরায় চালু করা হলেও জনবল সঙ্কটের কারণে শুধু আখ চাষের চুক্তিতে লিজ প্রথা অব্যাহত রাখা হয়। কিন্তু লিজ গ্রহীতারা লিজমানি পুরোপুরি পরিশোধ না করাসহ বিভিন্নভাবে চুক্তি অমান্য করায় গত তিন বছর থেকে লিজ প্রথা বাতিল করে জমিগুলো ফিরিয়ে নিয়ে চিনিকলের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আখ চাষ শুরু করা হয়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, এ সময় থেকেই শুরু হয় ষড়যন্ত্রের। বিপুল পরিমাণ টাকা পরিশোধ না করা লিজ গ্রহীতারা ‘চিনিকলের জমি আমাদের বাপ-দাদার সম্পত্তি’-এ ধুয়া তুলে সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য সরল ও নিরীহ লোকজনের কাছ থেকে চাঁদা তুলতে শুরু করে জমি উদ্ধারের জন্য। তাদের দাবি- চিনিকল বন্ধ হলে জমিগুলো প্রাক্তন মালিকদের ফিরিয়ে দেয়ার কথা আছে দলিলে। কিন্তু তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক সরকারের কেনা ও সংস্থার কাছে দেয়া কোন দলিলেই এমন কোন কথা লেখা নেই। এছাড়া চালু এ চিনিকল তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনাতেই এখানে আখ চাষ করছে। এরই মাঝে গত বছর বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প কর্পোরেশনের আওতাধীন কয়েকটি চিনিকলের অব্যবহৃত সম্পদের বহুমুখী ব্যবহারের মাধ্যমে চিনি শিল্প লাভজনক প্রতিষ্ঠানে উন্নীত করার লক্ষ্যে আখের পাশাপাশি বিট চাষ, কো-জেনারেশনের মাধ্যমে বিদ্যুত উৎপাদন, আখের ছোবড়া দিয়ে কাগজ, বোর্ড এবং চিটাগুড় দিয়ে স্পিরিটসহ বিভিন্ন প্রকার কেমিক্যাল প্রস্তুত ছাড়াও অর্গানিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ, হিমাগার নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে সংস্থাটি। চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে এই খামারের ২৬ বৃহৎ আকারের মজা পুকুর সংস্কারের জন্য খনন কাজ শুরু করা হয়। এ সময় লিজের নামে নামমাত্র মূল্যে জমি দখল করে খাওয়া ভূমিদস্যু চক্রটি এ খামারেই শ্রমিকের কাজ করা সহজ-সরল আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের লোকজনকে ভুল বুঝিয়ে ভূমি উদ্ধার কমিটির নামে একটি সংগঠন তৈরি করে। শাহজাহান আলী নামের এক ভূমিদস্যুর নেতৃত্বে গঠিত চক্রটি গরিব এসব মানুষের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা নিয়ে তাদের জমির মালিকানা দেয়ার স্বপ্ন দেখাতে থাকে। এরই এক পর্যায়ে ১ জুলাই ঈদ-উল-ফিতরের ছুটির সুযোগে খামারের মাদারপুর এলাকায় প্রায় এক শ’ একর জমির আখ কেটে ফেলে বেশ কিছু খড়ের চালাঘর নির্মাণ করে সাঁওতালসহ স্থানীয় কিছু লোকজন। ‘বাপ-দাদার সম্পত্তির মালিকানা দাবি করলেও এর সপক্ষে কোন প্রকার দলিল বা কাগজপত্র দেখাতে না পারায় স্থানীয় লোকজন ধীরে ধীরে সেখান থেকে সরে গেলেও ভূমিদস্যু চক্রটি রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন স্থান থেকে জমি দেয়ার লোভ দেখিয়ে তীর-ধনুকসহ বিভিন্ন দেশী অস্ত্রে সজ্জিত সাঁওতাল সম্প্রদায়ের একদল সন্ত্রাসীকে এনে পাহারা বসায়। সাইনবোর্ডে ১, ২, ৩ নং এবং মেইন ক্যাম্প লিখে সেখানে বিভিন্ন প্রকার সন্ত্রাসী কর্মকা- চালানো হচ্ছিল। চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও বিভিন্ন মামলার আসামিদের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে এ ক্যাম্পের সংবাদ একাধিক পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও কেবল ‘তীর-ধনুকের ভয়ে’ পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়নি এতদিন। এমনকি তারা খামারের অফিসে স্থাপিত অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পে প্রকাশ্য দিবালোকে হামলা চালিয়ে পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নিলেও পুলিশ রহস্যজনকভাবে নীরব ভূমিকা পালন করে সে সময়। চিনিকলের পাহারাদারদের একা পেলে তাদের একাধিকবার মারপিটও করে তারা। এ সময় তারা মাঝে মাঝেই হানা দিতে থাকে খামারের অফিসসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও সম্পদে। এমনকি গত মাসের ৭ তারিখে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন অবৈধ দখলদারদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সেখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য সময় বেঁধে দিয়ে মাইকিং করার অপরাধে খামারের দায়িত্বরত একজন পাহারাদারকে ওই ক্যাম্পে ধরে নিয়ে গিয়ে মারপিট করে ‘চিনিকলে আর চাকরি করব না’ এমন মুচলেকা লিখে নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। গাইবান্ধা জেলা প্রশাসন ও চিনিকল কর্তৃপক্ষ খামারের জমি অবৈধ দখলমুক্ত করার জন্য দফায় দফায় সাঁওতালদের ধর্মগুরুসহ বিভিন্ন নেতার সঙ্গে বৈঠক করলেও তাদের দাবির সপক্ষে কোন দলিল দেখাতে না পারলেও দখল ছাড়ে না তারা। রংপুর চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, স্থানীয় সাঁওতাল বা বাঙালী সম্প্রদায়ের কেউ নয়, বহিরাগত একদল সন্ত্রাসী এখানে ক্যাম্প স্থাপন করে পাকিস্তানী সেনাদের মতো আচরণ শুরু করেছিল। স্থানীয় আখ চাষীসহ এলাকাবাসী গোখাদ্য হিসেবে আখের হোগলা এবং ঘাস কাটতে গেলে তাদেরও মারপিট এবং মুক্তিপণের মতো করে চাঁদা আদায় শুরু করে তারা। ধীরে ধীরে দখলদাররা এতটাই উদ্ধত হয় যে, গত ৬ নবেম্বর চিনিকলের আবাদ করা জমি থেকে আখের বীজ কাটতে গেলেও তারা তীর-ধনুক নিয়ে মিলের চিনিকল শ্রমিকদের ওপর হামলা করে। এ সময় ৮ পুলিশসহ ২৫ জনকে তীরবিদ্ধ করলে ক্ষিপ্ত হয়ে এখানকার শতশত আখ চাষী তাদের প্রতিরোধ করে সন্ত্রাসীদের অবৈধ আস্তানা উচ্ছেদ করে। এ সময় দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শ্যামল হেমব্রম ও দিনাজপুরের মঙ্গল মার্ডি মারা যান। রংপুর ও দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন আদিবাসীরাও প্রায় সবাই বহিরাগত। বহিরাগতদের সন্ত্রাসী মহড়া এবং সম্প্রতি একজন শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধী কিশোরীকে ক্যাম্প এলাকায় ছাগল নিয়ে ঢুকে পড়ার অপরাধে বেধড়ক মারপিট করার কারণে এলাকার লোকজন ফুঁসে উঠে পুরো সাঁওতাল সম্প্রদায়ের ওপর। এ কারণে স্থানীয় জনসাধারণের প্রতিরোধের ফলে পাঁচ মাস ধরে দখল করে রাখা শতাধিক একর জমি দ্রুত দখলমুক্ত হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় লোকজন। এলাকার লোকজন অভিযোগ করেছেন, কতিপয় প্রতারকের মিথ্যা প্রলোভনের শিকার হয়ে সহজ-সরল সাঁওতাল সম্প্রদায় কোন প্রকার দলিলপত্র ছাড়াই জমির মালিকানা দাবি করতে গিয়ে নিজেদের জানমালের ক্ষতির পাশাপাশি বাঙালীদের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সহাবস্থান ও সম্পর্ককেও প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আদিবাসী মহিলা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দের দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলে বলেছেন, তারাই জমি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আমাদের চিনিকলের খামারের জমি দখল করতে উদ্বুদ্ধ করে এখন বিপরীত ভূমিকা পালন করছেন। জমি পাইয়ে দেয়ার জন্য নিয়মিত চাঁদা হিসেবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে আজ তারা আমাদের পথে বসিয়েছেন। গ্রেফতারের ভয়ে আত্মগোপনে থাকা সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সহসভাপতি ফিলিমন বাস্কে’র মোবাইল (০১৭১২-৬০১১৪৭) ফোনে কল করলেও বারবার ফোন কেটে দেয়ায় তার কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। রংপুর চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান দুলাল বলেন, চিনিকলের মালিকানাধীন জমিতে নিয়ম মেনেই আখচাষ করা হচ্ছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে কতিপয় রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ প্রকৃত ঘটনা না জেনেই রাজধানীতে বসে একতরফা বিবৃতি দিয়ে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করছেন। এদিকে শনিবার দুপুরে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুস সামাদ আদিবাসী পল্লী মাদারপুরে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে তাদের খোঁজখবর নেন। এ সময় মাদারপুর খ্রীস্টান পল্লীর গীর্জা চত্বরে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি বলেন, কোন পরিবার ভূমিহীন হলে তাদের অন্যত্র সরকারী জায়গায় পুনর্বাসিত করা হবে। আর চিনিকলের জমিতে অধিকার প্রতিষ্ঠায় মামলা করে জিতলে প্রশাসন তাদের সর্বোচ্চ সহায়তা দেবে। বসতি স্থাপনে যিনি উচ্ছেদেও তিনি ॥ বিডিনিউজ জানায়, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে চিনিকলের অধিগ্রহণ করা জমিতে সাঁওতালদের বসতি স্থাপনে যিনি ভূমিকা রেখেছিলেন, উচ্ছেদেও সেই শাকিল আকন্দ বুলবুলের তৎপরতা দেখা গেছে। এ বছরের শুরুতে গোবিন্দগঞ্জের সাপমারা ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাকিল। স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের ‘কাছের লোক’ বলে পরিচিত তিনি। দুই বছর আগে যে ‘সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ইক্ষু খামার ভূমি উদ্ধার সংহতি কমিটি’র ব্যানারে আন্দোলনে নেমে সাঁওতালরা মাদারপুর গ্রামের ওই জমিতে বসতি গেঁড়েছিল, ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন শাকিল। গত বছর সাঁওতালদের ভোটে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার পরও জিতে শাকিল এখন ভোল পাল্টেছেন বলে এই নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের অভিযোগ। গত ৬ নবেম্বর রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মের বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ও পুলিশের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে তিন সাঁওতাল নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তখন সাঁওতালদের বাড়িঘরে লুটপাট হয়। সাঁওতালদের শতশত একচালা ঘর পুড়িয়ে দেয়ার পর চিনিকল কর্তৃপক্ষ ট্রাক্টর দিয়ে মাটি সমান করে দিয়েছে। মাদারপুর গ্রামের সাঁওতাল মামনি কিসকু, মিকাই মুরমু, সমি মরমু এবং বাঙালী আজিরন বেগম ও রুমানা বেগমসহ বেশ কয়েকজন বিডিনিউজের কাছে বলেন, শাকিল ও এমপি আবুল কালামের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তারা বলেন, পাকিস্তান আমলে চিনিকলের জন্য অধিগ্রহণ করা তাদের বাপ-দাদার এসব জমি পুনরুদ্ধারের আশা দেখিয়ে শাকিল দু’বছর আগে তাদের সংগঠিত করেছিলেন। তার কথায় তারা ধার-দেনা করে ওই জমিতে চালাঘর তুলেছিলেন। ভোটের পর এখন উচ্ছেদ অভিযানে শাকিলই নেতৃত্ব দেন। এদিকে চেয়ারম্যান হিসেবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করলেও হামলা ও অগ্নিসংযোগে নিজের ভূমিকা অস্বীকার করেছেন শাকিল। দুই বছর আগে ‘ভুল’ তথ্য পেয়ে সাঁওতালদের আন্দোলনে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছিলেন দাবি করে শাকিল বিডিনিউজকে বলেন, ‘ভুল’ বোঝার পর গত জানুয়ারিতে ‘সংহতি কমিটি’র সভাপতির দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।
×