সবার উপরে মানুষ সত্য
[হিন্দু জনগোষ্ঠীর ঘর-বাড়ি-মন্দির ভাঙার প্রতিবাদে]
মুহাম্মদ সামাদ
এখানে মা-দুর্গা উবু হয়ে পড়ে আছে- দুই চোখে অশ্রু তার;
যেনো সন্তানের ম্লøানমুখে তাকাবে না আর!
কালীমার দুই চোখে অভিমান, ফিরিয়ে রেখেছে মুখ-
যেনো শক্তির খড়গ হাতে তাড়াবে না তষ্করের তা-ব!
লক্ষ্মীর আসনে বসে গেছে নিশাচর পেঁচা-
যেনো শস্যদানা গাভী কবুতর ফলিবে না গাঁয়ে
ঘর-বাড়ি মাথা তুলে দাঁড়াবে না নিজ নিজ পায়ে!
ছিন্নভিন্ন হয়ে সরস্বতী গেছে নিরুদ্দেশে
যেনো বিদ্যার বিভায় আর জাগিবে না মানবিক বোধ!
এ যে একাত্তরের গ্রাম!
একাত্তরে, সেই বিসর্জনে-
জীবন দিলাম, সম্ভ্রম দিলাম,
পুত্র ও কন্যা দিলাম
ঘর-বাড়ি মন্দির দিলাম!
এসব আবার তবে কেনো চাই?
আবার তা-ব কেনো?
কেনো সে-ই হায়েনার বর্বরতা?
আমার পিতার রক্তে কেনা
আমার পুত্রের রক্তে কেনা
আমার কন্যার সম্ভ্রমে কেনা
আমার বোনের সম্ভ্রমে কেনা
মায়ের অশ্রুতে কেনা
এ কোন্ মাতৃভূমি?
আমি কি আমার ধর্ম ভুলে যাই?-
‘সবার উপরে মানুষ সত্য
তাহার উপরে নাই’।
** চোরাশিকারির ত্রাস
গোলাম কিবরিয়া পিনু
পড়ে থাকি অসহায়
পড়ে থাকি একা
পড়ে থাকি শ্বেতচাঁপাফুল
থাকছে না একূল-ওকূল!
কী এমন পাপ?
আমারই বসতবাড়িতে বারবার
হিংস্র দানবের ছাপ!
নিজের সাকিনে হয়ে পড়ি শরণার্থী
লণ্ডভণ্ড-মরণাপন্ন-মৃতকল্প
নিঝুমতা নিয়ে গোঙানি ও আর্তি!
এই দেশ দেশমাতা নয় কি আমার?
শুধু দেশ এক রং জামার!
নষ্ট হবে নিজের ভিটেমাটিতে
গড়ে তোলা শ্রমঘন স্বপ্নের খামার!
প্রতিবেশী হয়ে যায় কেন অচেনা!
বণিকের লোভে-
আমাকে সস্তায় যাবে কেনা?
বিপন্ন-বেদনা নিয়ে আজ
ঘাসের শিশিরে নুয়ে থাকি-
শোক-বিহ্বল হয়ে
স্পর্শ রাখতে পারি না
কেন সন্তানের কাঁধে?
বারবার ধ্বংস হবো কোন্ শকুনের স্বপ্নসাধে?
আমি হবো নানা ছুতোয়
জখম ও খুন!
মানবিকতায় কারা ধরাচ্ছে ঘুণ!
কারা চায় আমাদের বংশনাশ
-ও অবলুপ্তি?
তারা তো কায়াহীন নয়
ছায়াহীন নয়
তারাÑদেহবিশিষ্ট মূর্তিমান।
তবে কেন তাদের না ধরে
শুধুই বিলাবে করুণায় ত্রাণ!
কেন বার বার টানাটানি-
ওষ্ঠাগত প্রাণ!
বেঁচে থেকে কেন হবো অর্ধমৃত?
রাষ্ট্র কি ঘুমাবে?
সরকার যখনই দরকার
তখনও চুপচাপ!
তাদের গায়ে কি লাগবে না কোনো সময়ে
আগুনের তাপ!
মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধানের শুভ্রতায়
লাগবে আরও কতবার রক্তের ছাপ!
আমাদের আকাশটা ঢেকে যাবে
কুড়ালে ও কোদালে মেঘে
দ্রবন্তী নাব্যতা হারাবে!
আমাদের দিনমণি
চলে যাবে পূর্ণগ্রাসে!
পিদিমও জ্বালাতে পারবো না?
চন্দ্রসুধা মিটাবে ক্ষুধা-তা তো দূরের কথা!
আমাদের জন্মভূমি-আমাদের মর্ত্যলোক
সেখানে বাড়ছে কেন বারবার
-মাতম ও শোক!
কোন্ চোরাশিকারির ত্রাসে?
কোন্ চোরাশিকারির ত্রাসে?
** সলেমানপুর
চঞ্চল শাহরিয়ার
পুকুর ঘাটের দিকে প্রতি শুক্রবারের সকাল
পুজো সংখ্যা পত্রিকায় চোখ বুলিয়ে ফের
হেঁটে যাওয়া অজিত কাকার আঙিনায়
আশ্বিনের দিনগুলো এমনই মধুমাখা।
চট্টগ্রামের আকাশে আজ মেঘ
কলকাতা আরও বেশি অভিমানী
এই গল্পে অজিত কাকার সাথে মশগুল আমি
পায়ে পায়ে ফিরে আসে গোবিন্দ ঘোষের মা।
ফেরীঘাট কখনোবা আকাশ রাঙিয়ে
শিকড়ের টানে ফিরে আসি বার বার
প্রিয় সলেমানপুর। প্রিয় প্রকৃতি আমার।
লাল মোরগের ডাক শুনি কাঁধে ঝুলিয়ে ব্যাগ।
শীর্ষ সংবাদ: