ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের চা

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ১২ নভেম্বর ২০১৬

বাংলাদেশের চা

১৮৪০ সালে বাংলাদেশে প্রথম চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া কাস্টম কালেক্টর মি. স্কোনসের উদ্যোগে গড়ে ওঠে ‘পাইওনিয়ার টি গার্ডেন’ নামে চা উৎপাদক প্রতিষ্ঠান। চীন ও অসম বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে তিনি চা গাছের চারা সংগ্রহ করে এনেছিলেন। কিন্তু তার সে প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। এরপর খ্যাতনামা ব্রিটিশ চা শিল্প উদ্যোক্তা মি. জে হেগ চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া-কোদালিয়ায় চা উৎপাদন শুরু করেন। ১৮৪৩ সালে সেখান থেকে চা বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করা হয়। এরপর ১৮৫৭ সালে সিলেটের অদূরে মালিনীছড়ায় বাণিজ্যিকভাবে চা উৎপাদন শুরু হয়। সিলেট অঞ্চলের পাহাড়ী জমিতে চা আবাদের পর ক্রমশ চা বাগানের বিস্তার ঘটতে থাকে এবং দেশের মানুষ ধীরে ধীরে চা পানে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। বর্তমানে বাংলাদেশের ৭টি জেলায় ১৬৪টি চা বাগান উৎপাদনে রয়েছে। মোট ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৫৭ হেক্টর জমিতে এই বাগানগুলো চা আবাদ করছে। যেসব জেলায় চা বাগান রয়েছে তা হচ্ছে মৌলভীবাজারে ৯৩টি, সিলেটে ২০টি, হবিগঞ্জে ২৩টি, চট্টগ্রামে ২১টি, রাঙ্গামাটিতে ১টি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১টি এবং পঞ্চগড়ে ৮টি। দেশে নতুন নতুন এলাকায় চায়ের চাষ শুরু হয়েছে। চা বোর্ডের সমীক্ষা অনুযায়ী পঞ্চগড় জেলায় চা চাষের উপযোগী অন্তত ৪০ হাজার একর জমি রয়েছে। পঞ্চগড়ের চা বিশ্বখ্যাত দার্জিলিং ভ্যারাইটি মানের। বৃহত্তর ময়মনসিংহের জেলার পাহাড়ী অঞ্চলে চা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতি, গজনী; ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট এবং নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুরে চা চাষ করে প্রচুর উৎপাদন বাড়িয়ে সেই বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব। দেশের চা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে দেড় লক্ষাধিক মানুষ। বাংলাদেশের জলবায়ু, আবহাওয়া এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ চা চাষের অনুকূল হওয়ায় আরও সুপরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে চা উৎপাদন ও রফতানিতে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। চা বাগান বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকেও বিকশিত করেছে অনেকাংশে। কেননা, প্রতিবছর দেশী-বিদেশী পর্যটকরা সিলেটসহ পাহাড়ী অঞ্চলে এবং চা চাষযোগ্য এলাকাতে ভ্রমণ করতে আসেন, যা দেশীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখাসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব চিত্র বহির্বিশ্বে তুলে ধরছে। নিক বুলোস নামের একজন পর্যটক চা বাগানের পরিবেশ নিয়ে একবার লিখেছিলেনÑ ‘বাইসাইকেল ভাড়া করে চা বাগানের ভেতরে ঘুরে বেড়ালাম। সবকিছু শান্ত, নীরব। বাংলাদেশের মতো কোলাহলপূর্ণ ও ঘনবসতির দেশে এমন নীরবতা সত্যিই প্রশান্তির।’ ২০১৫ সালে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬৪ মিলিয়ন কেজি। এর বিপরীতে চা উৎপাদন হয় ৬৭ দশমিক ৩৭ মিলিয়ন কেজি। আর ২০১৬ সালে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৬৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন কেজি। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ৬০ দশমিক ৬৭ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। এ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে মাত্র ৩ দশমিক ৮৩ মিলিয়ন কেজি কম। এখনও বছরের আরও প্রায় তিন মাস বাকি রয়েছে। সম্প্রতি শ্রীমঙ্গলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে চা শিল্পের ১৬২ বছরের ইতিহাসে এবার সর্বোচ্চ চা উৎপাদন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন চা বোর্ডের চেয়ারম্যান। এ বছর দেশে ৭০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হবে আশা করা হচ্ছে। চায়ের উৎপাদন বাড়ছে, এটি আনন্দের। তবে চা উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের জীবনমানের উন্নয়নের বিষয়টিও সবার স্মরণে রাখা দরকার।
×