ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশের সব সদস্য প্রত্যাহার

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১১ নভেম্বর ২০১৬

চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশের সব সদস্য প্রত্যাহার

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ মানব পাচারের রুট হিসেবে অভিযুক্ত হওয়ার পর তদন্তে তা প্রমাণিত হওয়ায় চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের পুলিশের ইমিগ্রেশন বিভাগের সকলকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। নতুনভাবে স্পেশাল ব্রাঞ্চের ৮৩ সদস্যকে পদায়ন করা হয়েছে। যার নেতৃত্বে রয়েছেন একজন এসএস (পুলিশ সুপার)। এর আগে সিএমপির একজন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে ৬৪ পুলিশ সদস্যের একটি দল দায়িত্ব পালন করে আসছিল। সাম্প্রতিক সময়ে এই বিমানবন্দর দিয়ে গত তিনমাসে ভুয়া ভিসায় ৩৫ হাজারেরও বেশি আদম পাচারের ঘটনার অভিযোগ উঠে। গেল মাসে লিবিয়ায় পাচারকালে র‌্যাবের অভিযানে ধরা পড়ে ৩৯ জনের একটি দল। এ ঘটনা নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। র‌্যাব এবং পুলিশের মধ্যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত ঘটে। কেননা, ইমিগ্রেশন বিভাগে কর্মরত এডিসি থেকে শুরু করে সিপাহী পর্যন্ত সকলে অবৈধ অর্থের ভাগ গ্রহণ করত। ফলে আদম পাচারকারীদের একটি চক্র লিবিয়া এবং ইরাক হয়ে পাচারের জন্য চট্টগ্রাম বিমানবন্দরকে টার্গেট করে। পাচারকৃতদের প্রথমে দুবাইর ভুয়া ভিসা দিয়ে ভেড়ানো হয়। এরপর দুবাই হয়ে ইরাক বা লিবিয়ায় নেয়া হয়। সেখানে যারা সুবিধা করতে পারে তারা থেকে যায়। আর কেউ কেউ ইতালিতে প্রবেশের চেষ্টা চালায়। অনেকে সফলও হয়। এভাবে বিষয়টি একজন থেকে দু’জন হয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে সিলেট, রাজশাহী, বগুড়া, দিনাজপুর, রংপুরসহ বিভিন্ন জেলার লোকজনকে ফাঁদে ফেলে অগ্রিম মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে পাচার করার ঘটনা ঘটতে থাকে। সর্বশেষ গত বুধবার রাতেও র‌্যাবের অভিযানে ধরা পড়ে ইরাকগামী ৫ জন। উল্লেখ্য, এয়ার এরাবিয়া ও ফ্লাই দুবাই নামে দুটি এয়ারলাইন্সযোগে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে মানব পাচারের ঘটনা ঘটছে বলে পুলিশের তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গেল মাসে লিবিয়াগামী ৩৯ সদস্যের একটি দল ধরা পড়ার পর পত্রপত্রিকায় ব্যাপক প্রচার পায়। এ নিয়ে পুলিশের উচ্চপর্যায় তদন্তের উদ্যোগ নেয়। পুলিশ হেড কোয়ার্টারের অতিরিক্ত ডিআইজি আলমগীর কবিরের নেতৃত্বে তদন্ত করা হয়। এতে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। কারা লোক যোগাড় করে এবং কোন কোন এয়ারলাইন্স মানব পাচার কাজে জড়িত এবং বিমানবন্দরে কর্মরত পুলিশের ইমিগ্রেশন বিভাগের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা থেকে সিপাহী পর্যন্ত সকলেই মাথাপিছু অবৈধ অর্থের ভাগ পেয়ে থাকে। এ সংক্রান্তে বিস্তারিত রিপোর্ট পেশ করার পর পুলিশ হেড কোয়ার্টার থেকে ইমিগ্রেশন বিভাগের সকলকে সরিয়ে নিয়ে স্পেশাল ব্রাঞ্চের ওপর ইমিগ্রেশন বিভাগের কর্মকা- পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করার সিদ্ধান্ত প্রদান করা হয়। সে হিসেবে একজন এসএসের নেতৃত্বে ৮৩ জনের একটি টিম এ বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন কাজে নিয়োজিত থাকবে। যার নেতৃত্বে থাকছেন একজন এসএস। তিনি হলেনÑ শাহরিয়ার কবির। তার অধীনে একজন এডিসি ও দুইজন এসি ছাড়াও ইন্সপেক্টর, এসআই, এএসআই ও সিপাহী মিলে মোট সদস্যসংখ্যা থাকবে ৮৩ জন। বৃহস্পতিবার সকালে নতুন দল দায়িত্ব নিয়েছে। প্রথম পর্যায়ে এসেছে ৪৩ জন। এসএস শাহরিয়ার কবিরও দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তিনি ঢাকাস্থ স্পেশাল ব্রাঞ্চের হেড কোয়ার্টারের নির্দেশে পরিচালিত হবেন। এ ঘটনার আগে সিএমপির নির্দেশে চট্টগ্রাম বিমান বন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগ পরিচালিত হয়ে আসছিল। অবৈধ পথে ইরাকগামী ৫ জন আটক ॥ আবারও চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর দিয়ে অবৈধভাবে বিদেশ গমনের চেষ্টায় উদ্ধার করা হলো ৫ জনকে। কাতারগামী একটি ফ্লাইটের যাত্রী হিসেবে ইমিগ্রেশনের আগেই গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব সেভেনের অভিযান টিম তাদের চ্যালেঞ্জের মুখে র‌্যাব সেভেনের দফতরে নিয়ে যায়। বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই অভিযান চালানো হয়। উদ্ধারকৃতদের পতেঙ্গা থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। আজ আদালতে প্রেরণ করা হবে। র‌্যাব সেভেন সূত্রে জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চট্টগ্রামের শাহ্ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভিযান চালানো হয়। কাতারগামী এয়ার এরাবিয়া ফ্লাইট নং-জি-৯৫২২ (বিরতিহীন) এ অবৈধভাবে কাতার হয়ে ইরাক যাচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ দল। ইরাক গমনের প্রাক্কালে মুন্সীগঞ্জের আনন্দপুর এলাকার রহমান মোল্লার ছেলে তুহিন ইসলাম, তাফিজ ঢালীর ছেলে রাসেল ঢালী, শহীদুল্লাহ বেপারির ছেলে মোহাম্মদ রিপন ও তাফিজ তাঁতীর ছেলে মোহাম্মদ সোহাগ এবং নেত্রকোনার বারহাট্টা এলাকার গোপালপুরের সামছুদ্দিনের ছেলে সজীব আহমেদকে দালাল চক্র থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে পাসপোর্টসহ কাতারের ভিসা এবং তাদের প্রত্যেকের ব্যাগ তল্লাশি করে ইরাকের ৫টি ভিসা পাওয়া যায়। মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দালালের মাধ্যমে ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা চুক্তির মাধ্যমে ইরাক পাঠানোর চেষ্টা করে। ইরাক পৌঁছানোর পরে টাকা পরিশোধ করার চুক্তি হয়। উদ্ধারকৃত ভিকটিমদের জিজ্ঞাসাবাদে ঢাকা এবং মুন্সীগঞ্জের ৪ দালালের নাম উঠে আসে। এরা হলো- মুন্সীগঞ্জের সবুজ, সজিব আহমেদ ও মোঃ রবিউল, ঢাকার ফকিরাপুলের মোহাম্মদ জসিমের নাম জানিয়েছে ভিকটিমরা। এ বিষয়ে পতেঙ্গা থানার ওসি জনকণ্ঠকে জানান, ভিকটিমদের জিজ্ঞাসাবাদ করার পর আরও কিছু তথ্য পাওয়া যাবে। এদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের মাধ্যমে শুক্রবার আদালতে হাজির করা হবে। তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা দালালদের বেশকিছু তথ্য দিয়েছে।
×