ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্বপ্নীল মাহফুজ

শিল্পকর্ম চুরির আদ্যোপান্ত

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ১১ নভেম্বর ২০১৬

শিল্পকর্ম চুরির আদ্যোপান্ত

ম্যাট বোমার ‘হোয়াইট কলার’ সিনেমায় শিল্পকর্ম চুরির কুটিল কৌশলের ধারণা দিয়েছেন। এফবিআই এজেন্ট বার্ক ও তার সঙ্গী নীল কেফরি আমাদের মাল্টিমিডিয়া-ডলার ক্রাইমের ধারণা দিয়েছেন, যার মূল লক্ষ্য ছিল বিশ্বের অনন্য ও বিরল সংগ্রহনীয় চিত্রকর্ম বা চিত্রশিল্প চুরির ওপর। যদিও হোয়াইট কলার কাল্পনিক, কিন্তু বিশ্বে চিত্রকর্মের যে চুরিগুলো হয়েছে তা মোটেও কাল্পনিক নয়। জাদুঘরে বিখ্যাত শিল্পীদের আঁকা চিত্রকর্মগুলো অনেক সুরক্ষিত থাকে তবুও অনেক ঘটনা আছে যেখানে এসব চিত্রকর্ম সুপরিকল্পিতভাবে চুরি করা হয়েছে। এ ধরনের চুরির ঘটনা পর্যবেক্ষণের জন্য এফবিআইয়ের একটি পৃথক ইউনিট আছে। আসুন জেনে নেই, কিছু বিখ্যাত চিত্রশিল্প চুরির ঘটনার আদ্যোপান্ত। লুভর মিউজিয়াম: ফ্রান্সের রাজধানীতে প্যারিসে অবস্থিত লুভর মিউজিয়ামের একজন কর্মচারী মোনালিসা চিত্রকর্মটি চুরি করে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে, মিউজিয়ামটি তখন বন্ধ ছিল। মোনালিসা যে চুরি করেছিল তার নাম ছিল ভিনসেনজো পেরুগিয়া। সে দুই বছর পর ধরা পড়ে, চিত্রকর্মটি বিক্রি করতে গিয়ে। এই দুই বছরের মধ্যে মোনলিসা চিত্রকর্মের অনেক নকল বিক্রি হয়েছিল। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির আঁকা ‘মোনালিসা’ চিত্রকর্মটি অনেক জনপ্রিয় একটি চিত্রশিল্প। গার্ডনার জাদুঘর : ১৯৯০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনের গার্ডনার জাদুঘর থেকে ১৩টি চিত্রকর্ম চুরি হয়েছিল। দুজন ব্যক্তি পুলিশ কর্মকর্তার ছদ্মবেশে জাদুঘরের নিরাপত্তা রক্ষীদের ধোঁকা দিয়ে জাদুঘরে প্রবেশ করে ও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জাদুঘর লুট করে। লুট করা চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে- ভার্মার এর আঁকা ‘ঞযব ঈড়হপবৎঃ’, রেমব্র্যান্ডের আঁকা ‘ঞযব ঝঃড়ৎস ড়হ ঃযব ঝবধ ড়ভ এধষরষবব’ এবং ‘অ খধফু ধহফ এবহঃষবসধহ রহ ইষধপশ’। ওই ১৩টি চিত্র এখনও পাওয়া যায়নি। যার আনুমানিক মূল্য আনুমানিক ৫০০ মিলিয়ন ডলার। ন্যাশনাল আর্ট মিউজিয়াম : ১৯৯৪ সালে দুজন ব্যক্তি নরওয়ের অসলোতে অবস্থিত জাতীয় আর্ট জাদুঘর থেকে দ্যা স্ক্রিম চিত্রকর্মটি চুরি করে। তারা যাওয়ার সময় একটি নোট রেখে যায় যাতে লেখা ছিল ‘ঞযধহশং ভড়ৎ ঃযব ঢ়ড়ড়ৎ ংবপঁৎরঃু’ (দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য ধন্যবাদ)। পেইন্টিংটির মুক্তিপণ হিসেবে তারা ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দাবি করে কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা দিতে রাজি হয়নি। তিন মাস পরে, একটি স্টিং অপারেশন করা হয় এবং পেইন্টিংটি অক্ষতভাবে উদ্ধার করা হয়। এই চিত্রকর্মটি ২০০৪ সালে আবারও চুরি হয়। বন্দুকধারীরা মুখোশ পড়ে দিনের আলোয় প্রকাশ্যে জাদুঘরে ঢোকে এবং চুরি করে পালিয়ে যায়। ২০০৬ সালে ছয়জনকে এই অপরাধের জন্য বিচারের মুখোমুখি করা হয়। নরওয়ের পুলিশ ২০০৬ সালে এই চিত্রকলার পুনরুদ্ধারের ঘোষণা দেন কিন্তু এগুলো উদ্ধারের বিবরণ প্রকাশ করা হয়নি। কানস্থল জাদুঘর : ২০১২ সালে নেদারল্যান্ডসের রোটারডামের কানস্থল মিউজিয়াম থেকে ৭টি চিত্রকর্ম চুরি হয়। এগুলোর মধ্যে ছিল মনেটের আঁকা ‘ডধঃবৎষড়ড় ইৎরফমব’ ও ‘ঈযধৎরহম ঈৎড়ংং ইৎরফমব খড়হফড়হ’ এবং পিকাসোর আঁকা ‘ঞবঃব ফ অৎষবয়ঁরহ’। ধারনা করা হয় রাতে এই চুরির ঘটনাটি ঘটে। এই সময় মিউজিয়ামের এ্যালার্মও বাজে। কিন্তু তা সত্ত্বেও নিরাপত্তাকর্মীদের আসার আগেই পালিয়ে যায় চোরের দল। পরে অবশ্য অভিযুক্তরা ধরা পড়ে কিন্তু পেইন্টিংগুলো এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। মডার্ন আর্ট জাদুঘর : ২০১০ সালে প্যারিসে অবস্থিত এই জাদুঘর থেকে এক রাতে ৫টি পেইন্টিং চুরি হয়, যার মূল্য ছিল প্রায় ১৬২ মিলিয়ন ডলার। পেইন্টিংগুলো চুরির সময় এ্যালার্ম বাজেনি। এগুলো যে চুরি হয়েছে, তা পরেরদিন সকালে জাদুঘর কর্মীদের নজরে পড়ে। পিকাসোর ‘খব ঢ়রমবড়হ ধীঁ ঢ়বঃরঃং ঢ়ড়রং’ চিত্রকর্মটি এগুলোর মধ্যে একটি, কেউ কেউ বিশ্বাস করে এগুলো উদ্ধার করা যাবে না। কারণ চোর, চুরি করা মাত্রই সেগুলো ময়লায় ফেলে দেয়। ময়লাগুলো পরিষ্কার করার পরে কর্তৃপক্ষ সে বিষয়ে জানতে পারে। দ্য জাস্ট জাজেস : এই চিত্রকর্মটি গির্জার বেদির পেছনের নিচের বাম প্যানেলের, এটি এঁকেছিলেন জ্যান ভ্যান ইক অথবা তার ভাই হুবার্ট ভ্যান ইক। এটা ১৯৩৪ সালে বেলজিয়ামের জাদুঘর থেকে চুরি হয়েছিল। চুরির কিছুদিন পরেই চোর বা চোররা পুলিশের কাছে পত্র লেখে এবং এভাবে ১১টা পত্র আদান-প্রদান হয়। চিত্রকর্মটির জন্য তারা এক মিলিয়ন বেলজিয়ান ফ্রাঙ্ক দাবি করে এবং সরল বিশ্বাসে মুক্তিপণ দেয়া হলে প্যানেলের একটি অংশ ফেরত দেয়া হয়। পপি ফ্লাওয়ার্স : ভিনসেন্ট ভ্যান গগ এর আঁকা এ চিত্রটি মিসরের কায়রোর মুহম্মদ মাহমুদ খলিল জাদুঘর থেকে ২০১০ সালের আগস্ট মাসে চুরি হয়। এখন পর্যন্ত তা উদ্ধার করা যায়নি। পেইন্টিংটির আনুমানিক মূল্য ৫০ থেকে ৫৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার। একজন মিসরীয় কোটিপতি এটির সন্ধানদাতার জন্য ১ লাখ ৭৫ হাজার ইউএস ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন। এর আগে ‘পপি ফ্লাওয়ার্স’ সর্বপ্রথম ১৯৭৭ সালে চুরি হয় এবং ১০ বছর পরে সেটি কুয়েত থেকে পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল।
×