ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

লালদীঘিতে গণসংবর্ধনা

ঠিক হয়ে যান, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না ॥ ওবায়দুল কাদের

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১৩ নভেম্বর ২০১৬

ঠিক হয়ে যান,  কাউকে ছাড় দেয়া হবে না ॥ ওবায়দুল  কাদের

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলে বর্তমান পরিস্থিতির ইঙ্গিত করে বলেছেন, অনুপ্রবেশকারীদের বের করে দেয়া হবে। এ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। বসন্তের কোকিল আর মৌসুমি পাখির কোন স্থান আওয়ামী লীগে হবে না। তিনি বলেন, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যারা বিদেশীদের ওপর নির্ভরশীল তাদের মতো দেউলিয়া দল আর নেই। বিদেশীরা আওয়ামী লীগের বন্ধু কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার নিয়ামক শক্তি নয়। শনিবার বিকেলে ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিতদের গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দলের নগর সভাপতি ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। বক্তব্য রাখেনÑ নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ইসহাক মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, উপ-দফতর সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, উপ-প্রচার সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, সদস্য সাবেক মন্ত্রী দীপংকর তালুকদার। এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেনÑ ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর, সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, উত্তর জেলা সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদ, কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও ডাঃ দীপু মনি, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম ও খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেনÑ পুনঃনির্বাচিত উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ড. অনুপম সেন ও ড. প্রণব বড়ুয়াসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ। সমাবেশ পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক এমএ সালাম ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান। ওবায়দুল কাদের দলে অনুপ্রবেশকারীদের দ্রুত দল ছাড়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যারা বসন্তের কোকিল ও মৌসুমি পাখি তাদের আমরা চিনি। দলে তাদের কোন স্থান হবে না। এসব বসন্তের কোকিল ও মৌসুমি পাখির দরকার নেই। তিনি বলেন, দল করলে দলের শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। অন্যথায় কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। যারা নিয়মশৃঙ্খলা মানবে না তাদের দলে থাকার কোন অধিকার নেই। গুটি কয়েকজনের জন্য পুরো দলের বদনাম হতে পারে না, তা সহ্য করা হবে না। ওবায়দুল কাদের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, মঞ্চের দিকে তাকিয়ে দেখুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। আর আপনারা আপনাদের স্থান থেকে এটা-সেটা করবেন- সেদিন চলে গেছে। এটা আর করতে দেয়া হবে না। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ঠিক হয়ে যান, এ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। শেখ হাসিনার এ্যাকশন ডাইরেক্ট এ্যাকশন। চট্টগ্রামে ব্যানারে, বিলবোর্ডে আমার ছবি দেখতে আসিনি। আমি এ চট্টগ্রামে আমার নামে তোরণের শোভা দেখতে আসিনি। ফুলের মালা শুকিয়ে যাবে। এসব ফুলও শুকিয়ে যাবে। কাগজের ফুল ছিঁড়ে যাবে। পোস্টারের ছবিও ছিঁড়ে যাবে। তোরণের ছবি ভেঙ্গে যাবে। পাথরের ছবি ক্ষয়ে যাবে। কিন্তু হৃদয়ের কথা রয়ে যাবে। আমার রাজনীতিক পিতা বঙ্গবন্ধু জনগণের হৃদয়ে নাম লিখেছেন। তাঁর কন্যা শেখ হাসিনাও জনগণের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। এসব নাম কোনদিন মুছবে না। মোছা যাবে না। ফুল, বিলবোর্ডে ছবি নয়। তোরণে ছবি দিয়ে লাভ নেই। হৃদয়ে ছবি দেখান- এ নাম রয়ে যাবে। দুই পক্ষের হাতাহাতি ॥ জনসভাস্থলে দু’গ্রুপের মধ্যে চেয়ার ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। বিকেল পৌনে ৫টার দিকে গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন যখন বক্তব্য রাখছিলেন তখন এ ঘটনা ঘটে। এ সময় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। মন্ত্রী সকলকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানান। এরপর তিনি বক্তব্য রাখেন। এর আগে সকালে সার্কিট হাউসে নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ফুল দিতে এসে দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। একপক্ষ অপরপক্ষকে গালমন্দ করতেও দেখা যায়। এ ঘটনার সময় আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এ প্রসঙ্গে নেতারা বলেন, এটা নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির ঘটনা, বড় কিছু নয়। লালদীঘির সমাবেশ শেষে রাত ৮টার দিকে ওবায়দুল কাদের চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব ও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বিভিন্ন পত্রিকার সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। নিছ্ছিদ্র নিরাপত্তা ॥ র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের ব্যাপক নজরদারির মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের স্মরণকালের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার ভোর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারিতে ছিল লালদীঘি মাঠে প্রস্তুতকৃত মঞ্চ। কয়েক দফায় মেটাল ডিটেক্টরসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এ মাঠের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ছিল স্মরণকালের অন্যতম বৃহৎ আয়োজন। দুপুর ১টার পর থেকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় এ মহাসমাবেশকে ঘিরে তৃণমূল পর্যায়ের কর্মী-সমর্থক থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও জমায়েত হতে শুরু করেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের জন্য আয়োজিত এ সমাবেশ পরিণত হয়েছে সন্ধ্যা পর্যন্ত মহাসমাবেশে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়া নেতাদের সংবর্ধনা দিতে লালদীঘি মাঠসহ আশপাশ এলাকায় তিল ধারণের ক্ষমতা ছিল না সন্ধ্যা পর্যন্ত। কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোঃ ইসহাক মিয়া, বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন ও ড. প্রণব কুমার বড়ুয়া, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সভাপতি ও তিনবার নির্বাচিত সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সুযোগ্য সন্তান ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য দীপংকর তালুকদার এবং এ্যাডভোকেট বিপ্লব কুমার বড়ুয়া। এছাড়াও চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও উপদেষ্টা কমিটিতে স্থান পাওয়া নেতাদেরও এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বরণ করে নেয়ার আয়োজন করা হয়।
×