ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বকাপ খেলার আশা ছাড়ছেন না বিধ্বস্ত মেসি

রেকর্ড গড়ে নেইমারের ‘হাফসেঞ্চুরি’

প্রকাশিত: ০৬:১০, ১২ নভেম্বর ২০১৬

রেকর্ড গড়ে নেইমারের ‘হাফসেঞ্চুরি’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ খেলতে বার্সিলোনা সতীর্থ লিওনেল মেসিকে নিজের বিমানে করে ব্রাজিলে নিয়ে আসেন নেইমার। তখন অনেকের মুখে চটকদার কথাবার্তা চাউর হতে থাকে। তাহলে কি দুই বন্ধু পয়েন্ট ভাগাভাগি করবেন! কিন্তু না, তেমন কিছুই হয়নি। আতিথ্য দিয়ে মেসিকে রীতিমতো কাঁদিয়ে ছেড়েছেন নেইমার। আর্জেন্টিনাকে ৩-০ গোলে হারানো ম্যাচে ব্রাজিলের জয়ের মধ্যমণি ওই নেইমারই। কি ক্লাব, কি জাতীয় দল সবখানেই অপ্রতিরোধ্য তিনি। আর মেসি! আরও একবার প্রমাণ করলেন ক্লাবের হয়ে অপ্রতিরোধ্য হলেও দেশের জার্সিতে শূন্য। মেসি, ডি মারিয়াদের এই ব্যর্থতায় পরবর্তী বিশ্বকাপ খেলা নিয়েও এখন শঙ্কায় আর্জেন্টিনা। অথচ নেইমারের ব্রাজিল প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছে রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলা। আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে গোল করে দেশের জার্সিতে ৫০ গোলের মাইফলক স্পর্শ করেছেন ২৪ বছর বয়সী নেইমার। দক্ষিণ আমেরিকা বা ইউরোপের আর কারও এত কম বয়সে ৫০ গোল করার রেকর্ড নেই। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে দাপুটে জয়ে সামনে থেকে পথ দেখিয়েছেন। কুটিনহোর করা দারুণ গোলটাতে অবদানও রাখেন। পরে গ্যাব্রিয়েল জেসুসের পাস থেকে নিজে করেন দলের দ্বিতীয় গোল। আর সেটিতেই হয়ে গেছে মাইলফলক। মাত্র চতুর্থ ব্রাজিলিয়ান হিসেবে ৫০ গোলের কীর্তি গড়েছেন। গোলের হাফসেঞ্চুরি করতে নেইমার খেলেছেন ৭৪ ম্যাচ। এর আগে যে তিনজন এই কীর্তি গড়েছেন তারা সবাই ব্রাজিলের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। নেইমারের ঠিক সামনেই এখন ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ জয়ী তারকা রোমারিও। ৭০ ম্যাচে তার গোল ৫৫টি। ৯৮ ম্যাচে ৬২ গোল নিয়ে এর পরেই আছেন ‘ফেনোমেনন’ রোনাল্ডো। আর ৯১ ম্যাচে ৭৭ গোল নিয়ে সবার ওপরে সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার পেলে। কালো মানিককে ছাড়িয়ে যেতে নেইমারের দরকার আরও ২৮ গোল। যে গতিতে এগিয়ে চলেছেন তাতে রোমারিও, রোনাল্ডোই শুধু নয়, পেলেকেও ছাড়িয়ে যেতে খুব বেশি সময় নেবেন না নেইমার। ২০১০ সালে অভিষেকের বছরে শুধু একটি গোল পেয়েছিলেন। এর পরের চার বছরে গোল পেয়েছেন ৪১টি। গত বছরটাই শুধু নিয়মিত খেলতে পারেননি, নয় ম্যাচে ছিল চার গোল। চলমান বছরে পাঁচ ম্যাচে করে ফেলেছেন চার গোল। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে সাতটি ম্যাচ খেলে করেছেন চার গোল। এভাবে চলতে থাকলে গোলের সেঞ্চুরিটাও নিশ্চয় নেইমারের কাছে অসম্ভব থাকবে না। নেইমারের সুসময়ে রীতিমতো বিধ্বস্ত, ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত মেসি। অবসর ভেঙ্গে ফেরার পর আরও কঠিন সময়ে পাঁচবারের ফিফা সেরা তারকা। দেশের প্রয়োজনেই তিনি ফিরে আসেন। এখন দেশকে বিশ্বকাপের টিকেট পাইয়ে দিতে না পারলে সমালোচনা আরও বাড়বে এটা নিশ্চিতকরেই বলা যায়। এমন কঠিন মুহূর্তে অবশ্য মুষড়ে পড়ছেন না আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। সমীকরণ কঠিন হলেও এখনও বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ আছে বলে মনে করেন বার্সিলোনা তারকা। ম্যাচ শেষে আশাবাদী মেসি বলেন, আমরা হেরে গেছি। তবে এখনও সবকিছু শেষ হয়ে যায়নি। আমাদের এখন সব ভুলে শুধু কলম্বিয়ার সঙ্গে ম্যাচে মনোযোগ দিতে হবে। ওই ম্যাচটা আমরা জিততে পারলে পরিস্থিতিটা অনেকটাই বদলে যাবে। আর্জেন্টাইন কোচ এডগার্ডো বাউজা বলেন, ম্যাচটা ৩-০ গোলে হেরে যাব ভাবিনি। ভেবেছিলাম আমাদের সমানে সমানে লড়াই করতে হবে। কিন্তু এই হার মেনে নেয়া কঠিন। ওরা দ্বিতীয় গোলটা করার পরেই আসলে খেলা শেষ হয়ে গেছে। বাছাইপর্বে প্রতিটি দলের বাকি আছে আর সাতটি করে ম্যাচ। এই সাত ম্যাচে কঠিন বাধা পেরুতে হবে আর্জেন্টিনাকে। খেলতে হবে কলম্বিয়া, চিলি, উরুগুয়ে, ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে। চারটি দলই এই মুহূর্তে এগিয়ে আছে আর্জেন্টিনার চেয়ে। ১১ ম্যাচ শেষে ২৪ ও ২৩ পয়েন্ট নিয়ে বিশ্বকাপের চূড়ান্তপর্ব প্রায় নিশ্চিতই করে ফেলেছে ব্রাজিল ও উরুগুয়ে। ১৮ ও ১৭ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে আছে কলম্বিয়া ও ইকুয়েডর। পঞ্চম স্থানে থাকা চিলির ঘরেও জমা হয়েছে ১৭ পয়েন্ট। এক পয়েন্ট কম নিয়ে আর্জেন্টিনা আছে ষষ্ঠ স্থানে। আর ১৫ ও ১৪ পয়েন্ট নিয়ে আর্জেন্টিনার ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে প্যারাগুয়ে ও পেরু।
×