ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মিরপুর এলাকায় ভূগর্ভস্থ তার সরানো শুরু, যানজট

আগামী বছরের জুনে শুরু হচ্ছে মেট্রো রেলের কাজ

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১২ নভেম্বর ২০১৬

আগামী বছরের জুনে শুরু হচ্ছে মেট্রো রেলের কাজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর যানজট নিরসনে সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের একটি মেট্রোরেল। যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে। সে আদলে রাজধানীতে এই রেল যোগাযোগ স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পৃথিবীর জনবহুল বিভিন্ন শহরে মেট্রোরেল যোগাযোগের মধ্য দিয়ে জনসংখ্যার চাপ কমানো হয়েছে। এমন চিন্তা ঢাকার ক্ষেত্রেও। তবে রাজধানীতে এখনও মেট্রোরেলের মূল কাজ শুরু হয়নি। চলছে প্রস্তুতি পর্ব। এর মধ্যেই মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব প্রস্তুতি শেষে পুরোদমে কাজ শুরু হলে জনদুর্ভোগ চরমে ওঠবে। তাই দুর্ভোগ কমাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি সবার। পাশাপাশি জনদুর্ভোগ কমাতে প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে শেষ করারও দাবি সংশ্লিষ্টদের। মেট্র্রোরেলের মূল কাজ শুরুর আগে বৈদ্যুতিক তার সরাতে মাঝখানে রাস্তা খোঁড়ায় যানজটের ভোগান্তিতে পড়েছেন মিরপুরের বাসিন্দারা। সড়ক ছোট হয়ে আসায় দুর্বিসহ হয়ে উঠছে প্রতিদিনের যাতায়াত। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকার অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হলে এই সড়কের পরিস্থিতি কী হবে, তা ভেবে আঁতকে উঠছেন ভুক্তভোগীরা। জনদুর্ভোগ কমাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রাতে কাজ করার কথা জানালেও দুর্ভোগ না কমায় এলাকা ছাড়ার কথাও ভাবছেন কেউ কেউ। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৭ সালের জুন মাস থেকে ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্পের মূল কাজ শুরুর কথা। তার আগে এ বছরের নবেম্বর থেকে শুরু হয়েছে প্রকল্প এলাকায় থাকা বিভিন্ন সেবাসংস্থার অবকাঠামো সরানোর কাজ। ভূগর্ভস্থ বৈদ্যুতিক সঞ্চালন তার প্রতিস্থাপনের জন্য এরই মধ্যে বেগম রোকেয়া সরণির তালতলা থেকে মিরপুর ১০ নম্বর পর্যন্ত সড়কের একপাশ খুঁড়ে ফেলা হয়েছে। তিন লেনের সড়কের মাঝের একটি লেন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ব্যারিকেড দিয়ে। দুই পাশের লেন দিয়ে বিপুলসংখ্যক গাড়িকে ধীরে ধীরে চলার কারণে প্রতিদিন সকাল-বিকেল তৈরি হচ্ছে যানজট। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে অফিসগামী যাত্রীসহ সাধারণ মানুষের। এই রাস্তায় এত গাড়ি চলাচল করে; এখন একটা একটা করে গাড়ি যাওয়ায় যানজট হচ্ছে, বলেন তালতলার বাসিন্দা কামরান করিম। একই কথা বললেন, মোঃ আরিফও। প্রতিদিন এ ভোগান্তি পেরিয়ে তাকে মতিঝিলে অফিস করতে হয়। এ নিয়ে বিড়ম্বনার শেষ নেই। বুধবারও যানজটের কারণে কাজ বাদ দিয়ে বাসায় ফিরে গেছেন তালতলার আরেক বাসিন্দা জান্নাতুল ফেরদৌস। হাইকোর্টে যাওয়ার জন্য অটোরিকশায় উঠেছিলাম। কিন্তু প্রায় আধাঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে শেষে বাসায় ফিরে গেছি। আতিকুর রহমান জানালেন, মৌচাকে অফিস তার। সড়কে মেট্রোরেলের কাজ হওয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে আগের চেয়ে বেশি। তাই বাসা পরিবর্তনের চিন্তা করছেন তিনি। শুক্রবার ছুটির দিনেও ছিল যানজট। স্থানীয় বাসিন্দা কবির জানালেন, শুক্রবার ভ্রমণ পিপাসু মানুষের ভিড় বাড়ে। বিকেলে সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। মেট্রোরেলের কাজ পুরোদমে শুরু হলে এ পথের ভোগান্তি আরও বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন আবদুল্লাহপুর-মোহাম্মদপুর রুটের তেঁতুলিয়া পরিবহনের যাত্রী আবদুস সালাম। একই অভিযোগ করলেন অন্য পরিবহনের লোকজনও। ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্পের পরিচালক মোঃ মোফাজ্জেল হোসেন জানালেন, জনগণের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে রাস্তার নিচের তার সরানোর কাজ তারা রাতে সারছেন। আগারগাঁও থেকে মিরপুর ১০ নম্বর পর্যন্ত এমআরটির লাইন-৬ এর এ্যালাইনমেন্ট বরাবর থাকা ১৩২ কেভি ভূগর্ভস্থ কেবল সরানোর কাজ চলছে এখন। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ কাজটি করছে। বিদ্যুতের তার সরিয়ে রাস্তার এক পাশে না নিয়ে গেলে মেট্রোরেলের পাইলিং করা যাবে না বলে জানান তিনি। ভূগর্ভস্থ কেবল স্থানান্তর প্রকল্পের পরিচালক মোঃ শফিকুর রহমান বলেন, বিদ্যুতের তার সরানোর জন্যই তাদের রাস্তা খুঁড়তে হচ্ছে। ১ নবেম্বর উদ্বোধনের পর ৫ তারিখে খনন শুরু হয়েছে। সঞ্চালন লাইন সড়কের মাঝখান থেকে সড়কের বাঁপাশে নিয়ে আসা হবে। এখন নতুন সড়ক খুঁড়ে নতুন লাইন বসিয়ে পরে পুরনো লাইন তুলে ফেলা হবে। রাস্তা খুঁড়লে জনগণের যাতায়াতে সমস্যা হবে, এটা বিবেচনায় নিয়েই পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে বলে দাবি করেন শফিক। আমরা রাতে কাজ করছি। রাত সাড়ে ১০টার দিকে কাজ শুরু হয়ে সকাল ৭টা পর্যন্ত চলে। যানবাহন আর লোকজন রাস্তায় বের হওয়ার আগেই দিনের কাজ শেষ করা হয়। ভোগান্তি কমাতে যে অংশে কাজ হচ্ছে, শুধু সেখানেই ব্যারিকেড দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
×