ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রেফতার ১

চাঁদাবাজি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে হত্যা করা হয় জিয়ারকান্দি ইউপি চেয়ারম্যানকে

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১১ নভেম্বর ২০১৬

চাঁদাবাজি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে হত্যা করা হয় জিয়ারকান্দি ইউপি চেয়ারম্যানকে

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা, ১০ নবেম্বর ॥ দাউদকান্দিতে গুলি করে ও কুপিয়ে তিতাসের জিয়ারকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মনির হোসেন ও তার সহযোগী মহিউদ্দিনকে হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামি বেলাল হোসেন ওরফে বাবুলকে বুধবার গভীর রাতে দাউদকান্দি থেকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। মামলার আসামি ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী রাসেল ওরফে টেপা রাসেল, জুলহাস ও নূর মোহাম্মদসহ অন্য আসামিদের ধরতে পুলিশের চিরুণী অভিযান অব্যাহত আছে। গৌরীপুরের সিএনজি স্টেশনের লাখ লাখ টাকার চাঁদাবাজি নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে জুলহাস বাহিনী এ হত্যাকা- সংঘটিত করেছে বলে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে আসছে। এছাড়া ঘটনার নেপথ্যে থেকে কারা কারা কলকাঠি নেড়েছে তাও খতিয়ে দেখছে তদন্তকারী সংস্থা ডিবি পুলিশ। জানা যায়, দাউদকান্দির গৌরীপুর বাজারে আধিপত্য বিস্তার, সিএনজি স্টেশন দখলসহ চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে তিতাসের জিয়ারকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মনির হোসেন ও তার সহযোগীদের সঙ্গে দাউদকান্দির দক্ষিণ পেন্নাই গ্রামের আবদুল মোতালেব মাস্টারের ছেলে জুলহাস বাহিনীর দীর্ঘদিন বিরোধ চলে আসছিল। ওই সিএনজি স্টেশন থেকে জুলহাস ও তার বাহিনী দীর্ঘদিন যাবত চাঁদা আদায় করে আসছিল। সম্প্রতি ইউপি চেয়ারম্যান মনির হোসেন তার বাহিনীর আলম নামে একজনকে দায়িত্ব দিয়ে চাঁদা উত্তোলন শুরু করে। এতে ক্ষিপ্ত হয় জুলহাস ও তার লোকজন। গ্রেফতারকৃত বেলাল হোসেন ওরফে বাবুল পুলিশকে জানায়, সে জুলহাসের একজন কর্মী। হত্যাকা-ের আগের দিন তারা বসে গোপন বৈঠক করে। তার দায়িত্ব ছিল রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে চেয়ারম্যান মনির হোসেনকে বহনকারী গাড়িটি থামিয়ে দেয়া। কিন্তু গুলি করে হত্যার বিষয়টি তার জানা ছিল না। প্রকাশ্য দিবালোকে লোমহর্ষক এ হত্যাকা-ের ঘটনায় নিহতের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ১৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত সাতজনকে আসামি করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির এসআই শাহ কামাল আকন্দ জানান, এ মামলার প্রধান আসামি জুলহাস, টেপা রাসেল, নূর মোহাম্মদসহ অন্যদের গ্রেফতার করতে সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহারসহ সাঁড়াশি অভিযান চালানো হচ্ছে। এ হত্যাকা-ের পেছনে গৌরীপুর সিএনজি স্টেশনের দখলসহ লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজির কারণ রয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। এছাড়া এর নেপথ্যে আরও অন্যান্য কারণসহ কারা কলকাঠি নেড়েছে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এরই মধ্যে ঘটনার সময় ওই নিহত চেয়ারম্যানের গাড়িতে যারা ছিলেন তারাসহ পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামি বাবুলকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীর জন্য বৃহস্পতিবার আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোঃ শাহ আবিদ হোসেন বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় হত্যাকা-ের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি বলেন, দাউদকান্দি ও তিতাসের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বর্তমানে পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে। ঘটনার পেছনে মাস্টারমাইন্ড কারা তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি আরও জানান, মামলার এজাহারনামীয় ১, ২, ৩নং আসামির বিরুদ্ধে ৪/৫টি করে মামলা রয়েছে। এদের মধ্যে ২নং আসামিসহ অন্যরা সদ্য জামিনে বেরিয়ে এসে এ ঘটনা ঘটায়। দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে এবং ঘটনার মূল রহস্য উদ্ঘাটন করা যাবে। প্রসঙ্গত, কুমিল্লার আদালতে একটি মামলায় হাজিরা দিতে যাওয়ার পথে মঙ্গলবার সকালে দাউদকান্দির গৌরীপুর এলাকায় তিতাসের জিয়ারকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মনির হোসেন ও কুপিয়ে মনির হোসেন ও তার সহযোগী মহিউদ্দিনকে হত্যা করে। এ ঘটনায় দাউদকান্দি থানায় মঙ্গলবার গভীর রাতে চেয়ারম্যানের স্ত্রী মামলা দায়ের করেন। পরদিন বুধবার মামলাটি জেলা ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়।
×