ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বরফের হোটেল

অভিনব হোটেল

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ১১ নভেম্বর ২০১৬

অভিনব হোটেল

‘ফ্রোজেন’ ছবিটা যারা দেখেছেন, তাদের কাছে খুব পরিচিত বরফের রাজপ্রাসাদ। কল্পনায় অনেকে হয়তো ঘুরেও এসেছেন তেমন ঝলমলে বরফের প্রাসাদ থেকে। ভেবেছেন, ইশ! বাস্তবে যদি এমন একটা রাজপ্রাসাদ থাকত! বাস্তবে এমন রাজপ্রাসাদ নেই তো কী হয়েছে, বরফের হোটেল কিন্তু আছে। সেই হোটেল কোনভাবেই রাজপ্রাসাদের চেয়ে কম আকর্ষণীয় নয়। বরং বরফের হোটেল দেখে রাজপ্রাসাদ ভেবে ভুল করে বসা বিস্ময়কর নয়। অবাক হচ্ছেন? তা হতেই পারেন। বরফ দিয়ে হোটেল বানানো যায়- এ কথা সত্যিই অবিশ্বাস্য। কিন্তু তারচেয়ে অবিশ্বাস্য ব্যাপার হলো, একটা নয়, একাধিক বরফের হোটেল আছে পৃথিবীতে। যেসব দেশে প্রচণ্ড শীত পড়ে, তুষারপাত হয়- মূলত সেসব দেশেই অস্থায়ী বরফের হোটেল তৈরি হয়। কানাডা, ফিনল্যান্ড, জাপান, নরওয়েসহ বিভিন্ন দেশ রয়েছে এই তালিকায়। শীতকালে এসব দেশে তুষারপাত হয়, তাপমাত্রা থাকে অনেক কম। তাই সেই সময়েই বরফের হোটেল তৈরি করা হয়। তাপমাত্রা কম থাকায় হোটেল তৈরিতে ব্যবহৃত বরফ গলে যায় না। আর এসব হোটেল নির্মাণশৈলী এবং সৌন্দর্যের দিক থেকেও দর্শনার্থীদেরকে চমকে দেয়। বরফের হোটেলের সবকিছুই বরফ দিয়েই তৈরি। টেবিল, চেয়ার, বিছানা, এমনকি বাথরুমও বরফ এবং তুষারের সমন্বয়ে তৈরি। এ হোটেলগুলোর সৌন্দর্য বহুগুণে বাড়িয়ে দেয় বরফের গায়ে নানা রঙের আলোর ঝলকানি। এক কথায় বলা যায়, বরফের হোটেলে ঢোকার পর থেকে প্রতিটি মুহূর্তে, প্রতিটি কোণায় আপনার জন্য রয়েছে বিস্ময়। যেদিকেই তাকাবেন, আপনি মুগ্ধ হতে বাধ্য হবেন। বিশ্বের নানা প্রান্তে অনেক বরফের হোটেল আছে। তবে জনপ্রিয় হোটেলগুলোর মধ্যে রয়েছে কানাডার হোটেল ডি গ্লেস, সুইডেনের হোটেল জাক্কাসজারভি ইত্যাদি। বরফের হোটেলের নাম শুনলে সবচেয়ে আগে এই নামগুলোই মাথায় আসে সবার। হোটেল ডি গ্লেস : কানাডার কিউবেকে অবস্থিত হোটেল ডি গ্লেস। মজার কথা হচ্ছে, ‘ফ্রোজেন’ ছবির যেই রাজপ্রাসাদ দেখে অনেকেই প্রথম বরফের প্রাসাদের কথা জেনেছেন বা ভেবেছেন, সেই রাজপ্রাসাদ কিন্তু এই হোটেলের আদলেই তৈরি। আইস হোটেল বলতে তাই সবার আগে চলে আসে হোটেল ডি গ্লেসের নাম। ২০০১ সালে এই হোটেলটি নির্মিত হয়। ৮৫টি রুম নিয়ে হোটেলটির পথচলা শুরু। হোটেলটিতে রয়েছে একটি বারও। প্রতি বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত খোলা থাকে এই হোটেল। জুক্কাসজারভি আইস হোটেল : সুইডেনের জুক্কাসজারভি আইস হোটেল বিশ্বের প্রথম বরফের হোটেল। জুক্কাসজারভি গ্রামে অবস্থিত হওয়ায় গ্রামের নামানুসারে হোটেলের নামকরণ করা হয়েছে। এখানে ৮০টি রুম ও একটি স্যুট আছে। হোটেলটি খোলা থাকে প্রতিবছর ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যস্ত। বরফের উপরে অপরূপ নকশার জন্য হোটেলটির খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। লবণের হোটেল নামটা শুনে চমকে ওঠাই স্বাভাবিক। লবণের হোটেল! অবিশ্বাস্য হলেও এটাও সত্যি। লবণের হোটেলও রয়েছে পৃথিবীতে। বলিভিয়ার রাজধানী থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় লবণের ভূমি সালার ডি উয়ুনি। এখানেই অবস্থিত বিশ্বের একমাত্র লবণের হোটেল। হোটেলটির নাম ‘প্যালেসিও ডি সল’ বা লবণের প্রাসাদ। সালার ডি উয়ুনি বলিভিয়ার জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা। কিন্তু এখানে বিশ্রাম নেয়ার বা খাওয়াদাওয়ার কোন সুবিধা ছিল না। সেজন্যই এখানে একটি হোটেল নির্মাণ করা অত্যন্ত প্রয়োজন হয়ে পড়ে। কিন্তু এখানে হোটেল নির্মাণের সামগ্রী ছিল না। তাই জায়গাটির বিশেষত্ব আরও বাড়াতে লবণ দিয়েই হোটেল তৈরি করা হয় এ হোটেলটি। এই এলাকায় প্রথম লবণের হোটেল তৈরি করা হয় ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে। কিন্তু কিছু সমস্যা দেখা দেয়ায় সেটি ২০০২ সালে ভেঙ্গে ফেলা হয়। ২০০৭ সালে আবার এখানে একটি হোটেল তৈরি করা হয়, যার নাম ‘প্যালেসিও ডি সল।’ ৩৫ সেন্টিমিটারের প্রায় এক মিলিয়ন লবণের ব্লক দিয়ে নির্মিত এই হোটেল। হোটেলের দেয়াল, মেঝে, আসবাবপত্র- সবকিছুই লবণের তৈরি। তবে কৌতূহলী হয়ে অনেকেই লবণের তৈরি এসব জিনিস চুষে দেখতে যান। এতে হোটেলের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কায় কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। পানির নিচে হোটেল ধরুন, একটি হোটেলে ঢুকলেন। ঢোকার পর অবাক হয়ে দেখলেন, দেয়ালের বাইরে স্বচ্ছ নীল পানি দেখা যাচ্ছে। সেখানে সাঁতার কাটছে রঙিন মাছের ঝাঁক। যেন আপনি একটি বিশাল বড় এ্যাকুরিয়ামে ঢুকে পড়েছেন। ব্যাপারটা কি স্বপ্ন মনে হচ্ছে? ব্যাপারটি স্বপ্ন নয় বাস্তব। এরকম দৃশ্যই আপনি দেখতে পাবেন আন্ডারওয়াটার হোটেলে গেলে। নামটা অপরিচিত লাগছে? তা লাগতেই পারে। আন্ডারওয়াটার হোটেল বা পানির নিচে হোটেল এখনও খুব পরিচিত নয়। তবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অনেক আন্ডারওয়াটার হোটেল রয়েছে। পানির নিচেই নির্মিত হয়েছে অপূর্ব এই হোটেলগুলো। ফিজিতে রয়েছে দ্য পজেইডন আন্ডারসি রিসোর্ট। এটিকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আন্ডারওয়াটার হোটেলের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। রিসোর্টটির সত্তর শতাংশ নির্মিত হয়েছে এ্যাক্রিলিক গ্লাস দিয়ে। এখানে স্পা, রেস্টুরেন্ট, বিয়ের স্থান এবং ২৫টি স্যুট আছে। আর দেয়ালের বাইরে রয়েছে জলের নিচের অপূর্ব জগত। দুবাইয়ে আছে আরেকটি আন্ডারওয়াটার হোটেল। এটি দুবাইয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় হোটেলগুলোর একটি। এর নাম ‘দ্য ডিসকাস হোটেল।’ এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এর অর্ধেক অংশ পানির উপরে এবং অর্ধেক অংশ পানির নিচে। আয়তনের দিক থেকে হোটেলটি বেশি বড় না হলেও নির্মাণশৈলীর কারণে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আরও অনেক আন্ডারওয়াটার হোটেল রয়েছে।
×