ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জিয়া হায়দার

এ লে বে লে

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ১১ নভেম্বর ২০১৬

এ লে বে লে

(পূর্ব প্রকাশের পর) মেয়ে : না। ছেলে : তাহলে আমাদের সেই পাহাড় সমুদ্র আকাশের ত্রিবেনী সঙ্গমে। মেয়ে : আমাদের স্বপ্নের দেশ। ছেলে : চলো যাই। (উঠতে যায়) মেয়ে : প্রথমে অন্য কোন খানে। ছেলে : না। মেয়ে : তাহলে আমিও না। ছেলে : কেন নয়? মেয়ে : কেন আবার বলেইছি তো। (ছেলে ভীষণ উত্তেজিতভাবে উঠে চলে যেতে উদ্যত হয়) কোথায় যাচ্ছো? (মেয়েও উঠে দাঁড়ায়) ছেলে : (যেতে যেতে) আত্মহত্যা, আমি সুইসাইড করবো। সে পুরুষ ও মহিলার জন্য নির্দিষ্ট টেবিলের কাছাকাছি চলে আসে। নির্দেশক রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাদের নিরীক্ষণ করেছে। মেয়ে : (ছেলেকে অনুসরণ করে) তাহলে আমিও করবো। ছেলে : ( থেমে যায়) ঠিক! মেয়ে : (ছেলের মুখোমুখি) ঠিক। তবে কি না... ছেলে : তবে আবার কী? মেয়ে : কিভাবে করা হবে সেটাও ঠিক করা দরকার। ছেলে : (প্রস্তাবটা তার ভালো লাগে) তাইতো। তা... আমরা দু’জন একসঙ্গে পাশাপাশি রেললাইনের ওপর শুয়ে পড়বো। মেয়ে : কিন্তু ট্রেন যদি অন্য লাইনে চলে যায়। ছেলে : হুঁ। ছেলেটি আরো পন্থা বের করার জন্য ভাবতে থাকে চিন্তামগ্নভাবে সে পুরুষ মহিলার একটি চেয়ারে বসে পড়ে। মেয়েটিও বসে। ছেলে : (দাঁড়ায়, হাত ধরে) ইয়েস, পেয়েছি। চলো দু’জনে লেক-এর পানিতে ঝাঁপ দিই গে। মেয়ে : (বসেই) কিন্তু, আমি যে সাঁতার জানিনে। ছেলে : কেন, তুমি তো প্রায়ই সুইমিং পুল-এ যাও। মেয়ে : বা রে সে তো আমি যাই সানবার্ন আর বিকিনিগুলো দেখানোর জন্যেÑ সে তো তুমি জানোই। ছেলে : হুঁ। (হেসে)... তাহলে তুমি একটা কিছু বের করো। মেয়ে : আমার মাথায় যে কিছু আসছে না। ছেলে : (একটু ভেবে নিয়ে) তাহলে দু’জনে একসঙ্গে বিষ খাবো। মেয়ে : তুমি আগে খাবে। ছেলে : কেন? মেয়ে : ভেজাল আছে কিনা, দেখে নিতে হবে না! (দু’জনেই ভাবনামগ্ন) নির্দেশক রাগ দমন করে এগিয়ে আসে তাদের দিকে। নির্দেশক : (শান্ত কণ্ঠে) তোমরা এখানে বসে পড়েছো! ছেলে : উঁ। মেয়ে : উঁ। ছেলে : বিরক্ত করবেন না তো! নির্দেশক : বিরক্ত! ছেলে : দেখুন, এখন মাথার ঠিক নেই।.... নির্দেশক : মাথা! তোমাদের মাথার কোন দাম নেই আমার কাছে। খালি কান দুটোই ঢের, বুঝলে। মেয়ে : ক্যান।... নির্দেশক : হ্যাঁ আমার মাথা দিয়ে যা বেরোয় তাই ওই কান দিয়ে শুনবে। আর তাই করে যাবেÑ আন্ডারস্ট্যান্ড। মেয়ে : কিন্তু আমাদের ব্যাপার নিয়ে তো আমরা মাথা ঘামাচ্ছি। নির্দেশক : সে কাজটা আমার মাথাই করে দেবে। শোনো। অনেক নরম হয়ে তোমাদের সঙ্গে কথা বলেছি। অনেক কনসেশন দিয়েছি। কমপ্রোমাইজ করেছি। আমার দিলটা খুবই নরম, কিন্তু কঠিন হতে দেরি হয় না। আর হলে.... থেমে যায়। (স্বামী সিগ্রেট ধরায়। স্বামীর জুতোর নিচে সিগরেট মাড়িয়ে দেয়। নো স্মোকিং। (ছেলে ও মেয়েকে) যাও, নিজেদের জায়গায় যাও। নির্দেশক : তাদের দিকে কঠিন দৃষ্টিতে একটুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিজের আসনে যেয়ে বসে। ছেলে ও মেয়ে হতভম্ব হয়ে পরস্পরের দিকে তাকায়। বিষণœ মনে উঠে পড়ে ধীরে ধীরে হেঁটে যায় নিজেদের টেবিলের দিকে। কিন্তু নির্দেশকের নির্দেশ অমান্য করে বসে পড়ে প্ল্যাটফর্মের ওপর। তারা গভীরভাবে ভাবনায় মগ্ন। স্বামী উঠে দাঁড়ায়। (চলবে) স্ত্রী : কোথায় যাচ্ছো! স্বামী : ঢের হয়েছে, চলো। স্ত্রী : কেন, কি হলো? নির্দেশক হাতের ইশারায় তাদের চুপ থাকতে বলে। স্বামী ভালো লাগছে না। স্ত্রী : তোমাার ভালো লাগছে না? আমার তো বেশ মজাই লাগছে। নিদের্শক : আপনার ভালো লাগছে না? (ছেলে ও মেয়ে স্বামী দিকে তাকায়।) ছেলে : (মেয়েকে) এই আামদের ব্যাপার-স্যাপার নাকি ওনার ভালো লাগছে না। স্বামী : ভালো লাগার কি আছে এর মধ্যে? মেয়ে : তাইতো শুনছি। নির্দেশক : কেন এই যে... অভিনব... এক্সপেরিমেন্টাল প্রোডাকশন। আজকের যুগের তরুণ-তরুণীদের জীবনের .... স্বামী : রেস্টেুরেন্টে বসের প্রেম করা ছাড়া তরুণ- তরুণীদের আর কোন কাজ নেই? (ছেলের দিকে এগিয়ে যায়) এই ছেলে, কি করা হয় তোমার? ছেলে : (নির্দেশককে) জবাব দেবো? কাঞ্চু : দিয়ে দাও হে দিয়ে দাও। (নির্দেশককে) কি বলিস। নির্দেশক : (কাঞ্চুর দিকে তাকিয়ে, একটু চিন্তা করে) ইয়েস, এ্যাপ্রুভড। দিতে পারো। ছেলে : (কাঁধ ঝাঁকিয়ে) খাই দাই ঘুমাই, ফুর্তি করি। জীবনকে উপভোগ করি। স্বামী : লেখপড়া? ছেলে : ইউনিভার্সিটিতে নাম আছে। পরীক্ষা হয় না বলে বেরোতে পারছি না। স্বামী : বাবা কি করেন? ছেলে : শুনেছি ব্যবসা করে। কি ব্যবসা তো বলতে পারবো না তবে .. স্ত্রী : (উঠে এসে) তুমি এটা কি শুরু করলে? স্বামী : আহ রাখো তো। ( স্ত্রী ক্ষুব্ধ হয়ে ফিরে যায়) ‘তবে’Ñ কি বলছিলে? ছেলে : বাবার কাছে অনেক ধরনের লোকজন আসে Ñ পজিশন, আপেজিশান সব রকমের বড়ো বড়ো অফিসার। ঞযবু ধৎব ৎবধষষু মৎবধঃ, ুড়ঁ শহড়.ি শুধু যে এদেশের লোক তা কিন্তু নয়, ইউরোপ আমেরিকা থেকেও লোক আসে। তিনিও যান। বেশ ঘন ঘনই যান। গু ভধঃযবৎ রং ধহ রহঃবৎহধঃরড়হধষ সধহ. মৎবধঃ. আমি চৎড়ঁফ, বুঝলেন। .... তবে কিনা একটা ঘটনায় আমি ভম্বহত হয়ে গিয়েছিলাম। স্বামী : ভম্বহত! ছেলে : খুব বেশি রকমের হতভম্ব আর কি। মানে ডবল হতভম্ব। নির্দেশক : এই, কোন ঘটনা? ছেলে : ওই যে সমুদ্রে... নির্দেশক : না, না, ওটা ঠিক নয়। স্বামী : (নির্দেশককে) আপনি থামুন তো। (ছেলেকে) বলো বলো। মনে হচ্ছে রহঃবৎবংঃরহম. ছেলে : ওই যে সমুদ্রে সেবার কয়েকটা ট্রলার ধরা পড়লো তখন বাবা বেশ কিছুদিন কোন ঠিকানা-ফিকানা না দিয়ে আমেরিকার যেয়ে ঐড়ষরফধু করে এলেন। স্বামী : ঠবৎু রহঃবৎবংঃরহম. ছেলে : ুবং ফেরার পথে আবার ওমরাহ হজ্ ও করে ফেললেন? ঐব রং ৎবধষষু মৎবধঃ. স্বামী : তা তুমিও আমেরিকায় চলে যাও। সেখানে যেয়ে লেখাপড়া শেষ করে.... ছেলে : ইচ্ছে তো ছিলো। কিন্তু টোয়েফেলটা খুব খারাপ সিস্টেম, বুঝলেন তাছাড়া ওখানে গেলে তো এতো সহজে কাঁচা পয়সা হাতে পাবো না। ওখানে তো খেটে খেতে হবে। আমাদের সোসাইটির ছেলেরা ওটা পারে না। স্বামী : দেশে অনেক সমস্যা আছে জানো? নির্দেশক : (খুবই বিরক্ত হয়ে) আপনি এসব কি শুরু করেছেন? স্বামী : আপনার নাটকের জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। (ছেলেকে ) দেশের সমস্যা সম্পর্কে খবর-টবর রাখো? ছেলে : ডবষষ, মাঝেমাঝে শুনে থাকি। মেয়ে : কেন, দেখেও থাকি। ওই যে হরতাল-ফরতাল হয়। তখন আমরা চুটিয়ে ভিসিআর দেখি। ছেলে : আমরা কেন করবো। তার জন্যে পুওর ক্লাসের লেকজন রয়েছে। (চলবে)
×