ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বেজিংয়ের বিষয়ে হস্তক্ষেপ নীতির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের

চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে ট্রাম্প

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ১২ নভেম্বর ২০১৬

চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার প্রথম দিনেই চীনকে মুদ্রা কারসাজিকারী বলে ঘোষণার প্রতিশ্রুতি এশিয়ার সবচেয়ে বড় দেশটির পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্ক আরোপের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলছে। এতে দুটি দেশের সম্পর্ক নতুন বিরোধের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। এদিকে, চীনা রাষ্ট্রীয় মিডিয়া অন্য দেশের স্বার্থের দিকে দৃষ্টি না দেয়া এবং চীনের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার নীতির বিরুদ্ধে ট্রাম্পকে সতর্ক করে দিয়েছে। এর বদলে আন্তর্জাতিক স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে চীনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানায় চীনা মিডিয়া। নবনির্বাচিত ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচার অভিযানকালে তার ‘প্রথমে আমেরিকা’ নীতির আওতায় চীনের সঙ্গে সই করা বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করা এবং আরও একতরফা পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণের হুমকি দেন। এ হুমকি চীনের সঙ্গে এক বাণিজ্য যুদ্ধ বাধাতে পারে বলে ঝুঁকি রয়েছে। এর ফলে অন্য অনেক সামরিক ও অর্থনৈতিক ইস্যুতে আলোচনায় জটিলতা দেখা দিতে পারে। এ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে মার্কিন আমদানিকারকরাও পাল্টা আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে। চীনের মুদ্রা নীতির কারণে দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি খুবই স্পষ্ট এবং এটি তার পেনসিলভানিয়ার গেটিসবার্গে দেয়া ভাষণে অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ ভাষণে ট্রাম্পের প্রথম ১০০ দিনের জরুরী কর্মপরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত ছিল। কোন দেশকে মুদ্রা কারসাজিকারী ঘোষণার এমনিতে সামান্য গুরুত্বই রয়েছে। এরূপ ঘোষণার পর মুদ্রা অপরাধীদের সঙ্গে দ্রুত আলোচনা করার প্রয়োজন হয় এবং হোয়াইট হাউস কোন কোন দেশকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোন কোন ধরনের অর্থসংস্থান ও বাণিজ্য চুক্তি করা থেকে বিরত রাখতে পারে। বাণিজ্যিক অংশীদারদের ওপর একতরফা নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যাপক ক্ষমতা প্রেসিডেন্টকে দিয়ে থাকে এমন অন্যান্য আইনের সঙ্গে মিলিতভাবে ঐ ঘোষণাকে কাজে লাগানো হতে পারে। তখন কিন্তু ট্রাম্প এ ঘোষণাকে চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের পক্ষে যুক্তি দেখাতে কাজে লাগতে পারবেন। তিনি এমন প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। সাবেক মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি এ্যাটর্নি মাইকেল গ্যাডব বলেন, বাণিজ্যের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অনেক আইনগত কর্তৃত্ব ট্রাম্পের রয়েছে। তিনি এখন জর্জ টাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক। যেমন, ১৯৭৪ সালের বৈদেশিক বাণিজ্য আইনের অধীনে প্রেসিডেন্ট স্থির করতে পারেন যে, এটি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অযৌক্তিক ও অসমর্থনীয় বাধা এবং তিনি চীনের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করতে ঐ কর্তৃত্বকে কাজে লাগাতে পারেন। গ্যাডব একথা বলেন। বেজিং বাণিজ্যিক প্রতিযোগীদের ওপর রফতানি ক্ষেত্রে অনুচিত সুবিধা পেতে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে যে এর মুদ্রা য়ুয়ানের মূল্যমান কৃত্রিম উপায়ে নিম্ন রেখেছিলÑ এ নিয়ে খুব কম অর্থনীতিবিদই বিতর্ক করবেন। এ প্রতিযোগিতামূলক অবমূল্যায়ন দেশটিকে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের পণ্য প্রস্তুতকারকদের ক্ষতির বিনিময়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত করতে সহায় হয়েছিল। কিন্তু গত দু’বছরে চীনা কর্তৃপক্ষ য়ুয়ানের মূল্যমান বাড়াতে দেশের মজুদ বৈদেশিক মুদ্রার প্রায় এক লাখ কোটি ডলার ব্যয় করে। ট্রাম্পের বাগাড়ম্বরের কতখানি সরকারী নীতিতে রূপায়িত হবে, তা নিয়ে চীন ও অন্যান্য বিদেশী রাষ্ট্রের সরকার নিশ্চিত নয়। কারণ তিনি সময়ে সময়ে স্ববিরোধী উক্তি করেন এবং তিনি বহির্বিশ্বের প্রতি কি নীতি অনুসরণ করবেন, তা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে তেমন কিছু বলেননি। ট্রাম্প প্রায়ই তার প্রচার অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ হ্রাসের জন্য বেজিংকে দোষারোপ করেন এবং চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শতকরা ৪৫ ভাগ শুল্ক আরোপের সঙ্কল্প ব্যক্ত করেন। রিপাবলিকান প্রার্থী তার দায়িত্ব নেয়ার প্রথম দিন চীনকে মুদ্রা কারসাজিকারী বলে ঘোষণারও প্রতিশ্রুতি দেয়। চীনের সরকারী বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার এক ভাষ্যে সতর্ক করে দেয়া হয়, মহামন্দার সময় যুক্তরাষ্ট্রের অন্য দেশের স্বার্থের বিষয়ে নির্লিপ্ত থাকার নীতি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সঙ্কটই ত্বরান্বিত করেছিল। ভাষ্যে অন্য দেশের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার নীতির দিকে ঝুঁকে পড়ার বিরুদ্ধেও হুঁশিয়ার করে দেয়া হয়। এতে বলা হয়, বহির্বিশ্বে মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ তাদের সর্বনাশা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মাশুল দিতে বাধ্য করে বলে ইতিহাস প্রমাণ দেয়। Ñওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও এনডিটিভি
×