ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রিজার্ভ চুরির ৭ কোটি ডলার শনাক্ত, সব টাকা প্রাপ্তির আশা

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১১ নভেম্বর ২০১৬

রিজার্ভ চুরির ৭ কোটি ডলার শনাক্ত, সব টাকা প্রাপ্তির আশা

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ‘টাকা উদ্ধারের’ দায়িত্ব পাওয়া আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি বলেছেন, রিজার্ভ চুরির ৮১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে প্রায় ৭০ মিলিয়ন ডলার শনাক্ত করা হয়েছে। বাকি টাকা শনাক্ত করার মধ্য দিয়ে পুরো অর্থ শীঘ্রই পাওয়ার আশা করছেন এই আইনজীবী। এজন্য আপাতত কোন ধরনের মামলার কথা ভাবছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে অর্থ উদ্ধার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হলে বা আগামী বছরের ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পুরো অর্থ ফেরত পাওয়া না গেলে সবার বিরুদ্ধেই আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান আজমালুল হোসেন কিউসি। বৃহস্পতিবার সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে আলোচনা শেষে জনকণ্ঠকে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, রিজার্ভ চুরির অর্থ উদ্ধার প্রক্রিয়ার সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নামে সুইফট (সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ইন্টার ব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন) মেসেজিং সিস্টেমে যাওয়া ‘ভুয়া’ অনুরোধ পাওয়ার পর গত ৪ ফেব্রুয়ারি ১০ কোটি ডলার ফিলিপিন্স ও শ্রীলঙ্কার দুটি ব্যাংকে স্থানান্তর করে ফেডারেল রিজার্ভ। বানান ভুলের কারণে শ্রীলঙ্কার ২ কোটি ডলার চুরি ঠেকানো গেলেও ফিলিপিন্সে যাওয়া আট কোটি ১০ লাখ ডলার স্থানীয় মুদ্রায় রূপান্তরিত হয়ে পাচার হয়ে যায়। এ ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন দেয়, যাতে অর্থ স্থানান্তরের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর কর্তব্যে অবহেলা ছিল বলে উল্লেখ করা হয়। এরপর ‘প্রয়োজনে’ মামলা করার প্রস্তুতি নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ২৩ মার্চ আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসিকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির সর্বশেষ অবস্থা জানাতে বৃহস্পতিবার সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি এবং বাংলাদেশ ব্যাংক গবর্নর ফজলে কবির। বৈঠক শেষে আজমালুল হোসেন কিউসি জনকণ্ঠকে বলেন, ৮১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে প্রায় ৭০ মিলিয়ন ডলার শনাক্ত করা হয়েছে। বাকি অর্থ খুব শীঘ্রই শনাক্ত করা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন। এসব অর্থ ফিলিপিন্সের ক্যাসিনো ও মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান ফিলরেমের কাছে রয়েছে। তবে এসব অর্থ দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক জব্দ করেছে। মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখনও কারও বিরুদ্ধে মামলা করিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ফিলিপিন্সের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস আদালতে মামলা করেছে। আইনী প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই ১৫ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলার ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। তিনি বলেন, বাকি অর্থ উদ্ধারে ফিলিপিন্স সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এদিকে নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থের উদ্ধার হওয়া অংশ ফিরিয়ে আনতে সম্প্রতি ফিলিপিন্সে গেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। রিজার্ভ চুরির বিষয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের বিরুদ্ধে কোন মামলা করা হবে কিনা, জানতে চাইলে আজমালুল হোসেন বলেন, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের অনেক দুর্বলতা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক তাদের দোষ স্বীকার করেছে। কেননা চুক্তি অনুসারে ফেডারেল রিজার্ভ কেবল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে বাংলাদেশের সঞ্চিত অর্থ স্থানান্তর করতে পারে। কিন্তু তারা অন্যজনের নির্দেশনা পেয়ে অর্থ ছাড় করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা পেয়ে সেটা করেনি। এটাই তো অনেক বড় স্বীকারোক্তি। যদিও রিজার্ভ চুরির পর অর্থ উদ্ধারে ফেড আমাদের অনেক সহযোগিতা করছে। ওদের বিরুদ্ধে মামলা করার আপাতত প্রয়োজন হবে না। তবে পুরো টাকা উদ্ধার করার পর ফৌজদারি মামলা করা যায় কিনা, সে বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা হবে। তিনি আরও বলেন, অর্থ উদ্ধার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হলে বা আগামী বছরের ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পুরো অর্থ ফেরত পাওয়া না গেলে সবার বিরুদ্ধেই আইনগত ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া রিজার্ভ চুরির ঘটনায় তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি মামলা করতে পারে। সেটি তাদের বিষয়।
×