ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মিসবাহউদ্দিন খান স্মারক বক্তৃতা

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে জামায়াতের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে

প্রকাশিত: ০৪:১১, ১৩ নভেম্বর ২০১৬

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে জামায়াতের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বিশ্বে এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। মানবতার বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালে করা ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩’ পুরো পৃথিবীতে এক অনন্য নজির। সেই ধারবাহিকতায় বিরোধীদের নানা ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও যারা গণহত্যা ঘটিয়েছিল তারা আদালতে দাঁড়িয়ে ইতিহাসের স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছে। এই বিচারের মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা ক্রমান্বয়ে জনসম্মুখে প্রকাশ পেয়েছে, ধর্মের নামে রাজনীতির মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। বিচারের মাধ্যমে একদিকে মানবতার জয় হয়েছে, অন্যদিকে তারা অপরাধের প্রকাশ্য স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছেÑ এটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন। শনিবার বিকেলে রাজধানীর ধানম-িম ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে ইতিহাসবিদ, প্রাক্তন সংসদ সদস্য ও সমাজকর্মী মিসবাহউদ্দিন খানের ৮৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নবম মিসবাহউদ্দিন খান স্মারক বক্তৃতায় বক্তারা এসব কথা বলেন। মুনতাসীর মামুন-ফাতেমা ট্রাস্ট আয়োজিত এবারের বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘একাত্তরের গণহত্যার বিচার : জাতীয় ও আন্তর্জাতিক তাৎপর্য’। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও তৎপরবর্তী ইতিহাস তুলে ধরে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, বিশ্ব ইতিহাসে গণহত্যার বিচারে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে। ৭৩ সালের আইনটি একটি অসাধারণ দলিল। কোন শক্তির কাছেই বঙ্গবন্ধু মাথা নত করেননি। ১৯৫ জন পাকিস্তানীর বিচারের জোর দাবি জানিয়েছিলেন তিনি। ৭৫’ পরবর্তী সময় ও আন্তর্জাতিক নানা প্রতিবন্ধকতায় পাকিস্তান প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ৭৫’র পরেও বাংলাদেশের মানুষ গণহত্যার বিচারের দাবি ভুলে যায়নি, তারা এই বিচারের পক্ষে বার বার দাবি উঠিয়েছে। জামায়াতের নানা ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালকে জামায়াতীরা কলঙ্কিত করার চেষ্টা করেছিল, তাদের সেই অপচেষ্টা সফল হয়নি। বিরোধীরা নানা ষড়যন্ত্র করেছে কিন্তু যারা গণহত্যা ঘটিয়েছিল তারা আদালতে দাঁড়িয়ে ইতিহাসের স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা ক্রমান্বয়ে জনসম্মুখে প্রকাশ পেয়েছে। ধর্মের নামে রাজনীতির মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। এই বিচারের মাধ্যমে এটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন। সভাপতির বক্তব্যে ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, মিসবাহউদ্দিন খান তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অধিকার রক্ষায় ভূমিকা পালন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেছেন। ইতিহাসের ছাত্র ও শিক্ষক হিসেবে দেশের ইতিহাস রচনায় অবদান রেখেছেন। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পাদিত হওয়া শিমলা চুক্তির ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী তিনটি কাজ এখনও পাকিস্তান করেনি। ১৯৫ জনের বিচার করার যে শর্ত ছিল এই কাজটি তারা করেনি। এ বিষয়ে যখন দাবি উঠে তখন পাকিস্তান নীরব ভূমিকা পালন করে। ভারতের পক্ষেও এ বিষয়ে তেমন কোন চাপ দেয়া হয় না। তিনি আরও বলেন, সম্পদের ন্যায্য বণ্টনের বিষয়টিও সুরাহা হয়নি। সরকারের পক্ষে সম্পূরক দায়িত্ব হিসেবে যা করার বর্তমান সরকার তাই করবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ট্রাইব্যুনাল নিয়ে যে কোন ধরনের নেতিবাচক প্রচারকে আমরা অপতৎপরতা হিসেবে আখ্যা দেব। মিসবাহউদ্দিন খানের পরিবারের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শিল্পী হাশেম খান বলেন, এই পরিবারে প্রায় সবকটি মানুষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে আজীবন সংগ্রাম করেছেন। তিনি বলেন, তারা যে সংগ্রাম করে গেছেন রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে আমাদের সেই সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে। অনুষ্ঠানে বক্তারা উল্লেখ করেন-লেখক মিসবাহউদ্দিন খান রচিত ‘তত্ত্বাবধায়ন ও তত্ত্বাবধায়ক, প্রত্যভিযোজন, ব্যবস্থাপনায় পত্রালাপ ও ডাক চালনা’ গ্রন্থগুলো অত্যন্ত প্রশংসিত। এছাড়া ১২ খ-ে চট্টগ্রাম বন্দরের দলিলপত্র গ্রন্থনা ও সম্পাদনা করেছেন, যা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে উচ্চ প্রশংসিত।
×