ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশ-বিক্ষোভকারী ধস্তাধস্তি বিক্ষোভ চলবে চার বছর

যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পবিরোধী সহিংস বিক্ষোভ অব্যাহত

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১২ নভেম্বর ২০১৬

যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পবিরোধী সহিংস বিক্ষোভ অব্যাহত

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ দ্বিতীয় দিনে গড়িয়েছে। বৃহস্পতিবারও দেশটির বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে এই বিক্ষোভ হয়েছে। এসব বিক্ষোভে হাজার হাজার মানুষ অংশ নেয়। তবে এই ধরনের বিক্ষোভকে অনুচিত বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। এই বিক্ষোভের জন্য গণমাধ্যমকেও দূষেছেন এই ৪৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বৃহস্পতিবার এক টুইটার বার্তায় ট্রাম্প এসব বিক্ষোভকারীকে পেশাদার বলে আখ্যা দেন। আর রিপাবলিকান নেতা রুডি গুলিয়ানি এসব বিক্ষোভকারীকে ছিঁচকে চোর বলে আখ্যা দিয়েছেন। এসব বিক্ষোভ থেকে অন্তত ২৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ। বিক্ষোভে অনেক তরুণের হাতে লাঠি ও পাথর ছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, বুধ ও বৃহস্পতিবারের এসব বিক্ষোভে যেসব লোকে অংশ নিয়েছে তার অধিকাংশই বয়সে তরুণ। বৃহস্পতিবার রাতে ফিলাডেলফিয়া, নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ হয়। অরেগন অঙ্গরাজ্যের পোর্টল্যান্ডে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ সহিংস রূপ নেয়। এই শহরে হাজারো মানুষ সড়কে নেমে বিক্ষোভ করে। বিক্ষোভ চলাকালে দোকানপাট ও গাড়ির কাচ ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এই বিক্ষোভকে দাঙ্গা বলে ঘোষণা দেয় পুলিশ। এই বিক্ষোভের সময় বিক্ষোভকারীরা আতশবাজি জাতীয় দ্রব্য ছুড়ে মারে। এ সময় পাশের একটি ডাস্টবিনে আগুন দেয় বিক্ষোভকারীরা। এ সময় পুলিশও বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে মরিচের গুঁড়ো ও টিয়ারগ্যাস ছোড়ে। ক্যালিফোর্নিয়ায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ধস্তাধস্তি হয়েছে। খবর এএফপি, বিবিসি ও সিএনএন অনলাইনের। খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, ট্রাম্পের এই অপ্রত্যাশিত বিজয় মার্কিন নাগরিকদের একাংশকে গভীরভাবে হতাশ করেছে। সেই হতাশা এখন প্রতিবাদে রূপ নিয়েছে। একই দিন হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে দেখা করেন ট্রাম্প। ওবামার সঙ্গে ৯০ মিনিট কথা বলেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে স্ত্রী মেলানিয়াও উপস্থিত ছিলেন। এদিকে নির্বাচনে জয়ের পর ট্রাম্পকে বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো অভিনন্দন জানিয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউসের সামনে মোমবাতি হাতে নিয়ে নীরব প্রতিবাদ জানায় কয়েক শ’ মানুষ। সপ্তাহান্তে আরও বড় ধরনের মিছিলের আয়োজন চলছে। বাল্টিমোরে প্রায় ৩শ’ মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। তারা ‘আপনি আমাদের প্রেসিডেন্ট নন!’ বলে সেøাগান দেয়। তাদের হাতে ছিল বিভিন্ন প্লাকার্ড। একটিতে লেখা ছিল, ‘আমরা ঘৃণ্য’ ব্যক্তিকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করিনি। শিকাগো, ডেনভার, ডালাসসহ বিভিন্ন স্থানেও বিক্ষোভ হয়েছে। জনৈক শিক্ষার্থী কাইলা পিলো (২১) বাল্টিমোর সান সংবাদপত্রকে বলেন, আমরা এখন কেবল তাই প্রদর্শন করছি যা আগামী চার বছর ঘটতে যাচ্ছে। চার বছর ধরে প্রতিরোধ চলবে। তিনি বলেন, ফেসবুকে ট্রাম্পবিরোধী প্রচার চালাচ্ছি। তার উদ্দেশ হাজার হাজার মানুষকে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভে উৎসাহিত করা। এর আগে বৃহস্পতিবার দিনের বেলা সান ফ্রান্সিস্কো, লস এ্যাঞ্জেলেস ও অন্যান্য নগরীতেও বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভকারীদের বেশিরভাগ ছিলেন শিক্ষার্থী। তারা স্কুল-কলেজ বাদ দিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেন। সান ফ্রান্সিস্কোতে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে সিটি হলের দিকে যায়। তাদের বেশিরভাগই ছিল হাইস্কুলের শিক্ষার্থী। তারা সেøাগান দেয়, ‘আপনি আমাদের প্রেসিডেন্ট নন। এ সময় তারা রাস্তাও অবরোধ করে। তাদের হাতে প্লাকার্ডও ছিল। কয়েকটিতে লেখা ছিল, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ট্রান্স এবং সবার জন্য নিরাপদ আমেরিকা গড়ে তোল। পামেলা ক্যাম্পোস (১৮) সান ফ্রান্সিস্কো ক্রনিকলকে বলেন, আমরা বিক্ষোভ করছি কারণ আমরা সবার অধিকারের জন্য দাঁড়াতে চাই। তার মতে, ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন বর্ণবাদী। তিনি সব অভিবাসী ও মুসলিমদের আক্রমণ করেছেন। আমি বুধবার আমার সব সহপাঠীকে কাঁদতে দেখেছি। উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার বিভিন্ন নগরীতেও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছে। লস এ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও কয়েক শ’ শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করেছে। তারা বিভিন্ন প্লাকার্ড বহন করেছে। এতে লেখা ছিল, ‘ট্রাম্পকে ছুড়ে ফেলো’ ও ‘ট্রাম্প ঘৃণাকারীদের ভালবাসি।’ ডেইজি রিভেরা (২৪) ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, বুধবার যখন আমি হিলারির বক্তব্য শুনছিলাম, আমি তখন কান্না থামাতে পারিনি। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে পারছি না, আমরা ট্রাম্পের মতো বর্ণবাদী, অভিবাসী ও নারীবিদ্বেষীকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করেছি। নিউইয়র্কে ম্যানহাটনের ওয়াশিংটন স্কয়ার পার্কে প্রায় ২শ’ ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভকারী জড়ো হন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিভিন্ন নগরীতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ ছিল। লস এ্যাঞ্জেলেসের মেয়র এরিক গারসেটি বিক্ষোভকারীদের প্রশংসা করেন। তবে তিনি রাস্তায় যান চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি না করতে এবং সম্পদের ক্ষতি না করতে বিক্ষোভকারীদের আহ্বান জানান।
×