ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ম্যানিলায় রাষ্ট্রদূত জন গোমেজ এই অর্থ গ্রহণ করেছেন, সোম-মঙ্গলবারের মধ্যে আমাদের রিজার্ভে জমা হবে ॥ নিশ্চিত করলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর এএইচএম রাজি হাসান

ফেরত দিল ফিলিপিন্স

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৩ নভেম্বর ২০১৬

ফেরত দিল ফিলিপিন্স

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রিজার্ভ থেকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি হওয়া দেড় কোটি ডলার ফেরত দিয়েছে ফিলিপিন্স। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর আবু হেনা মোঃ রাজি হাসান শনিবার জনকণ্ঠকে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, আমাদের রাষ্ট্রদূত অর্থ গ্রহণ করেছেন। এটার প্রসেসিং চলছে। শনিবার বাংলাদেশে এবং রবিবার সবখানে ছুটি থাকায় সোম-মঙ্গলবারের মধ্যে এটা আমাদের রিজার্ভে যোগ হবে। এদিকে রিজার্ভ চুরির ৮১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে প্রায় ৭০ মিলিয়ন ডলার শনাক্ত করা হয়েছে। বাকি টাকা শনাক্ত করার মধ্য দিয়ে পুরো অর্থ শীঘ্রই পাওয়ার আশা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ‘টাকা উদ্ধারের’ দায়িত্ব পাওয়া আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি। বাকি টাকা শনাক্ত করার মধ্য দিয়ে পুরো অর্থ শীঘ্রই পাওয়ার আশা করেন তিনি। জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারির শুরুতে সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় এক বিলিয়ন ডলার সরানোর চেষ্টা হয়। এর মধ্যে চারটি মেসেজের মাধ্যমে ফিলিপিন্সের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকে (আরসিবিসি) সরিয়ে নেয়া হয় ৮১ মিলিয়ন ডলার। আর একটি মেসেজের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার একটি ‘ভুয়া’ এনজিওর নামে ২০ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে নেয়া হলেও বানান ভুলের কারণে সন্দেহ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়। রিজাল ব্যাংকে যাওয়া টাকার একটি বড় অংশ পরে ফিলিপিন্সের জুয়ার টেবিলে চলে যায়। এর মধ্যে ক্যাসিনো মালিকের ফেরত দেয়া দেড় কোটি ডলার পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করতে আগস্টে ম্যানিলা গিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি দল। অর্থ উদ্ধারের প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল সেখানে অবস্থান করছে। এর আগে ফিলিপিন্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জন গোমেজ জানিয়েছিলেন, একটি ক্যাসিনোর মালিক কিম অং এবং তার ইস্টার্ন হাওয়াই লেজার কোম্পানির ফেরত দেয়া দেড় কোটি ডলার ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গচ্ছিত ছিল। ক্যাসিনো মালিক অং দুই দফায় এক কোটি ডলারের বেশি ফেরত দেন, যা তিনি দুই চীনা জুয়াড়ির কাছ থেকে নিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন। গত সেপ্টেম্বরে ফিলিপিন্সের আদালত বাংলাদেশ ব্যাংককে এই দেড় কোটি ডলারের মালিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তা ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেয়। এরপরই অর্থ ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনার ১০ মাস অতিবাহিত হলেও আলোর মুখ দেখেনি তদন্ত প্রতিবেদন। একাধিকবার এ প্রতিবেদন প্রকাশের কথা বলা হলেও তা থেকে সরে আসেন খোদ অর্থমন্ত্রী। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার নাম এলেও তাদের বিরুদ্ধে এখনও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ঢিমেতালে চলছে দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সিআইডি, পুলিশ, এফবিআইয়ের তদন্ত। নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম থেকে চুরি হওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তাকে দায়ী করেছে ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটি তাদের বিরুদ্ধে এখনও কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যদিও দায়ীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি বিধিতে মামলা করার সুপারিশ করেছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। এদিকে, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় একটি মামলা করা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে। মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি। সেটিও চলছে ঢিমেতালে। এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির সর্বশেষ অবস্থা জানাতে গত বৃহস্পতিবার সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির। বৈঠক শেষে আজমালুল হোসেন কিউসি বলেন, ৮১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে প্রায় ৭০ মিলিয়ন ডলার শনাক্ত করা হয়েছে। বাকি অর্থ খুব শীঘ্রই শনাক্ত করা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন। এসব অর্থ ফিলিপিন্সের ক্যাসিনো ও মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান ফিলরেমের কাছে রয়েছে। তবে এসব অর্থ দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক জব্দ করেছে। মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখনও কারও বিরুদ্ধে মামলা করিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ফিলিপিন্সের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস আদালতে মামলা করা হয়েছে। আইনী পক্রিয়া অনুরসণ করেই ১৫ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলার ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। তিনি বলেন, বাকি অর্থ উদ্ধারে ফিলিপিন্স সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এদিকে, নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থের উদ্ধার হওয়া অংশ ফিরিয়ে আনতে সম্প্রতি ফিলিপিন্সে গেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। রিজার্ভ চুরির বিষয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের বিরুদ্ধে কোন মামলা করা হবে কিনাÑ জানতে চাইলে আজমালুল হোসেন বলেন, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের অনেক দুর্বলতা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক তাদের দোষ স্বীকার করেছে। কেননা, চুক্তি অনুসারে ফেডারেল রিজার্ভ কেবল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে বাংলাদেশের সঞ্চিত অর্থ স্থানান্তর করতে পারে। কিন্তু তারা অন্যজনের নির্দেশনা পেয়ে অর্থ ছাড় করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা পেয়ে সেটা করেনি। এটাই তো অনেক বড় স্বীকারোক্তি। যদিও রিজার্ভ চুরির পর অর্থ উদ্ধারে ফেড আমাদের অনেক সহযোগিতা করছে। ওদের বিরুদ্ধে মামলা করার আপাতত প্রয়োজন হবে না। তবে পুরো টাকা উদ্ধার করার পর ফৌজদারি মামলা করা যায় কি-না সে বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা হবে। তিনি আরও বলেন, অর্থ উদ্ধার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হলে বা আগামী বছরের ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পুরো অর্থ ফেরত পাওয়া না গেলে সবার বিরুদ্ধেই আইনগত ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া রিজার্ভ চুরির ঘটনায় তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি মামলা করতে পারে।
×