ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়

রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদা ক্রমে সচিবের মর্যাদায় জেলা জজ

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১১ নভেম্বর ২০১৬

রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদা ক্রমে সচিবের মর্যাদায় জেলা জজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদার ক্রম (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স) তালিকা বাতিল সংক্রান্ত আপীলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পদক্রমে (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স) জেলা জজরা সাংবিধানিক পদমর্যাদাসম্পন্ন বিবেচনায় সরকারের সচিবদের সঙ্গে ১৬ নম্বর ক্রমিকের মর্যাদায় অবস্থান করবেন। অর্থাৎ সচিবের মর্যাদা পাবেন জেলা জজগণ। বর্তমানে তারা জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে ২৪ ক্রমিকে আছেন। ৬২ পৃষ্ঠার রায়টি সুপ্রীমকোর্টের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপীল নিষ্পত্তি করে সাবেক প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট বেঞ্চ ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি এ রায় দিয়েছিল। তার নেতৃত্বাধীন আপীল বিভাগের বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি এস কে সিনহা (বর্তমান প্রধান বিচারপতি), বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহাব মিয়া, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন আহমেদ চৌধুরী মানিক। রায় প্রকাশের পর অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা বলেছেন, রায় পুরোপুরি পর্যালোচনা, যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে রিভিউয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। রায়ে বলা হয়েছে, সংবিধান যেহেতু রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন, সেহেতু রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রমের শুরুতেই সাংবিধানিক পদাধিকারীদের গুরুত্ব অনুসারে রাখতে হবে। জেলা জজ ও সমমর্যাদার বিচার বিভাগীয় সদস্যরা রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রমের ২৪ নম্বর থেকে ১৬ নম্বরে সরকারের সচিবদের সমমর্যাদায় উন্নীত হবেন। অতিরিক্ত জেলা জজ ও সমমর্যাদার বিচার বিভাগীয় সদস্যদের অবস্থান হবে জেলা জজদের ঠিক পরেই, রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রমের ১৭ নম্বরে। রায়ে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম কেবল রাষ্ট্রীয় আচার-অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে। নীতি নির্ধারণী ক্ষেত্র বা অন্য কোন কার্যক্রমে যেন এর ব্যবহার না হয়। ১৯৮৬ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৬ সালে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মোঃ আতাউর রহমান একটি রিট আবেদন করেন। এ প্রেক্ষিতে ওই সময় জেলা জজদের পদমর্যাদা সচিবদের নিচে দেখানো কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল দেয় হাইকোর্ট। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি দেয়া রায়ে আটটি নির্দেশনা দেয়া হয়। সে অনুসারে নতুন তালিকা তৈরি করতে সরকারকে ৬০ দিন সময় বেঁধে দেয়া হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপীলের আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। আদালত তা মঞ্জুর করে রাষ্ট্রপক্ষকে আপীলের সুযোগ দেয়। নিষ্পত্তির পর ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি আপীল বিভাগের ওয়েবসাইটে বলা হয়, সংশোধন, পরিমার্জন ও পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করা হলো। ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ হওয়ার পর অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়টি মোডিফাই করে আপীল বিভাগের প্রকাশিত রায় দেয়া হয়েছে।’ তিনি জানান, পূর্ণাঙ্গ রায়ে রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রমে নতুন কয়েকটি বিষয় সংযোজন করা হয়েছে। একুশে ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত, বীরউত্তম খেতাবপ্রাপ্তদের ‘যথাযথ সম্মান’ দিতে বলা হয়েছে। ‘আরেকটা বিষয় বলা হয়েছে, যারা সাংবিধানিক পদাধিকারী, তাদের যেন অগ্রাধিকার দেয়া হয় অন্যান্য পদের উপরে।’ রাষ্ট্রপক্ষ আপীল বিভাগের এ রায়ের রিভিউ চাইবে কি-না জানতে চাইলে অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘রায় পুরোপুরি পর্যালোচনা, যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে রিভিউয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’ আপীল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলার শুনানি করেছিলেন আইনজীবী আব্দুর রব চৌধুরী। হাইকোর্টে রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও মোঃ আসাদুজ্জামান।
×