ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জলবায়ু সম্মেলনের অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় বাংলাদেশের জোরালো দাবি

উন্নত দেশগুলোকে কার্বন নিঃসরণ কমাতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১২ নভেম্বর ২০১৬

উন্নত দেশগুলোকে কার্বন নিঃসরণ কমাতে হবে

কাওসার রহমান, মারাকাশ, মরক্কো থেকে ॥ জলবায়ু পরিবর্তন বেড়ে গেলে নিজস্ব অর্থে তা মোকাবেলা করা বাংলাদেশের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি কমাতে বাংলাদেশ উন্নত দেশগুলোর প্রতি কার্বন নির্গমন কমানোর জোরালো দাবি জানিয়েছে। মরক্কোর পর্যটন নগরী মারাকাশে শুরু হওয়া জলবায়ু সম্মেলনের অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর ক্ষতিপূরণে প্যারিসে হারিয়ে যাওয়া ক্ষয় ও ক্ষতির ইস্যুটি আবারও জলবায়ুর দরকষাকষির মূল এজেন্ডায় নিয়ে আসতে চাইছে। পাশাপাশি সবুজ জলবায়ু তহবিল তথা গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ড থেকে অর্থায়ন প্রক্রিয়া সহজ করার ওপর জোর দিচ্ছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সবুজ জলবায়ু তহবিল বোর্ডের সদস্য। গত ৭ নবেম্বর থেকে মারাকাশে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন শুরু হয়েছে। গত চার দিনের আলোচনায় প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়নের রূপরেখা চূড়ান্তকরণ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অর্থায়ন, কারিগরি সহযোগিতার মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর দক্ষতা বৃদ্ধি প্রভৃতি বিষয় নিয়ে বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে। তবে এসব আলোচনা তেমন গতি পাচ্ছে না। এরমধ্যে মার্কিন নির্বাচনও জলবায়ু আলোচনায় প্রভাব ফেলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে কে বিজয়ী হয়, ট্রাম্প বিজয়ী হলে জলবায়ু পরিবর্তনে তার সরকারের ভূমিকা কি হবে এসব বিষয় আলোচনাকে প্রভাবিত করেছে। শেষ পর্যন্ত মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ায় জলবায়ু আলোচনার নীতিনির্ধারকরা অপেক্ষায় আছেন মার্কিন ভূমিকা জানার জন্য। চলমান জলবায়ু আলোচনায় সব ইস্যুতে বাংলাদেশ অংশ নিলেও দেশটি তার নিজস্ব ইস্যুগুলোর ওপর জোর দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের প্রধান পরিবেশ সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি জানান, বাংলাদেশ প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়নের রূপরেখা তথা নিয়মকানুন দ্রুততর করার তাগিদ দিচ্ছে। যাতে ওই বিধিমালায় সবগুলো ইস্যু সঠিকভাবে স্থান পায়। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয় ও ক্ষতির (লস এ্যান্ড ড্যামেজ) ইস্যুটি পুনরায় জলবায়ু আলোচনার মূল এজেন্ডায় নিয়ে আসার জন্য কাজ করছে। বাংলাদেশ চাইছে ওয়ারশ ইন্টারন্যাশনাল মেকানিজম অনুসারে লস এ্যান্ড ড্যামেজ ইস্যুর অর্থায়নের কৌশল নির্ধারণ করা হোক এবং এই মেকানিজমের আওতায় অর্থায়নের বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তুচ্যুতি নিয়ে এক সাইড ইভেন্টে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তার উদ্বেগের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ছে। ফলে ঘন ঘন দুর্যোগে পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে খারাপ হচ্ছে। তাই প্যারিস জলবায়ু চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়ন করে তাপমাত্রা কমানোর ব্যবস্থা না করলে দুর্যোগের সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে। এতে বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো আরও ক্ষতির মুখে পড়বে। নিজস্ব তহবিল দিয়ে ওই ক্ষতি মোকাবেলা করা সম্ভব হবে না। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে অর্থনৈতিকভাবে অনেকদূর এগিয়েছে। ইতোমধ্যে দেশটি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু দুর্যোগের মাত্রা বেড়ে গেলে বাংলাদেশের এ অর্জন ধরে রাখা সম্ভব হবে না। উপকূলীয় অঞ্চলের পরিস্থিতি তুলে ধরে বলা হয়, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ৩৯ লাখ মানুষ বসবাস করে। যা বিশ্বের ৮০টি দেশের মোট জনসংখ্যার চেয়েও কম। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের একশ কিলোমিটার পর্যন্ত লবণাক্ততা প্রবেশ করেছে। দেশটির উর্বর জমিতে বালুর স্তর পড়ছে। ফলে কৃষি কাজ ব্যাহত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন। জলবায়ু পরিবর্তন ঘটতে থাকলে এই প্রাকৃতিক অভয়ারণ্যকে টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। তখন নিজস্ব অর্থে উপকূলীয় চার কোটি বিপন্ন জনগোষ্ঠী ও সুন্দরবন রক্ষা কঠিন হয়ে পড়বে। তখন বাংলাদেশকে বিদেশী সহায়তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে হবে। তাই এই পরিস্থিতি এড়াতে উন্নত দেশগুলোর উচিত কার্বন নির্গমন কমিয়ে বৈশ্বিক উষ্ণতা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা।
×