ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আট মিশালি গাছপালা

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ১১ নভেম্বর ২০১৬

আট মিশালি গাছপালা

সবচেয়ে লম্বা গাছ বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা গাছটার নাম ‘হাইপেরিয়ন।’ গাছটির উচ্চতা ৩৭৯ ফিট! উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার রেডউড ন্যাশনাল এ্যান্ড স্টেট পার্ক এলাকায় রয়েছে এই গাছটি। এটি একটি কোস্ট রেডউড গাছ। ২০০৬ সালের ২৫ আগস্ট প্রকৃতিবিদ ক্রিস এ্যাটকিনস এবং মাইকেল টেইলর এই বিশাল লম্বা গাছটিকে খুঁজে পান। স্টিফেন সিলেট এর উচ্চতা মাপেন ১১৫.৫৫ মিটার বা ৩৭৯.৩ ফিট। প্রকৃতিবিদদের ধারণা, এই গাছটিতে প্রায় ৩৬০ কিউবিক মিটার (১৮,৬০০ কিউবিক ফিট) পরিমাণ কাঠ রয়েছে। গবেষকরা বলেন, কাঠঠোকরার জন্ম গাছটির উপরের অংশে ক্ষতি হওয়ায় এর উচ্চতায় বাধা পেয়েছে। সবচেয়ে বয়স্ক গাছ ওল্ড জিকো নামে একটি গাছ রয়েছে সুইডেনে। নরওয়েজিয়ান স্প্রুস জাতের এই গাছটিই বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক গাছ। এই গাছের বয়স ৯,৫৫৮ বছর! এই গাছের উচ্চতা ১৬ ফিট। সুইডেনের ডালারনার ফুলুফজালেট পর্বতে এর অবস্থান। এই গাছটিকে দেখে মোটেও বৃদ্ধ মনে হয় না। তার কারণ গাছটির কাণ্ড বহুবার মরে গিয়ে নতুন করে জন্মেছে। তবে এর শেকড় অন্তত ৯,৫০০ বছরের প্রাচীন হওয়ায় এটিকেই বিশ্বের সবচেয়ে বৃদ্ধ জীবিত গাছের মর্যাদা দেয়া হয়। গাছটাকে দেখে আপাত দৃষ্টিতে ক্রিসমাস ট্রি মনে হলেও এটা আসলে ক্রিসমাস ট্রি নয়। লেইফ কুলম্যান নামের একজন ভূতত্ত্ববিদ গাছটি খুঁজে পান। তিনি তার মৃত কুকুরের নাম অনুসারে এর নাম রাখেন ওল্ড জিকো। ভয়ঙ্কর গাছ গাছ দেখলে মনে অন্যরকম ভাললাগা কাজ করে। কিন্তু গাছ দেখে যদি ভয় পেতে হয়? অবাক হওয়ার কিছু নেই। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এমন কিছু গাছ আছে যেগুলো দেখলে আপনি ভয় পেতে বাধ্য হবেন। তেমনই একটা গাছ এ্যান্থ্রোপমরফিসম। যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনায় এই গাছের অবস্থান। গাছটার শেকড়গুলো মাটি ফুঁড়ে উপরে উঠে এসেছে। শক্ত আর মোটা শেকড়গুলো মিলে তৈরি করেছে কঙ্কালের মতো আকৃতি, যা দেখলে ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক। শোনা যায়, এই গাছের কারণে স্থানীয় মানুষ এড়িয়ে চলেন ওই এলাকা। মাথা নত করা গাছ গাছ কি মাথা নত করে? প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টিতে হয়ত নুয়ে পড়তে পারে, কিন্তু তাই বলে মাথা নত করে অভিবাদন জানাবে? হ্যাঁ, এমন গাছও আছে। এল আরবর ডি লা সাবিনা নামের এই গাছ আছে ক্যানারি আইল্যান্ডসে। গাছটা দেখে দুই রকম চিন্তা মাথায় আসতে পারে। প্রথমেই মনে হতে পারে, গাছটা মাথা নত করে অভিবাদন জানাচ্ছে, স্বাগতম জানাচ্ছে আপনাকে। আবার কারও কাছে মনে হয়, বাতাস বুঝি গাছটার আকৃতি দিয়েছে। যে যাই মনে করুক না কেন, গাছটা কিন্তু খুবই চমকপ্রদ। তাই শুধু ক্যানারি আইল্যান্ডে নয়, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এর নাম। কাণ্ড যার সবচেয়ে মোটা গাছটার নাম আরবর ডি টিউল বা ‘দ্য ট্রি অব টিউল’। এটি মন্টেজুমা সাইপ্রেস গোত্রের একটি গাছ। গাছটি রয়েছে ওয়াক্সাকায়। বিশ্বের সব গাছের মধ্যে সবচেয়ে মোটা কাণ্ডের অধিকারী এই গাছটি। ২০০১ সালে ইউনেস্কো গাছটিকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে। গাছটির কাণ্ড বা ডালপালা দেখা খুবই কঠিন। দেখে মনে হয় শুধুই সবুজে ঘেরা কোন অবয়ব। ২০০৫ সালে এর উচ্চতা মাপা হয় ৩৫.৪ মিটার। একই শেকড় থেকে একাধিক কাণ্ড তৈরি হয়ে গাছটিকে দিয়েছে সবচেয়ে মোটা কাণ্ডের মর্যাদা। দ্য ট্রি অব টিউলের বয়সও কিন্তু অনেক। ধারণা করা হয় এর বয়স ১২শ’ থেকে ৩ হাজার বছরের মধ্যে। আবার কেউ কেউ দাবি করে থাকেন এর বয়স ৬ হাজার বছর। গাছটিকে ট্রি অব লাইফ বা জীবনের গাছ বলেও ডাকা হয়। গাছের গায়ে গাড়ির পথ গাছটার নাম দ্য চ্যান্ডেলিয়ার ট্রি। ক্যালিফোর্নিয়ার লেগেটের ড্রাইভ থ্রু ট্রি পার্কে এই গাছের অবস্থান। এটি একটি কোস্ট রেডউড গাছ। এর উচ্চতা ২৭৬ ফিট। গাছটির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এর কাণ্ডের মধ্যখানে একটি বিশাল ফুটো আছে। সেই ফুটো এতই বড় যে সেটার ভেতর দিয়ে গাড়ি চলাচল করে। ৬ ফুট চওড়া এবং ৬ ফুট ৯ ইঞ্চি লম্বা এই ফুটো অবশ্য প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়নি, এটি মানুষেরই তৈরি। ক্যালিফোর্নিয়ার এই পার্কটি মূলত জনপ্রিয়তা পেয়েছে চ্যান্ডেলিয়ার ট্রির কারণেই। গাছের ভেতর দিয়ে গাড়ি চালানোর আকর্ষণই দর্শনার্থীদের এখানে টেনে আনে। গাছ যখন গোলাপি আকাশ এই অসম্ভব সুন্দর গাছটা রয়েছে জাপানে। তার বয়স ১৪৪ বছর। অথচ এখনও তার ভরা যৌবন। এই উইস্টেরিয়া গাছটাকে দেখলে আর কেউ এখান থেকে ফিরে আসতে চাইবে না। জাপানের জনপ্রিয় পার্ক আশিকাগা ফ্লাওয়ার পার্কে রয়েছে জাপানের সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে প্রাচীন এই উইস্টেরিয়া গাছ। গোলাপি-বেগুনে ফুল যখন ফুটে থাকে সারা গাছে, তখন এর নিচে দাঁড়ালে মনে হয় মাথার ওপরে বুঝি একটা গোলাপি রঙের আকাশ। এ জন্যই কেউ কেউ এই গাছকে গোলাপি আকাশ বলে ডাকেন। ১,৯৯০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে এই উইস্টেরিয়া গাছ। রংধনু গাছ এই গাছটির নাম রেইনবো ইউক্যালিপ্টাস। মূলত গাছের কাণ্ডে নানা রঙের খেলার কারণেই গাছটির এমন নামকরণ। নিউগিনি, নিউ ব্রিটেনসহ বিভিন্ন এলাকায় এই গাছ জন্মে। মূলত প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এমন বনেই রেইনবো ইউক্যালিপ্টাসের দেখা মেলে। গাছটির কাণ্ডের বাকলে নানা রঙের মিশ্রণ থাকে। সবুজ, লাল। হলুদসহ নানা রঙের মিশ্রণ থাকায় একে রংধনুর সঙ্গে তুলনা দেয়া হয়। এই রংধনু গাছটি ৬০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।
×