ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চলে গেলেন বিখ্যাত গীতিকার, রকশিল্পী লিওনার্দ কোহেন

প্রকাশিত: ০৪:২১, ১২ নভেম্বর ২০১৬

চলে গেলেন বিখ্যাত গীতিকার,  রকশিল্পী লিওনার্দ কোহেন

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ বিশ্ববিখ্যাত শিল্পী বব ডিলানের পরই বিশ্ব সঙ্গীতে যাকে সবচেয়ে প্রতিভাবান রক শিল্পী হিসেবে গণ্য করা হয় তিনি কানাডীয় সঙ্গীতশিল্পী লিওনার্দ কোহেন। ১০ নবেম্বর তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। শিল্পীর ফেসবুক পেজে দেয়া এক বিবৃতির উদ্ধৃতি দিয়ে আন্তর্জাতিক এক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গভীর দুঃখের সঙ্গে আমরা জানাচ্ছি, কিংবদন্তি কবি, গীতিকার ও শিল্পী লিওনার্দ কোহেন মারা গেছেন। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সঙ্গীতের অন?্যতম সম্মানিত ও সামর্থ?্যবান একজন স্বপ্নদ্রষ্টাকে আমরা হারিয়েছি। কোহেনের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত আর কিছু বিবৃতিতে বলা হয়নি। তবে পরবর্তী কোন এক সময়ে লস এ?্যাঞ্জেলসে তার স্মরণানুষ্ঠান হবে বলে জানানো হয়েছে। মন্ট্রিলে জন্মগ্রহণকারী এই সঙ্গীতশিল্পী দীর্ঘদিন ধরেই লস এ?্যাঞ্জেলসে বসবাস করতেন। ‘সুজান’ এবং ‘আই এ?্যাম ইয়োর ম্যান’সহ তার অনেক জনপ্রিয় এ?্যালবাম রয়েছে। গত মাসে ‘ইউ ওয়ান্ট ইট ডার্কার’ নামে তার ১৪তম গানের এ?্যালবাম মুক্তি পেয়েছিল। ২০০৮ সালে তাকে ‘রক এ?্যান্ড রোল হল অব ফেম’-এ স্থান দেয়া হয়। ইহুদী পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও পরবর্তী সময়ে তিনি জেন বৌদ্ধ দর্শনে অনুরক্ত হয়ে পড়েন। ১৯৯৪-৯৯ সাল এই পাঁচবছর তিনি সঙ্গীত জগৎ থেকে বিরতি নেন। ওই সময়টুকু তিনি পূর্ব লস এ্যাঞ্জেলসের মাউন্ট বলদি জেন সেন্টারে কাটান। সঙ্গীতের ভুবনে পুনরায় ফিরে আসা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার জীবন চরম বিশৃঙ্খলায় বিপর্যস্ত ছিল। সেখানে আমি কিছুটা শৃঙ্খলা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। আর সে কারণেই আমি সঙ্গীতে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেই। ১৯৩৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর কুবেকের ওয়েস্টমাউন্টে জন্ম কোহেনের। কিশোর বয়সেই গিটার বাজানো শিখে তৈরি করেন লোকসঙ্গীতের দল ‘বাকস্কিন বয়েজ’। স্প্যানিশ লেখক ফ্রেদেরিকো গার্সিয়া লোরকার সংস্পর্শে এসে কবিতা ভালবেসে ফেলেন। ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক হওয়ার পর বাবার গ্রিক আইল্যান্ড হাইড্রায় থাকতে শুরু করেন লিওনার্দ। সেখানেই প্রকাশ করেন প্রথম কবিতার সংকলন ফ্লাওয়ারস ফর হিটলার (১৯৬৪) এবং দ্য ফেভারিট গেম (১৯৬৩) ও বিউটিফুল লুজারস (১৯৬৬) উপন্যাস দুটি। মন্ট্রিয়লের কাপড়ের কারখানায় কাজ আর বই বিক্রি না হওয়ায় হতাশায় ১৯৬৬ সালে নিউইয়র্ক পাড়ি দেন কোহেন। আলাপ হয় লোকসঙ্গীত গায়ক জুডি কলিনসের সঙ্গে। নিজের এ্যালবাম ‘ইন মাই লাইফ’-এ কোহেনের লেখা দুটো গান সংযোজন করেন কলিনস। এই দুটোর মধ্যেই ছিল কোহেনের প্রথম সাড়া জাগানো গান ‘সুজানে’। ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত হয় সংস অব লিওনার্দ কোহেন এ্যালবাম। বাড়তে থাকে জনপ্রিয়তা। একে একে আসে তার অন্যসব এ্যালবাম, কবিতার বই, উপন্যাস প্রভৃতি। ব্যক্তিগত জীবনে সুজানে এলরোডের সঙ্গে সম্পর্কে দুইবার বাবা হয়েছেন কোহেন। দুই সন্তান ফোটোগ্রাফার লোরকা কোহেন ও এ্যাডাম কোহেন তৈরি করেন লো মিলিয়নস গ্রুপ। ১৯৯৫ সাল থেকে ক্যারিয়ারে রাশ টানেন কোহেন। লস এ্যাঞ্জেলেসের মাউন্ট বালডি জেন সেন্টারে গিয়ে বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষা নেন কোহেন। নতুন নাম হয় জিকান। যার অর্থ নিস্তব্ধতা। এর মধ্যেই ২০০১ সালে মৌনতা ভেঙ্গে বেরিয়ে আসেন কোহেন। শ্যারন রবিনসনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বের করেন টেন নিউ সংস। ২০০৫ সালে শুরু হয় কোহেনের ক্যারিয়ারের শেষ অধ্যায়। দীর্ঘদিনের ম্যানেজার কেলি লিঞ্চের প্রতারণার শিকার হয়ে ৫০ লাখ ডলার ক্ষতি হয় তার। ক্ষতিপূরণ করতে শুরু করেন এপিক ট্যুর। ২০০৮-১৩ সাল পর্যন্ত ৩৮৭টি শো করেছেন তিনি। ২০১২ সালেবের করেন এ্যালবাম ‘ওল্ড আইডিয়াজ’। তার ৮০তম জন্মদিনের পরদিন প্রকাশিত হয় এ্যালবাম ‘পপুলার প্রবলেমস’। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে গ্র্যান্ড ট্যুও শেষ হওয়ার পর থেকে আর জনসমক্ষে দেখা যায়নি কোহেনকে। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে ছেলে এ্যাডামের প্রযোজনায় বের করেন ‘ইউ ওয়ান্ট ইট ডার্কার’। শারীরিক অসুস্থতার জন্য বাড়ির বাইরে বেরোতে পারতেন না কোহেন। ডাইনিং টেবিলে বসেই মাইক্রোফোনের সাহায্য ল্যাপটপে রেকর্ড করতেন তিনি। শেষ এ্যালবামেও বিস্ময়কর সাড়া পাওয়ার পর কোহেন বলেন, আমি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত। আশা করছি খুব একটা কষ্ট হবে না। তারপর ১০ নবেম্বর তিনি চিরবিদায় নিলেন। চলতি বছরের জুলাইয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন প্রিয় বন্ধু ও জীবনের শেষ দিনগুলোর সাথী ম্যারি এ্যান ইহলেন। এর ক’দিন আগেই তাকে চিঠিতে লিখেছিলেন, সেই সময় এসে গেছে যখন সত্যিই আমরা বেশ বৃদ্ধ এবং আমাদের শরীর আলাদাভাবে ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। আমার মনে হয়, খুব শীঘ্রই আমি তোমাকে অনুসরণ করব। নিশ্চয়ই জানো, আমি তোমার এতই কাছে রয়েছি যে, তুমি হাত বাড়ালেই আমাকে ধরতে পারবে। এরপর কেটে গেল মাস তিনেক। ম্যারি এ্যানকে ঠিকই অনুসরণ করলেন তার প্রাণপ্রিয় বন্ধু লিওনার্দ কোহেন। ১০ নবেম্বর অন্য ভুবনের দিকে যাত্রা শুরু“করলেন এ মহাত্মা। চিঠিতে সেই ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন, দারুণ একটি ভ্রমণের জন্য তোমাকে শুভকামনা। শুভবিদায়, পুরনো বন্ধু। অফুরান ভালবাসা, দেখা হবে। নিশ্চয় তাদের দেখা হবে!
×