ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কুমিল্লাকে হারিয়ে প্রতিশোধ নিল বরিশাল

প্রকাশিত: ০৬:১০, ১২ নভেম্বর ২০১৬

কুমিল্লাকে হারিয়ে প্রতিশোধ নিল বরিশাল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বিপিএলে এর আগে টানা তিনবার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কাছে হারে বরিশাল বুলস। এবার চতুর্থ আসরে সেই হারের প্রতিশোধ নেয়। শুক্রবার দিনের প্রথম ম্যাচে থিসারা পেরেরা (৩৪*) ও মুশফিকুর রহীমের (৩৩) দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে কুমিল্লাকে ৬ উইকেটে হারায় বরিশাল। কুমিল্লার করা ১২৯ রান তুলতে গিয়ে ৯ বল বাকি থাকতেই ১৩০ রান করে জিতে বরিশাল। কুমিল্লার ব্যাটিং শেষে বরিশাল ব্যাটসম্যানরা একদিকে খুব সাবধানী হয়ে খেলেন। আরেকদিকে কুমিল্লার বোলাররাও চাপ তৈরি করতে থাকেন। স্কোরবোর্ডে অনেক চেষ্টার পরও যেন রান যুক্ত করতে পারেন না দুই ওপেনার দিলশান মুনাবিরা ও শামসুর রহমান শুভ। ২০ রান হতেই আবার শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যান মুনাবিরা আউট হয়ে যান। রান তুলতে যে কি কষ্ট করতে হয় ব্যাটসম্যানদের। ১০ ওভারে গিয়ে ৪৮ রান করে বরিশাল। জিততে ৬০ বলে ৮২ রান লাগে। ঠিক এমন সময়ে স্পিনার নাবিল সামাদের বলে ২৬ বলে ১৬ রান করে আউট হয়ে যান শুভ। ম্যাচ কি শেষ পর্যন্ত জিততে পারবে বরিশাল? এমন প্রশ্ন উঠতেই ৬৯ রানে ডেভিড মালানকে (২৬) আউট করে দেন শরীফ। আরও চাপে পড়ে যায় বরিশাল। জিততে তখন ৪৪ বলে ৬১ রান লাগে। সম্ভব জেতা? ব্যাটিংয়ে মুশফিকুর রহীম, শ্রীলঙ্কান থিসারা পেরেরা, শাহরিয়ার নাফীস থাকেন। তাই ভরসাও থাকে। মুশফিক ও পেরেরা মিলে এগিয়ে যেতে থাকেন। স্কোরবোর্ডেও রানও জমা করতে থাকেন। ১৬ ওভার শেষে ৯৯ রান স্কোরবোর্ডে জমাও হয়ে যায়। ২৪ বলে জিততে ৩১ রান দরকার। পাকিস্তান স্পিনার ইমাদ ওয়াসিমের করা ১৭তম ওভারে গিয়ে মুশফিক ও পেরেরা দু’জনই ছক্কা হাঁকালেন। এই ওভারেই ১৭ রান আসে। তখন ১৮ বলে জিততে দরকার থাকে ১৪ রান। বরিশালই যে ম্যাচটি জিততে যাচ্ছে, ততক্ষণে তা বোঝা হয়ে যায়। দলের জিততে যখন ১৬ বলে ১২ রান প্রয়োজন, এমন সময় গিয়ে ২৩ বলে ২ চার ও ২ ছক্কায় ৩৩ রান করা মুশফিক আউট হয়ে যান। মুশফিক ও পেরেরা জুটি ৪৯ রানেই আটকে থাকে। এ জুটিটিই মূলত বরিশালকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যান। মুশফিক আউট হতেই ব্যাট হাতে নামেন শাহরিয়ার। যিনি গত ম্যাচেই অর্ধশতক করেছেন। ১২ বলে জিততে ১০ রান লাগে। শরীফের করা ১৯তম ওভারের প্রথম তিন বলেই তা উঠিয়ে ফেললেন পেরেরা। প্রথম বলে চার, দ্বিতীয় বলে দুই ও তৃতীয় বলে আবার চার হাঁকিয়ে বরিশালকে জয় এনে দেন ২০ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় অপরাজিত ৩৪ রান করা পেরেরা। ৪ উইকেট হারিয়ে ১৮.৩ ওভারে ১৩০ রান করে জিতে বরিশাল। এর আগে ম্যাচের দ্বিতীয় বলে কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাইজুলের স্পিন ঘূর্ণির জালে পড়ে গেলেন ইমরুল। বোল্ড হয়ে যান। পরের ওভারেই আরেকটি উইকেট যেতে পারত। কিন্তু থার্ড ম্যানে পাকিস্তান ব্যাটসম্যান লতিফের ক্যাচটি ধরতে পারেননি তাইজুল। লতিফকে অবশ্য খুব বেশিক্ষণ উইকেটে টিকে থাকতে দেননি গত আসরের বিস্ময় পেসার আবু হায়দার রনি। বল করতে এসে নিজের প্রথম ওভারেই উইকেট নেন। ৪৯ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসে কুমিল্লা। ২৫ রানে ২ উইকেট পড়ার পর নাজমুল হোসেন শান্ত ও মারলন স্যামুয়েলস সুন্দর খেলতে থাকেন। ৪৯ রানের সময় অহেতুক রান নিতে গিয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত রান আউট হয়ে যান। ৫৭ রানের সময় ফিরতি ক্যাচ নিয়ে লিটন কুমার দাসকে যখন সাজঘরে ফেরান পেসার আল আমিন তখন কুমিল্লার ব্যাটিং ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে। কতদূর যেতে পারবে কুমিল্লা? এমন প্রশ্নই তখন শোনা যায়। ১০০ রানও কী স্কোরবোর্ডে যোগ করতে পারবে না কুমিল্লা? এ নিয়ে যখন সবার ভেতর আলোচনা, মুহূর্তেই ৭৩ রানে ৬ উইকেটের পতন ঘটে যায়। তবে উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মারলন স্যামুয়েলস ছিলেন। আর তাতে করে ভরসাও থাকে। ভরসার প্রতিদানও দেন স্যামুয়েলস। বিপর্যয়ের সময় দলের হাল ধরা স্যামুয়েলসের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়েই ১৭ ওভারে গিয়ে ১০০ রান স্কোরবোর্ডে জমা করে কুমিল্লা। তবে দুর্ভাগ্য স্যামুয়েলসের, ২ রানের জন্য অর্ধশতক করতে পারেননি। তা না হলেও স্যামুয়েলসের এমন ব্যাটিংয়েই শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১২৯ রান করে কুমিল্লা। স্যামুয়েলসের সঙ্গে সপ্তম উইকেটে ৩৮ রানের জুটি গড়ার সঙ্গে ১৩ ও ২৩ রানে ‘নতুন জীবন’ পেয়ে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ৩০ রান করেন পাকিস্তানের সোহেল তানভির। শুধু তাই নয়, ২০তম ওভার শুরুর আগে ১১৫ রান কুমিল্লার স্কোরবোর্ডে ছিল। সেখান থেকে দলকে ১২৯ রানে নিয়ে যান সোহেল। শেষ ওভারের প্রথম ও শেষ বলে ছক্কা হাঁকান। কুমিল্লার ইনিংসে যে তিনটি ছক্কা হয়, তিনটিই সোহেল হাঁকান। রনি নেন ২ উইকেট। শেষ পর্যন্ত জয় হয় বরিশালেরই। দুইদলই নিজেদের প্রথম ম্যাচে হারে। যে দল জিতত, এবারের আসরে প্রথম জয় তুলে নিত। সেই জয়টি পেল বরিশাল। আরেকদিকে টানা দ্বিতীয় হার হলো কুমিল্লার। দুই অধিনায়কের লড়াই ছিল ম্যাচে। বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক মুশফিক ও নির্ধারিত ওভারের অধিনায়ক মাশরাফির মধ্যেও লড়াই হয়। সেই লড়াইয়ে জয়ী অধিনায়কের নাম মুশফিকুর রহীম। শুধু দুই অধিনায়কের মধ্যেই লড়াই ছিল না, ছিল গত আসরের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপের মধ্যেও লড়াই। বিপিএলের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা। রানার্সআপ বরিশাল। গত আসরে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে কুমিল্লার কাছে হেরে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি বরিশাল। দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে খেলে, দুইবারই শিরোপা জেতার স্বপ্ন ধূলিস্মাৎ হয় বরিশালের। এবার তাদের সামনে গত আসরের ফাইনালে হারার প্রতিশোধ নেয়ার ম্যাচও ছিল। সেই সঙ্গে গত আসরে লীগপর্বে দুইবার ও ফাইনালে একবারসহ মোট তিনবার কুমিল্লার মুখোমুখি হয়ে তিনবারই হারের প্রতিশোধ নেয়ার ম্যাচও ছিল। সেই প্রতিশোধ নেয়া হয়ে গেল। স্কোর ॥ কুমিল্লা ইনিংস ১২৯/৮; ২০ ওভার। বরিশাল ইনিংস ১৩০/৪; ১৮.৩ ওভার। ফল ॥ বরিশাল বুলস ৬ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ থিসারা পেরেরা (বরিশাল বুলস)।
×