ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পরিবার কল্যাণ সেবা ও প্রচার সপ্তাহ কাল শুরু

গর্ভকালীন সেবা গ্রহণের হার ৪৩ ভাগ থেকে ৫৮ শতাংশ হয়েছে

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১১ নভেম্বর ২০১৬

গর্ভকালীন সেবা গ্রহণের হার ৪৩ ভাগ থেকে ৫৮ শতাংশ হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশব্যাপী কাল শনিবার থেকে পরিবারকল্যাণ সেবা ও প্রচার সপ্তাহ উদযাপন করবে সরকার। এবার সপ্তাহের প্রতিপাদ্য ‘সেবার মান বৃদ্ধি করি, সবার প্রত্যাশা পূরণ করি।’ সেবা ও প্রচার সপ্তাহে পরিবার পরিকল্পনা, মা-শিশু স্বাস্থ্য, বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্যসেবা আরও জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য করে তোলা হবে। সেই সঙ্গে এ সময় মানুষ গুণগত সেবা গ্রহণ করে উপকৃত হবে। গর্ভকালীন সেবা গ্রহণের হার ২০১১ সালের তুলনায় ৪৩ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৫৮ শতাংশ হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক ও দক্ষ সেবাদানকর্মী দ্বারা প্রসবের হার বেড়ে প্রায় ৩৭ শতাংশ হয়েছে। শিশু মৃত্যু হ্রাসেও উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে। প্রতি ১ হাজার জীবিত জন্মে নবজাতকের মৃত্যুর হার ৩২ থেকে ২৮, এক বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যু হার ৪৩ থেকে ৩৮ এবং ৫ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যু হার ৫৩ থেকে ৪৬ এ হ্রাস পেয়েছে। অপূর্ণ চাহিদা হ্রাস পেয়ে ১৪ থেকে ১২তে এসেছে। আর ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী মায়েদের ক্ষেত্রে সন্তান গ্রহণ প্রবণতা অর্থাৎ কিশোরী বয়সে মাতৃত্বও উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। পরিবার কল্যাণসেবা ও প্রচার সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষে সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ তথ্য জানান। এ সময় স্বাস্থ্য সচিব মোঃ সিরাজুল ইসলামসহ মন্ত্রণালয় ও পরিবার কল্যাণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর পরিবার পরিকল্পনা, মা ও শিশুস্বাস্থ্য, কিশোর-কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য, প্রজনন স্বাস্থ্য, নিরাপদ মাতৃত্বÑ এ সকল কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে বিগত ছয় দশক ধরে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এ ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালের মধ্যে এইচপিএনএসডিপি’র লক্ষ্যমাত্রা এবং রূপকল্প ২০২১ পূরণের লক্ষ্যে অধিদফতর থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। দেশের সকল সক্ষম দম্পতিদের যদি পরিবার পরিকল্পনা, মা-শিশু-কৈশোরকালীন স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য ও সেবা প্রাপ্তির সহজ সুযোগ সৃষ্টি করা যায়, তবে কর্মসূচীতে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জসমূহ অনেকাংশেই উত্তরণ করা সম্ভব। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের আইইএম ইউনিট ইউএনএফপিএ’র আর্থিক সহায়তায় প্রতিবছর দু’বার দেশব্যাপী সেবা ও প্রচার সপ্তাহ উদযাপন করে থাকে। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের অগ্রগতি সারা বিশ্বে প্রশংসা অর্জন করেছে। মহিলা প্রতি গড় সন্তান সংখ্যা, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার বর্তমান সরকারের শাসনামলে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। তাই, শুধু সংখ্যাগত অর্জনের উপর গুরুত্ব না দিয়ে এখন গুণগত ও মানসম্মত সেবা প্রদানের নিশ্চয়তা দেয়ার লক্ষ্যে এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রাপ্ত সম্পদের সদ্ব্যবহার করে এবং কাজের পুনরাবৃত্তি না ঘটিয়ে সহজে গ্রহীতার চাহিদা ও প্রত্যাশা পূরণ করাকে স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে মান বা কোয়ালিটির সংজ্ঞা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কোন কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন না হলে তা আবার করতে হয় এবং এর জন্য অতিরিক্ত সময়, শ্রম, অর্থ অপচয় হয়। আবার সেবার মান খারাপ হলে গ্রহীতা পরবর্তীতে সেই সেবা গ্রহণ থেকে বিরত থাকেন। এজন্য সেবাপ্রদানকারী এবং সেবাকেন্দ্র উভয় ক্ষেত্রেই মানের ক্রমাগত উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরী। সেবাকেন্দ্রে গ্রহীতার যেমন মানসম্পন্ন সেবা পাওয়ার অধিকার আছে, সেবাদানকারীরও সেবা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় চাহিদা ও সহায়তা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। মানসম্পন্ন সেবা প্রদানের জন্য অবশ্যই গ্রহীতার অধিকারসমূহ নিশ্চিত করতে হবে। তাই জনগণকে তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী সেবা প্রদান এবং সেবা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা এবং সেবা প্রদানে প্রতিটি কর্মীকে আরও বেশি আন্তরিক হতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, প্রজনন স্বাস্থ্য এবং কিশোর-কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য সেবা দেয়াও পরিবার পরিকল্পনাধীন সেবাকন্দ্রসমূহের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ইতোমধ্যে প্রায় ১শ’টি সেবাকেন্দ্রকে কিশোর-কিশোরী বান্ধব করা সম্ভব হয়েছে। কিশোর-কিশোরীদের যে কোন স্বাস্থ্য সমস্যা ও প্রতিকারের জন্য রয়েছে ওয়েবসাইট (), যেখানে প্রত্যেকে গোপনীয়তার সঙ্গে যে কোন প্রশ্নের উত্তর পেতে পারে সহজেই। প্রায় ২ হাজার ২শ’টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সপ্তাহে ৭ দিন সার্বক্ষণিক নরমাল প্রসব সেবা দেবার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে সেবাকেন্দ্রের এ সংখ্যা আরও বৃদ্ধির প্রয়াস রয়েছে। সেবা ও প্রচার সপ্তাহের প্রতিপাদ্যের ওপর ভিত্তি করে এবার ফোল্ডার, ব্যানার, পোস্টার, লিফলেট তৈরি ও মাঠপর্যায়ে সরবরাহ করা হয়েছে। সংবাদপত্র, টিভি ও বেতারে বিশেষ আলোচনা সভা, মাঠ পর্যায়ে প্রচারণামূলক চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য-উভয় অধিদফতরের মহাপরিচালকদ্বয়ের যৌথ স্বাক্ষরে একটি নির্দেশনামূলক পত্র মাঠ পর্যায়ে প্রেরণ করা হয়েছে যাতে স্বাস্থ্য বিভাগের মাঠকর্মীরা পরিবার পরিকল্পনার মাঠকর্মীদের সঙ্গে একযোগে দায়িত্ব পালন করতে উদ্বুদ্ধ হন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৩.১ মিলিয়ন (৩১ লাখ) প্রসব সংগঠিত হয়, যার প্রায় ৩৭.৪ শতাংশ (১১লাখ) প্রসব হয় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে। প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের পরপরই মাকে যদি প্রসব পরবর্তী পরিবার পরিকল্পনার আওতায় আনা যায় তাহলে একদিকে যেমন অনিচ্ছাকৃত ও পুনরায় গর্ভধারণ এড়ানো সম্ভব তেমনি দীর্ঘ মেয়াদী ও স্থায়ী পদ্ধতি বিশেষ করে টিউবেকটমি ও আইইউডি গ্রহীতা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করা সম্ভব। সক্ষম দম্পতিদের ক্ষেত্রে দু’সন্তানের মাঝে ন্যূনতম (৩ বছর) বিরতি এবং ২টি জীবিত সন্তানের ক্ষেত্রে দ্বিতীয়টির বয়স কমপক্ষে ১ বছর হলে স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করাই এবারের সেবা ও প্রচার সপ্তাহের মূল লক্ষ্য। পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির গ্রহীতা বৃদ্ধি মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাসে সরাসরি প্রভাব রাখতে সক্ষম। প্রসবের পর প্রথম ১২ মাসের মধ্যে অনিচ্ছাকৃত ও স্বল্প বিরতিতে পুনরায় গর্ভধারণ হতে বিরত থাকাই হলো প্রসব পরবর্তী পরিবার পরিকল্পনা। এর কৌশলগত দিক হলো-প্রসবের পর উপযুক্ত পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণ অথবা দুটি সন্তান জন্মদানের মধ্যবর্তী সময়ে একজন নারীর ইচ্ছানুযায়ী প্রয়োজনীয় বিরতি প্রদান (কমপক্ষে ৩ বছর) অথবা সন্তান জন্মদানে সীমিতকরণ। এতে জাতীয় জনসংখ্যা নীতি-২০১২ এবং এইচপিএনএসডিপি-এর লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সিপিআর ৭২ শতাংশে উন্নীত এবং টিএফআর ২.১ অর্জন করার পথ সহজতর হবে।
×