ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

থামাও সহিংসতা

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ১২ নভেম্বর ২০১৬

থামাও সহিংসতা

সহিংসতা এক ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে। প্রতিদিনই যেন তা সংক্রমিত হচ্ছে। ক্ষয়িষ্ণু এই সামাজিক অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে বের করতেই হবে। বলা যায় আমাদের সামাজিক মূল্যবোধগুলো এক এক করে ক্ষয়ে যাচ্ছে। এতে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে সামাজিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তার বিষয়টি। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার কথা। দেশে শিক্ষার প্রসার ঘটেছে। অথচ সমাজ যেন প্রতিদিন পেছনের দিকে যাচ্ছে, অন্ধকারের দিকে যাচ্ছে। এই অন্ধকার থেকে উত্তরণ ঘটাতে সামাজিক মূল্যবোধগুলো আবার নতুন করে প্রতিষ্ঠা করা জরুরী। এর জন্য দরকার আইনের শাসন নিশ্চিত করা। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না। উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, গত কয়েকদিনে সহিংসতার মাত্রা আগের তুলনায় বেড়েছে, বেড়েছে শিশু ধর্ষণসহ খুনখারাবিও। দাউদকান্দিতে প্রকাশ্য দিবালোকে সড়কে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে ও কুপিয়ে চেয়ারম্যান হত্যা, রাজধানীতে বাসায় ঢুকে নারীকে গলা কেটে হত্যা, কুমিল্লার বুড়িচংয়ে দুই যুবককে তিনদিন আটকে রেখে বৈদ্যুতিক শক ও চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা, টেন্ডার না পেয়ে মুক্তিযোদ্ধাকে মারধর, দিনাজপুরে, সিরাজগঞ্জে, সাভারে শিশু ধর্ষণের ঘটনা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে আবারও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এসব অপরাধের লাগাম যেন টেনে ধরা যাচ্ছে না। বন্ধ হচ্ছে না এসব নৃশংসতা, অমানবিকতা। ধারাবাহিকভাবে এসব ঘটনা পর্যবেক্ষণে মনে হয় সামাজিক অপরাধের হোতারা সংঘবদ্ধ হচ্ছে। কুমিল্লার তিতাস উপজেলার জিয়ারকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একটি মামলার হাজিরা দিতে যাচ্ছিলেন। মহাসড়কে ওঠার পথে ট্রাফিক সিগন্যালের কারণে বহনকারী মাইক্রোবাসটি থামা মাত্র পেছনে থাকা মাইক্রোবাস থেকে একদল মুখোশধারী গাড়িটি ঘিরে ফেলে এবং দুই পাশ থেকে গুলি করে। তার সঙ্গীরাও গুলি ও চাপাতির আক্রমণের শিকার হন। ঘটনা ঘটিয়ে সন্ত্রাসীরা নির্বিঘেœ চলে যায়। কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার মোকাম গ্রামে দুই যুবককে তিনদিন আটকে রেখে বৈদ্যুতিক শক ও চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মাদকের টাকা কিংবা বিদেশ থেকে প্রেরিত টাকার লেনদেন নিয়ে এই হত্যার ঘটনা ঘটে। রাজধানীর মধুবাগে নিজের বাসায় খুন হয়েছেন এক নারী। অর্থ লেনদেন নিয়ে নিকটজনের দ্বন্দ্বে এই খুনের ঘটনা ঘটে বলে পত্রিকায় খবর এসেছে। রাজধানীর হাতিরপুলে মোতালিব প্লাজার সামনে দুই ছাত্রকে কুপিয়ে আহত করা হয়। দুজনই ধানম-ি উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। সোমবার ওই দুজনের বাসার পাশের বাসায় দাওয়াত খেতে গিয়ে আহত দুজনের কথা-কাটাকাটি হয়। এই সূত্র ধরেই হামলার ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে ঝিনাইদহের শৈলকুপায় মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর দেশব্যাপী তোলপাড় হয়েছে। সমাজে কিছু মানুষ পুলিশ-প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, কোন কিছুরই তোয়াক্কা করছে না। অপরাধ করলেও শাস্তি হবে না, এমন ধারণা থেকেই হয়ত এসব অপরাধ ঘটছে। অপরাধপ্রবণতা যে হারে বাড়ছে, সে হারে বিচার হচ্ছে কি? বিচার শুরু হলেও আইনী জটিলতা এবং দীর্ঘসূত্রতায় তা আটকে থাকে বছরের পর বছর। বিলম্ব বিচার ব্যবস্থা বিচারহীনতারই নামান্তর। এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে জড়িতদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। অপরাধীরা ছাড় পেলে তারা আরও বেশি অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠতে পারে যা প্রত্যাশিত নয়। দেশবাসী চায়, সুষ্ঠু তদন্ত ও শাস্তি প্রদানে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হোক। যাতে আর এসব ভয়াবহ, ঘৃণ্য ও সহিংস ঘটনা ঘটানোর সাহস কেউ না পায়।
×