স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষাবর্ষে ভর্তির আবেদন ফরম পূরণ শুরু হবে ১ ডিসেম্বর থেকে। অনলাইনে এ আবেদন প্রক্রিয়া চলবে ১২ ডিসেম্বর রাত বারোটা পর্যন্ত। রাজধানীর ৩৫ সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য তিন গ্রুপে পর্যায়ক্রমে ১৭, ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর লিখিত পরীক্ষা হবে। আর প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির লটারি ড্র হবে ২৪ ডিসেম্বর। পঁয়ত্রিশটির মধ্যে প্রথম শ্রেণী আছে ১৪ বিদ্যালয়ে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক এলিয়াছ হোসেন বৃহস্পতিবার ভর্তির এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, রাজধানীর ৩৫ সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন ফরম অনলাইনে বিতরণ শুরু হবে ৩০ নবেম্বর রাত বারোটা এক মিনিটে। অনলাইনে এ আবেদন বিতরণ ও জমার কাজ চলবে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রতি আবেদন ফরমের মূল্য ১৫০ টাকা।
মাউশির উপ-পরিচালক একেএম মোস্তফা কামাল জানান, ৩০ নবেম্বর রাত বারোটা এক মিনিট থেকে অনলাইনে আবেদন শুরু হচ্ছে। সে হিসাবে তা মূলত ১ ডিসেম্বর থেকেই। সরকারী এ স্কুলগুলোকে প্রতি বছরের মতো তিন গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। ‘ক’ ‘খ’ ও ‘গ’। পর্যায়ক্রমে এসব প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে ১৭, ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর। ১৭ ডিসেম্বর ‘ক’, ১৮ ডিসেম্বর ‘খ’ ও ১৯ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে ‘গ’ গ্রুপের স্কুলগুলোর ভর্তি পরীক্ষা। এছাড়া যে ১৪ বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণী আছে তার ভর্তির লটারি হবে ২৪ ডিসেম্বর। ঢাকার সব সরকারী বিদ্যালয়কে তিনটি গুচ্ছ করে দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে। এছাড়া দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীতে গত বছরের মতোই ৫০ নম্বরের এক ঘণ্টার ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে। চতুর্থ থেকে অষ্টম শ্রেণীতে ১০০ নম্বরের ২ ঘণ্টার পরীক্ষা নেয়া হবে।
জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে নবম শ্রেণীতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীতে বাংলা ১৫, ইংরেজী ১৫ ও গণিতে ২০ নম্বর করে মোট ৫০ নম্বরের এক ঘণ্টার এবং অন্যান্য শ্রেণীতে বাংলা ৩০, ইংরেজী ৩০ ও গণিতে ৪০ নম্বর করে মোট ১০০ নম্বরের ২ ঘণ্টার পরীক্ষা নেয়া হবে। তিনি আরও জানান, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দেশের সব সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এবার টেলিটক মোবাইল ফোনে অনলাইনে ভর্তির আবেদন নেয়া হবে। তবে যেসব উপজেলার স্কুলে বিদ্যুত ও ইন্টারনেট সেবা পর্যাপ্ত নয়, সেসব প্রতিষ্ঠানে পরিচালনা পর্যদ সিদ্ধান্ত নিয়ে বিকল্প পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে।
ভর্তি নীতিমালা ॥ ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী গত বছরের মতো এবারও ঢাকা মহানগরীর সরকারী ও বেসরকারী স্কুলে ভর্তিতে নিজ নিজ এলাকার জন্য ৪০ শতাংশ কোটা বরাদ্দ থাকবে। অবশিষ্ট আসন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। সরকারী স্কুলের ক্যাচমেন্ট এরিয়া নির্ধারণ করে দেবে মাউশি। এছাড়া ৪০ শতাংশ এলাকা কোটার বাইরেও এবার ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ২ শতাংশ প্রতিবন্ধী, এক শতাংশ লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের শিশু ও দুই শতাংশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সন্তানদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। বাকি ৫০ শতাংশ আসনে সব শিশুই আবেদন করতে পারবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একই ক্যাচমেন্ট এলাকায় থাকলে শিক্ষার্থীরা উভয় প্রতিষ্ঠানেই ভর্তির আবেদন করতে পারবে। পরিচালনা পর্যদের সহায়তা নিয়ে ঢাকা মহানগরীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের স্কুলের ক্যাচমেন্ট এরিয়া নির্ধারণ করতে বলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নীতিমালা অনুযায়ী, ক্যাচমেন্ট এলাকা নির্ধারণে একাধিক স্কুলের মধ্যে জটিলতা দেখা দিলে থানা/উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তার সমাধান করবেন। ক্যাচমেন্ট এলাকা নির্ধারণে কোন এলাকা যেন বাদ না পড়ে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে উল্লেখ করে নীতিমালায় বলা হয়েছেÑ ক্যাচমেন্ট এলাকা নিয়ে থানা/উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার আদেশে কেউ অসন্তুষ্ট হলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে আবেদন করা যাবে।
এক্ষেত্রে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার আদেশই চূড়ান্ত। স্কুলে ভর্তি বিজ্ঞপ্তির তারিখে শিক্ষার্থী যে এলাকায় বসবাস করবে সেই এলাকায়ই তার ক্যাচমেন্ট এরিয়া হিসেবে বিবেচিত হবে। নীতিমালা অনুযায়ী প্রথম শ্রেণীতে অবশ্যই লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী নির্বাচন করতে হবে। লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের তালিকা ছাড়াও অপেক্ষমাণ তালিকা করতে হবে। নির্বাচিত শিক্ষার্থী নির্ধারিত তারিখের মধ্যে ভর্তি না হলে এ অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
দ্বিতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণীর শূন্য আসনে লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাক্রম অনুসারে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী বাছাই করতে হবে। আর নবম শ্রেণীতে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে হবে জেএসসি-জেডিসির ফলের ভিত্তিতে। প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির জন্য শিশুর বয়স কমপক্ষে ছয় বছর হতে হবে। এই বয়স যাচাইয়ে ভর্তির আবেদন ফরমের সঙ্গে জন্ম নিবন্ধন সনদের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে।
ভর্তি কমিটি ॥ শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগে সারাদেশে কমিটি যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে পরিচালনা কমিটির সভা আহ্বান করে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ও সময় নির্ধারণ করবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়। ঢাকা মহানগরীর ভর্তি কমিটির প্রধান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক। এছাড়া জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমিটির প্রধান হবেন।
রাজধানীতে প্রথম শ্রেণী থাকা ১৪ সরকারী স্কুল ॥ ঢাকা মহানগরীর ১৪টি সরকারী মাধ্যমিক স্কুলে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির লটারি হবে আগামী ২৪ ডিসেম্বর। প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির জন্য লটারি হওয়া স্কুলগুলো হচ্ছেÑ গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুল, আজিমপুর গার্লস স্কুল, ধানমন্ডি বয়েজ হাই স্কুল, মতিঝিল বালক উচ্চ বিদ্যালয়, শেরেবাংলা নগর সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়, শেরেবাংলা নগর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সংযুক্ত বিজ্ঞান হাই স্কুল, নারিন্দা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, মোহাম্মদপুর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, তেজগাঁও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, তেজগাঁও বালক উচ্চ বিদ্যালয়, খিলগাঁও গবর্নমেন্ট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় এবং বাংলাবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়।
