ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কারণ মালিকের অসহযোগিতা অনৈক্য, রাজনীতি ও নেতাদের স্বার্থ

চট্টগ্রামে অধিকাংশ ট্রেড ইউনিয়ন নিষ্ক্রিয়

প্রকাশিত: ০৪:২১, ১২ নভেম্বর ২০১৬

চট্টগ্রামে অধিকাংশ ট্রেড  ইউনিয়ন নিষ্ক্রিয়

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম ॥ চট্টগ্রামে নিবন্ধনপ্রাপ্ত যতগুলো ট্রেড ইউনিয়ন আছে তার অর্ধেকেরও বেশির কার্যক্রম নেই। শ্রমিকদের মাঝে অনৈক্য, সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ, মালিকপক্ষের অসহযোগিতা ও শ্রমিক নেতাদের স্বার্থান্বেষী ভূমিকা ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম দুর্বল হওয়ার অন্যতম কয়েকটি কারণ বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিভাগীয় শ্রম দফতরের হিসাবে চট্টগ্রাম বিভাগে গত ২০১৩ সালে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত নিবন্ধনপ্রাপ্ত ট্রেড ইউনিয়ন ছিল সর্বমোট ১৩শ’। এর মধ্যে ইউনিয়ন ৮৮১, ফেডারেশন ১২ এবং মালিক সমিতি রয়েছে ৪০৭টি। চলতি বছর নবেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধনপ্রাপ্ত ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা ১৪শ’র কিছু বেশি বলে জানিয়েছে দফতরটি। প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রতিবছরই বিভিন্ন সংগঠন ট্রেড ইউনিয়ন হিসেবে নিবন্ধন নিচ্ছে। কোন কোন সংগঠন নিবন্ধন নেয়ার কয়েক মাস পর তাদের কার্যক্রম কিংবা কার্যালয়ের কোন খোঁজ পাওয়া যায় না। চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রম দফতরের উপ-শ্রম পরিচালক নাহিদুল ইসলাম বলেন, ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে তদারকির জন্য যে পর্যাপ্ত জনবল প্রয়োজন তা আমাদের নেই। আমাদের জনবল সঙ্কট রয়েছে। এরপরও যেসব ট্রেড ইউনিয়নের কার্যক্রম নিষ্ক্রিয় আছে, সেগুলো খোঁজ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। তাদের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে মামলাও করছি। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিষ্ক্রিয় সংগঠনগুলোকে চিঠি দিয়ে বারবার তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও সেখান থেকে কোন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। কোন কোন সংগঠন শুধু সাইনবোর্ড রেখেছে কিন্তু কার্যালয় কিংবা কর্মকর্তাদের কোন হদিস নেই। এগুলোর বেশিরভাগই বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন কল-কারখানা থেকে ট্রেড ইউনিয়ন হিসেবে নিবন্ধন নেয়া। সম্প্রতি সাগরিকা শিল্পাঞ্চল এলাকায় গউস ফ্যাশন, এসটেক লিমিটেড, সেলিম এ্যান্ড ব্রাদার্স, রিল্যাক্স রেনান্সসহ বেশ কয়েকটি গার্মেন্টস, প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন কারখানায় মালিক পক্ষ ও শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন তৎপরতা থেকে জানা গেছে যে, শুধু ট্রেড ইউনিয়ন করা এবং সমর্থন করতে গিয়ে সেখানকার শত শত শ্রমিক চাকরিচ্যুত হয়েছেন। কোথাও কোথাও ট্রেড ইউনিয়ন কর্মকর্তাদের অন্যত্র বদলিও করা হয়েছে। আবার কোথাও মালিকপক্ষের লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীদের দ্বারা শ্রমিকরা মারধরের শিকার হয়েছেন। আবার কোথাও ট্রেড ইউনিয়নের শ্রমিক নেতারা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ, শ্রম দফতরের সঙ্গে আঁতাত করে নিবন্ধনপ্রাপ্ত ট্রেড ইউনিয়ন ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শ্রমিকরা প্রথমেই ট্রেড ইউনিয়ন করার ওপর আগ্রহ দেখানো, সমর্থন কিংবা সক্রিয়ভাবে কাজ করলেও পরবর্তীতের মালিকদের আগ্রাসী তৎপরতা ও শ্রম দফতরের সক্রিয় ভূমিকা না থাকায় ট্রেড ইউনিয়ন করা থেকে শ্রমিকরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এছাড়া ট্রেড ইউনিয়নমুখী যে সব ফেডারেশন বা সংঘ রয়েছে সেগুলোও জোরাল ভূমিকা রাখতে পারছে না প্রশাসনিক, রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন অসহযোগিতার কারণে। শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন, কারখানার মালিকরা নিজেদের অনুসারী হিসেবে নামেমাত্র শ্রমিক নিয়োগ করে বিভিন্ন সময় ট্রেড ইউনিয়ন করা শ্রমিকদের মারধর ও নির্যাতন করছেন। অথচ তারা কারখানায় কোন কাজ করে না কিন্তু ঠিকই বেতন তুলেন। সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা গেছে, পোশাক শিল্প বাদেও বিভিন্ন ক্ষুদ্র, মাঝারি ও ভারি কল-কারখানায়ও শ্রমিকরা ট্রেড ইউনিয়ন করতে পারছেন না। এই নিয়ে শ্রমিকরা শ্রম আদালতে শরণাপ্নন হওয়ার পরও তাৎক্ষণিক কোন সমাধান পাচ্ছেন না বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার কারণে। বর্তমানে চট্টগ্রামে শ্রম আদালতে (১ ও ২) ১১ শ’ উপরে মামলা বিচারাধীন আছে। উল্লেখ্য, শ্রম আইন অনুযায়ী যেখানে মামলা ৬০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি হওয়ার কথা রয়েছে, সেখানে কোন কোন মামলা নিষ্পত্তি হতে লেগে যাচ্ছে ৩ থেকে ৪ বছর। এমনও মামলা আছে যেগুলো ১০ বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি। এ নিয়ে বিজেএইএ, যুগ্ম শ্রম পরিচালক দফতর থেকেও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না বলে শ্রমিক নেতারা অভিযোগ করেছেন। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের চট্টগ্রামের সভাপতি ও শ্রম আদালতের সদস্য তপন দত্ত জনকণ্ঠকে বলেন, ট্রেড ইউনিয়নের কার্যক্রম আশির দশকের আগে শক্তিশালী ছিল। সামরিক শাসক এরশাদ যখন ক্ষমতায় ছিল তখন কিছু দাবি-দাওয়া নিয়ে শ্রমিকরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল এবং শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে তখন এরশাদ শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল। এটা ছিল তখন শক্তিশালী ট্রেড ইউনিয়নের আন্দোলনের একটি অংশ।
×