ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

উচ্চ ভর্তি ফি, বিদেশীদের জন্য অর্ধেক কোটা বরাদ্দ

উত্তীর্ণ হয়েও বেসরকারী মেডিক্যালে সুযোগ পাচ্ছে না ১৯ হাজার ৭৬৬ জন

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১২ নভেম্বর ২০১৬

উত্তীর্ণ হয়েও বেসরকারী মেডিক্যালে সুযোগ পাচ্ছে  না ১৯ হাজার ৭৬৬ জন

নিখিল মানখিন ॥ মোট আসনের ৫০ শতাংশ বিদেশী কোটায় বরাদ্দ দেয়ায় বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলোতে দেশীয় শিক্ষার্থীদের জন্য আগের তুলনায় কয়েকগুণ আসন কমে যাচ্ছে। দেশীয় শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত ৫০ শতাংশ আসন থেকে আবার বিভিন্ন কোটায় বরাদ্দ দেয়া হয়ে থাকে। বেসরকারী কলেজগুলোর উচ্চ ভর্তি ফি আদায়ে ভর্তি হতে পারেন না অনেক দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থী। এমন নানা মারপ্যাঁচে পড়ে ভর্তিযুদ্ধ থেকে ছিটকে পড়বে অনেক দেশীয় মেধাবী শিক্ষার্থী। এমনিতেই ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস নম্বর পেয়েও বেসরকারী কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হতে পারবেন না ১৯ হাজার ৭৬৬ জন ভর্তিযোগ্য প্রার্থী। গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় অনেক কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী প্রতি ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা নেয়ার অভিযোগও রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ভর্তির আবেদন ১২ নবেম্বর থেকে ২৬ নবেম্বর পর্যন্ত জমা দেয়া যাবে। আবেদনকারীদের মধ্য থেকে মেধা তালিকা ২৮ নবেম্বর স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মোঃ আবুল কালাম আজাদ জনকণ্ঠকে জানান, পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে ন্যূনতম ৪০ নম্বর পেয়ে ২৯ হাজার ১৮৩ জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। এবারের পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ৮৫ দশমিক ৫ নম্বর পেয়েছে এক শিক্ষার্থী। প্রাপ্ত নম্বর এবং এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএর ভিত্তিতে মেধা তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এ বছর ৩০টি সরকারী মেডিক্যাল কলেজে ৩ হাজার ২১২ এবং বেসরকারী ৬৪টি কলেজে ৬ হাজার ২০৫ জন ভর্তির সুযোগ পাবে। সরকারী ৩ হাজার ২১২টি আসন বাদ দিলে বেসরকারী ৬ হাজার ২০৫টি আসনের জন্য লড়বেন ২৫ হাজার ৯৭১ জন ভর্তিচ্ছু ছাত্রছাত্রী। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতেও মেধা তালিকার ভিত্তিতেই শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। একটি বেসরকারী কলেজে আবেদনকারী প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষায় তাদের প্রাপ্য মেধা তালিকা অনুযায়ী সাজানো হবে। ওই কলেজের নির্ধারিত আসন অনুযায়ী আবেদনকারীদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মেধা তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট কলেজের আসন পূরণ করা হবে। বাকি শিক্ষার্থীরা বাদ পড়ে যাবেন। এভাবেই প্রতিটি বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। তবে বিভিন্ন তদ্বির ও আর্থিক লেনদনের মাধ্যমে বেশি মেধাস্কোর প্রাপ্তদের এড়িয়ে কম স্কোরধারীদের ভর্তি হওয়ার সুযোগ দেয়া হয় বলে অনেক বেসরকারী কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ডাঃ সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ এম এ আজিজ জনকণ্ঠকে জানান, ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক চিঠি পেয়েছি। মেধা তালিকা অনুযায়ীই শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। আমাদের কলেজে আসন সংখ্যা ৯৫টি। এর মধ্যে বিদেশী কোটার জন্য অর্ধেকটাই বরাদ্দ থাকছে। এই কলেজে যতজন শিক্ষার্থী আবেদন করবেন, তাদের মেধাস্কোর অনুযায়ী সাজিয়ে মাত্র ৯৫ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তির সুযোগ দেয়া হবে। এর বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর সুযোগ আমাদের নেই। আর মেধাস্কোর প্রাপ্তদের এড়িয়ে কম স্কোরধারীদের ভর্তি করানোর কোন সুযোগ নেই বলে জানান ডাঃ এম এ আজিজ। বাংলাদেশে এখনও ভর্তি ফি কম নেয়া হয় বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল প্র্যাকটিশনারস এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডাঃ জামাল উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, মেডিক্যাল কলেজ পরিচালনা করা কোনভাবেই লাভজনক নয় বলে এ সেক্টরে বড় বড় ব্যবসায়ীর মুখ দেখা যায় না। জনকল্যাণমূলক উদ্দেশেই মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়ে থাকে। তাই ব্যবসায়িক কারণে নয়, প্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকিয়ে রাখার জন্যেই তা করতে হয়। প্রতিষ্ঠান চালানোর চাহিদা ছাড়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোন বাড়তি টাকা নেয়া হয় না বলে জানিয়েছেন বেসরকারী কলেজের কর্তৃপক্ষ। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ভর্তি ফি হিসেবে ৩০ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়ে থাকে বলে জানান মহাসচিব ডাঃ জামাল উদ্দিন চৌধুরী। এদিকে, দেশের কিছু সংখ্যক বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, মানহীন কলেজ থেকে দক্ষ চিকিৎসক বের হতে পারে না। কিছুসংখ্যক কলেজের অনুমোদন আছে, হাসপাতাল নেই। শিক্ষার্থীদের প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসের জন্য পর্যাপ্ত মেডিক্যাল উপকরণ নেই। ভাড়াটে ক্যাম্পাস ও শিক্ষক দিয়ে চলে। শিক্ষার্থীদের শেখার জন্য পাওয়া যায় না পর্যাপ্ত সংখ্যক রোগী। নেয়া হয় উচ্চ ভর্তি ফি। কলেজ কর্তৃপক্ষের ইচ্ছে মতো সব কিছু চলে। সরকারী নিয়ন্ত্রণ নেই। ডাক্তারী ডিগ্রী পাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে কলেজ কর্তৃপক্ষের ওপর। বাইরে থেকে হস্তক্ষেপের খুব বেশি সুযোগ নেই। তাই নতুন মেডিক্যাল কলেজ অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথাযথভাবে তদন্ত করে দেখার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন চিকিৎসক নেতৃবৃন্দ। আর বিএমডিসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি অভিন্ন মূল্যায়ন কমিটি গঠন হতে যাচ্ছে এবং বিভিন্ন অভিযোগে ইতোমধ্যে ১২টি কলেজের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সরকার নির্ধারিত ফি ॥ দীর্ঘ সমালোচনা ও আলোচনার পর বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ভর্তি ফি নির্ধারণ করে দেয় সরকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে এক প্রজ্ঞাপনও জারি করে। বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজগুলোর নিজেদের ইচ্ছামতো বাড়তি অর্থগ্রহণ ঠেকাতেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু সরকার নির্ধারিত ফি মেটাতেও পারে না অনেক দরিদ্র শিক্ষার্থী। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত ওই প্রজ্ঞাপনে জানা যায়, বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলো ভর্তি ফি বাবদ ১৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা নিতে পারবে। ইন্টার্ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এ ছাড়া পাঁচ বছরে মোট টিউশন ফি বাবদ ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার বেশি গ্রহণ করতে পারবে না। সরকারের পক্ষ থেকে ফি নির্ধারণ করে দেয়ার ফলে বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ থেকে একজন শিক্ষার্থীর এমবিবিএস ডিগ্রী সম্পন্ন করতে মোট খরচ হবে ১৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা। তবে ইন্টার্ন ফি বাবদ কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে যে টাকা গ্রহণ করবে পরবর্তীতে ইন্টার্নশিপ করার সময় তার লভ্যাংশসহ ফেরত দেবে। অথচ সরকারী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি ফি মাত্র ১২ হাজার টাকা (তিন মাসের টিউশন ফিসহ)।
×