ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ সাখাওয়াত হোসেন

রাজনীতি ও নারী ভবিষ্যত বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ১১ নভেম্বর ২০১৬

রাজনীতি ও নারী ভবিষ্যত বাংলাদেশ

দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী, তাই সামগ্রিক উন্নয়ন তথা প্রতিনিধিত্বশীল উন্নয়নের জন্য নারীর অংশগ্রহণ অবশ্যম্ভাবী। উন্নয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিশেষভাবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ সৃষ্টির স্বার্থে প্রত্যেকটি উন্নয়নশীল এবং গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে নারীর অংশগ্রহণকে আরও জোরালো এবং সক্রিয় করে তুলতে হবে। আমাদের গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রতিক্রিয়াশীল সেক্টরের মধ্যে রাজনীতি অন্যতম কারণ রাজনীতির গতি প্রকৃতি এবং স্থিতিশীলতার মধ্যে দেশের ভবিষ্যত নির্ধারিত হয়ে থাকে। রাজনীতির মাধ্যমেই আমাদের অধিকাংশ উল্লেখযোগ্য অর্জন অর্জিত হয়েছে। মহান ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা, গণঅভ্যুত্থানসহ স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে সর্বশেষ সমুদ্র বিজয় অর্জন ও রাজনীতির ফসল। তাই এ সেক্টরে নারীদের অংশগ্রহণের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা সরকারসহ সংশ্লিষ্ট মহলের গুরুদায়িত্ব। তথাপি এখনও বাংলাদেশে নারীরা বৈষম্য, নির্যাতন, নিপীড়ন, অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। নারীর সমঅধিকারের বিষয়টি একটি আলোচিত ইস্যু হলেও সর্বক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ আশাব্যঞ্জক নয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে নারীর অংশগ্রহণের হতাশাব্যঞ্জক চিত্র সচেতন মহলকে ভাবনার উদ্রেক করে। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি সংসদে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী হলেও তৃণমূল পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণের চিত্র খুবই নগণ্য যা সচেতন মহলকে আশাহত করে তোলে। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোর স্থানীয় পর্যায়ের কমিটিতে নারীদের তেমনভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় না বা অংশগ্রহণের সুযোগ দেয় না। তুলনামূলক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, জাতীয় পর্যায়ে যে হারে নারীদের অংশগ্রহণ লক্ষণীয় ঠিক তেমনিভাবে স্থানীয় পর্যায়ের চিত্র ততটাই বেমানান। তবে বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের বাধ্যবাধকতার কারণে রাজনৈতিক দলগুলোতে নারীদের অংশগ্রহণ আমাদের আশাবাদী করে তোলে। বাংলাদেশের সংবিধানে নারীদের পুরুষের ন্যায় সমঅধিকার ও সমমর্যাদার কথা সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। সে বিবেচনা থেকেই নারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যেই ১ম সংসদ থেকেই নারীদের জন্য সংসদে সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। প্রথমাবস্থায় নারীরা সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি তথা অংশগ্রহণের জন্য যে রাজনৈতিক মেধা, মনন ও পরিবেশের দরকার ছিল সে রকম্ অবস্থায় ছিল না, কিন্তু বর্তমানে অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। ১৯৭৩ সালের ১ম সংসদে মাত্র ১৫ জন নারী সংসদ সদস্য ছিল, কিন্তু বর্তমানে সংসদে ৭১ জন নারী সংসদ সদস্য রয়েছে যার মধ্যে ২১ জন সরাসরি প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, পরিবর্তন ইতিবাচক কিন্তু সংসদে যেভাবে জনগণের আস্থার প্রতিদান দিতে হয় নারী সদস্যরা তা পারছেন কিনা তা যথেষ্ট প্রশ্নসাপেক্ষ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান সংসদে প্রধানমন্ত্রী, সংসদ উপনেতা, স্পীকার এবং বিরোধীদলীয় নেত্রীসহ ৪ জন মন্ত্রী নারী থাকা সত্ত্বেও সর্বশেষ পৌরসভা নির্বাচনে কেন্দ্র থেকে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে দেওয়া হলেও নারী প্রার্থীর সংখ্যা ছিল অতি নগণ্য। সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়ার সময়ও নারীর তুলনায় পুরুষের প্রাধান্য ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর চিত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামের ১০ জন সদস্যের মধ্যে ৩ জন নারী এবং দলটির সভাপতিও একজন নারী। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ১৭ জন যার মধ্যে নারী সদস্য মাত্র ১ জন, যদিও দলটির সভাপতি একজন নারী। অন্যদিকে বর্তমান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়ামের সদস্য ৩৯ জন, নারী সদস্য মাত্র ৪ জন। প্রত্যেকটি দল নারীর সমঅধিকারের কথা বললেও কমিটি প্রণয়নে নারীদের প্রাধান্য না দেওয়া হীনম্মন্যতার বহির্প্রকাশ ব্যতিরেকে কিছুই নয়। কারণ হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলো নারীদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে থাকে। এ নিয়ে পুরুষদের মধ্যে নানা রকমের কটূক্তি পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। যেমন নেতৃত্বযোগ্যতা নারীদের মধ্যে পুরুষের মতো দেখা যায় না, কিন্তু শীর্ষ দলগুলোতে নারীরাই মুখ্য ভূমিকা রাখছে। রাজনৈতিক দলগুলোর জেলা কমিটিতে নারী সদস্যদের অবস্থান নাজুক প্রকৃতির। যদিও মহিলা লীগ, মহিলা দল নামে তাদের কর্মপরিধিকে ছোট পরিসরে রাখা হয়েছে। কেননা একটু ভেবে দেখলেই বোঝা যায়, রাজনৈতিক দলের মূল দলে কখনও পুরুষ লীগ বা পুরুষ দল শব্দটি ব্যবহার করা হয় না। নারীদের খাটো করার প্রয়াসেই এ রকমের নামের মাধ্যমে তাদেরকে রাজনীতিতে যুক্ত করা হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল সমঅধিকারের কথা বলে মুখে খড়ি ফোটালেও দেখা যাচ্ছে কমিটিতে নারীদেরকে কতটা নাজুক অবস্থায় রেখে দিয়েছে। (চলবে)
×