ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চীন থেকে চার হাজার টন ধারণক্ষমতার ভাসমান ক্রেন আসছে এ মাসেই

পদ্মা সেতুর তৃতীয় স্প্যান মাওয়ায়, ভায়াডাক্টের ১৭ পাইল সম্পন্ন

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১২ নভেম্বর ২০১৬

পদ্মা সেতুর তৃতীয় স্প্যান মাওয়ায়, ভায়াডাক্টের ১৭ পাইল সম্পন্ন

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ পদ্মা সেতুর সংযোগ সেতুর (ভায়াডাক্টে) কাজ চলছে পুরোদমে। এ পর্যন্ত ১৭টি পাইল স্থাপন হয়ে গেছে। সেতুর তৃতীয় স্প্যানটিও মাওয়ায় পৌঁছেছে। সেই সঙ্গে সুপার স্ট্রাকচারের তৃতীয় চালানটিও মাওয়ায় পৌঁছে গেছে। চীন থেকে বিশাল এ চালান মাওয়ায় পৌঁছানোর পর কাজের গতি বেড়ে গেছে। পদ্মা সেতুর তিনটি স্প্যান এখন মাওয়ায়। এগুলো মাওয়ার কুমারভোগে বিশেষ ওয়ার্কশপে ফিটিং চলছে। একে একে চীনে তৈরি সুপার স্ট্রাকচার পর্যায়ক্রমে মাওয়ায় পৌঁছাচ্ছে। ফিটিং করা স্প্যান ক্রেনে করে পিলারের উপর স্থাপন করতে উচ্চক্ষমতার ভাসমান ক্রেন বঙ্গপোসাগরের পথে। ১২ অক্টোবর চীনের জোহাও থেকে মাদার ভেসেলে করে রওনা হওয়া চার হাজার টন ধারণক্ষমতার ভাসমান এ ক্রেন নবেম্বরের মাঝামাঝি কুতুবদিয়া চ্যানেলে পৌঁছার কথা রয়েছে। প্রতিটি স্প্যান (১৫০ মিটার দীর্ঘ সুপার স্ট্রাকচার) সরাসরি পিলারে বসাতে হবে। একেকটি স্প্যানের ওজন প্রায় ২ হাজার ৯শ’ টন। আর চীন থেকে আসা ভাসমান ক্রেনের ধারণক্ষমতা চার হাজার টন। বর্ষা মৌসুমে বন্ধ থাকার পর মাওয়া প্রান্তে আবার নদী শাসনের কাজ শীঘ্রই শুরু হচ্ছে। এখন ড্রেজিং চলছে। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ড্রেজার দিয়ে ড্রেজিং চলছে। ড্রেজিং শেষ হলে ফেলা হবে বস্তা। সেজন্য তৈরি করা হয়েছে বস্তা। পাঁচ লেয়ারে ৮শ’ কেজির (২৫ মণ) বস্তা ফেলা হবে সেখানে। এদিকে পদ্মা সেতুর নদী শাসনের কাজ হওয়ার পর ভাঙ্গনকবলিত এ এলাকায় নদীভাঙ্গন বন্ধ হবে এমন আশা অনেকের। তবে শঙ্কাও রয়েছে কারও কারও। অনেকে মনে করছেন, নদী শাসন পদ্মা সেতেুকে ভাঙ্গনের হাত হতে রক্ষা করলেও এ অঞ্চলের একটি অংশের মানুষ ঝুঁকির মধ্যেই থেকে যাচ্ছে। তাই তাদের দাবি, পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের দুদিকে কম করে হলেও ১০ কিলোমিটার এলাকাকে নদী শাসনের আওতায় আনা হোক। এদিকে কুমারভোগ ইউনিয়নের খড়িয়া গ্রামে আবার নতুন করে পদ্মার ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিনে পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে কয়েকটি ঘরবাড়িসহ গুরুত্বপূর্ণ নানা স্থাপনা। এ গ্রামের গোপাল মাস্টার জানান, পদ্মা নদী থেকে তার বাড়ির দূরত্ব মাত্র আধা কিলোমিটার। গত বছর এ গ্রামে ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দেয়। এখন আবার ভাঙছে। পদ্মা সেতুুর নদী শাসন এলাকা থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে হবে এ গ্রাম। শিমুলিয়া ফেরিঘাট স্থাপনের ফলে ঘাটের মুখের শাখা নদী দিয়ে বর্ষায় দ্রুত পানি প্রবেশ করায় এ অঞ্চলে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়। তার দাবি, কয়েক কিলোমিটার নদী শাসনের কাজ যোগ করলে এ অঞ্চলের মানুষজন নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পেত। নিশ্চিন্ত হতো তাদের বাড়িঘর হারোনোর ভয় থেকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মাওয়া প্রান্তে ১ দশমিক ৮ কিলোমিটার এলাকায় পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ নদী শাসনের কাজ করছে। এর বাইরে পদ্মা সেতুর উজানে জশলদিয়া এলাকায় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে আরও তিন কিলোমিটার নদী শাসনের কাজ হাতে নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর দুদিকে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা নদী শাসনের আওতায় আনায় এলাকাবাসী এখনও তাদের নিরাপদ মনে করছেন না। তারা মনে করছেন, নদী শাসনের কাজ সেতুর দুদিকে কম করে হলেও ১০ কিলোমিটার করা হলে বার বার পদ্মার গ্রাসে বিধ্বস্ত এ অঞ্চলের মানুষকে পদ্মার ভাঙ্গনের ভয় পেতে হতো না। পদ্মার ওপারে জাজিরা পয়েন্টে প্রায় ১৩ কিলোমিটার নদী শাসন করা হচ্ছে। অথচ এ পারে মাত্র দুই কিলোমিটার। তাই এ পারের মানুষগুলো দাবি তুলেছে, মাওয়া প্রান্তে নদী শাসনের এলাকা দুদিকে বাড়িয়ে দিয়ে পদ্মা সেতুর সঙ্গে এ অঞ্চলের মানুষকে নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করা হোক। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ড্রেজিং করে নদীটির তলদেশটি ফ্লপ করা হবে। মাওয়া প্রান্তে প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদী শাসন হবে। তবে এলাকাবাসীর দাবি, এদিকে মাওয়া প্রান্তে বিপুলসংখ্যক ব্লক তৈরি করে রাখা হলেও এখনই ব্যবহার হচ্ছে না। নদীর তলদেশের নদী শাসনের কাজ করার পরই এগুলো ব্যববহার হবে। আর ব্লক রাখার জায়গা না থাকায় আপাতত নতুন ব্লকও তৈরি করা হচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রায় ১ কোটি ২২ লাখ ব্লক প্রয়োজন হবে এখানে। ইতোমধ্যেই ৩২ লাখ ব্লক তৈরি করে রাখা হয়েছে। ব্লক রাখার জায়গা না থাকা এবং ব্লকগুলো এখনই ব্যবহার করতে না পারায় ব্লক তৈরির মেশিনগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। নদীর সেøাপে তিন লেয়ারে ১২৫ কেজির বস্তা ফেলা হবে। বস্তার উপর ব্লক ও পাথর ফেলা হবে। এগুলো সেটেল হওয়ার পরই বিপুল পরিমাণ ব্লক ব্যবহার করা সম্ভব হবে। ভায়াডাক্টের কাজের পাশাপাশি চলছে পদ্মায় মূল পাইল স্থাপনের কাজ। কারও যেন ফুরসত নেই। নতুন হ্যামার এবং নতুন হ্যামারে ক্রেন ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে প্রথম সুপার স্ট্রাকচার (স্প্যান) স্থাপন করা হবে। আর প্রথম স্প্যানটি ফিটিং প্রায় চূড়ান্ত। দ্বিতীয় স্প্যানটির ফিটিংয়ের কাজ চলছে। দ্বিতীয় স্প্যানটি স্থাপন হবে মাওয়া প্রান্তে ৬ ও ৭ নম্বর পিলারে। এ দুটি পিলারেই ৩টি করে পাইল স্থাপন হয়েছে গত বর্ষার আগেই। তীব্র স্রোতের কারণে মাওয়া প্রান্ত থেকে পাইল স্থাপনকাজ সরিয়ে নেয়া হয়েছিল জাজিরা প্রান্তে। মাওয়া প্রান্তে এখন স্রোত কম তাই অল্প দিনের মধ্যেই আবার এখানে ব্যাপকভাবে শুরু কাজ হবে।
×