ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে আরও এক যুবক আটক ॥ নিরাপত্তা জোরদার

শাহজালালে আনসার সোহাগ হত্যার কারণ এখনও অনুদ্ঘাটিত

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১২ নভেম্বর ২০১৬

শাহজালালে আনসার সোহাগ হত্যার কারণ এখনও অনুদ্ঘাটিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হামলা চালিয়ে আনসার সদস্য সোহাগ আলী হত্যার কারণ এখনও উদ্ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ এখন হামলাকারীকে মানসিক বিকারগ্রস্ত ও নেশাগ্রস্ত বলে দাবি করছে। হামলকারী যুবক শিহাবকে হাসপাতালে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও সে ওই দিন এয়ারপোর্টে আসার সন্তোষজনক জবাব দিতে পারছে না। বরং আরও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছে। নিজের পরিচয়ও সঠিকভাবে দিতে পারছে না। তার কথাবার্তার ধরন অনেকটাই মাদকাসক্তের মতো। বিমানবন্দর থানায় দায়েরকৃত এ মামলার তদন্তভার ন্যস্ত করা হয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে। কাউন্টার টেররিজম ইউনিট মামলার তদন্ত কাজ শুরু করেছে। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে বিমানবন্দর এলাকায় অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের দায়ে আরও এক যুবককে আটক করা হয়েছে। ওই হামলার পর বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। নিরাপত্তাকর্মীদের পুনর্বিন্যাস ও কৌশলগত পরিবর্তনের পাশাপাশি অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদি সরবরাহ করা হয়েছে। এখন থেকে বিমানবন্দরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে দায়িত্বরত সব আনসারকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিহিত থাকতে হবে। বাড়ানো হয়েছে জনবলও। কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সূত্রে জানা যায়, চাঞ্চল্যকর এ হামলার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত কিনা পুলিশ এখনও নিশ্চিত নয়। শিহাব একা এতবড় ঝুঁকি কেন নেবে? সে প্রশ্নের জবাব মিলছে না। দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের পরও শিহাব দাবি করছে সে একাই এসেছিল। তার বাড়ির ঠিকানা নিয়েও বিভ্রান্ত রয়েছে। দুই-এক দিনের মধ্যে তাকে আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড চাওয়া হবে। শুক্রবার সকালে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিমানবন্দরের প্রবেশ পথেই প্রতিটি যাত্রী ও দর্শককে তল্লাশি করা হচ্ছে। বিমানবন্দরের প্রতিটি গেটে দায়িত্বপালনকারী আনসার ও এপিবিএন সদস্যদের বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরা অবস্থায় দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। তাদের হাতে রয়েছে ট্রেজারগান। ট্রেজারগান সম্পর্কে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের অধিনায়ক রাশেদুল ইসলাম রিপন জনকণ্ঠকে বলেন, জোরপূর্বক যদি কেউ ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে, যদি সে কোন বাধা না মানে, তাহলে তার শরীরে ট্রেজারগান লাগানোর সঙ্গে সঙ্গেই সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাবে। কিছুক্ষণ পর তার জ্ঞান ফিরবে। অজ্ঞাত দুর্বৃত্তকে ঘায়েল করার মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবেই কাজ করে এই ট্রেজারগান। ট্রেজারগান ছাড়াও রয়েছে শর্টগান। এছাড়া বিমানবন্দরের প্রবেশমুখ গোলচক্করে বসানো হচ্ছে আর্চওয়ে, যাতে সবাইকে স্ক্যানিং করা যায়। প্রতিটি পয়েন্টে জনবল দ্বিগুণ করা হয়েছে। এ সম্পর্কে আনসার ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক কাঞ্চন কুমার ব্যানার্জী বলেন, সোহাগ আলী নিহত হওয়ার পর বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় আনসারদের আরও বেগবান করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ডিউটির সময় প্রতিটি আনসারকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সিভিল এভিয়েশনের কাছে আরও কিছু সরঞ্জামাদি ও সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, গত রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় শিহাব জোরপূর্বক বিমানবন্দরের কারপার্কিং সংলগ্ন এলাকা দিয়ে ভেতরে ঢুকতে বাধা দেয় এপিবিএন সদস্যরা। এ সময় শিহাব ছুরিকাঘাত করে দৌড়ে ওপরে সিঁড়ির কাছে চলে যায়। ওখানে কর্তব্যরত আনসার সদস্য সোহাগ আলী তাকে বাধা দিলে তাকেও বুকে ও পিঠে ছুরিকাঘাত করলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু ঘটে। এরপর ক্রাইসিস রেসপন্স টিম সদস্যরা গুলি করে তাকে আটক করে। এ ঘটনায় আরও দুজন নিরাপত্তাকর্মী আহত হয়ে এখন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে আর্মড ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। কমিটিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এপিবিএনের অতিরিক্ত ডিআইজি হাসিব আজিজ তদন্ত কমিটির প্রধান হিসেবে কাজ করছেন।
×