ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জঙ্গী তৎপরতায় নিখোঁজ ২৬ যুবকের জড়ানোর সন্দেহ ঘনীভূত

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১১ নভেম্বর ২০১৬

জঙ্গী তৎপরতায় নিখোঁজ ২৬ যুবকের  জড়ানোর সন্দেহ ঘনীভূত

শংকর কুমার দে ॥ র‌্যাবের নিখোঁজ তালিকায় জঙ্গী সন্দেহভাজন বিত্তবান ঘরের উচ্চ শিক্ষিত সন্তান পরিচিত ২৬ যুবক এখনও হদিস নেই। দীর্ঘ ৫ মাস ধরে তারা নিখোঁজ থাকলেও কে কোথায় আছে তা কারও জানা নেই। এর মধ্যে অনেককেই বাড়িতে ফিরে আসার জন্য গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হলেও বাড়িতে ফিরে আসেনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছেও নিখোঁজ এসব যুবক উগ্রপন্থায় জড়িয়ে পড়েছে কিনা তাও রহস্যাবৃত। র‌্যাব সূত্রে এ খবর জানা গেছে। র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাই মাসে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলায় বিত্তবান ঘরের উচ্চ শিক্ষিত সন্তানদের জঙ্গী গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার পর যারা নিখোঁজ রয়েছে তাদের খোঁজ পড়ে। দেশব্যাপী তালিকাও প্রস্তুত করা হয়। এর মধ্যে ধরিয়ে দেয়ার জন্য অনেকের জন্য পুরস্কার ঘোষণাও করা হয়। অনেকের বিরুদ্ধে উগ্রপন্থায় জড়িয়ে পড়ার সন্দেহ করা হয়। পরিবারের পক্ষ থেকেও থানায় জিডি করা হয়। এসব নিখোঁজ যুবকদের দীর্ঘ ৫ মাসেও হদিস না মেলায় উগ্রপন্থায় জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। গোয়েন্দা সূত্র জানান, নিখোঁজ তালিকাভুক্ত চিকিৎসক, প্রকৌশলী ও শিক্ষকসহ উচ্চ শিক্ষিত কয়েকজন জঙ্গী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েছেন বলে আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। তাদের কারও কারও ব্যাপারে বিভিন্ন দেশ থেকে কিছু তথ্য মিলেছে। মেধাবী এই যুবকরা মগজ ধোলাইয়ের শিকার হয়ে বিপথগামী হয়েছেন। তাদের জঙ্গীবাদ বিস্তারে কাজে লাগানো হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যেসব নিখোঁজ যুবক উগ্রপন্থায় বা জঙ্গী গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছে ঢাকার তেহজীব করিম, ধানম-ির জুনুন শিকদার, নিকেতনের ডাঃ আরাফাত হোসেন তুষার, বনানী ডিওএইচএসের তাওসীফ হোসেন, ধানম-ির জুবায়েদুর রহিম, গুলশানের শেহজাদ রউফ ওরফে অর্ক, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সাজ্জাদ রউফ (নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক), সাবেক নির্বাচন কমিশনার শফিউর রহমানের ছেলে তাহমিদ রহমান সাফি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাইফুল্লাহ ওজাকি, বাড্ডার জুনায়েদ খান, তেজগাঁওয়ের বাসারুজ্জামান, নিউ ইস্কাটনের ইব্রাহিম হাসান খান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মেরিন ইঞ্জিনিয়ার নজিবুল্লাহ আনসারী ও ফেনীর রেদোওয়ানুল আজাদ রানা, লক্ষ্মীপুরের এটিএম তাজউদ্দিন। র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, নিখোঁজের তালিকায় থাকা চট্টগ্রামের মেরিন ইঞ্জিনিয়ার নজিবুল্লাহ আনসারী, জাপান প্রবাসী শিক্ষক সাইফুল্লাহ ওজাকি, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আবু তারেক মোহাম্মদ তাজউদ্দিন কাওসার, চট্টগ্রামের চন্দনাইশের শিক্ষার্থী আসিফ আদনান, ঢাকার বেসরকারী চাকরিজীবী মোহাম্মদ বাসারুজ্জামানসহ আরও কয়েকজন জঙ্গী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে নজিবুল্লাহ আনসারী ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে ফেসবুক বার্তায় ভাইকে জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিয়েছে বলে জানিয়েছে। জাপানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইফুল্লাহ ওজাকিও বিদেশে জঙ্গী সংগঠনের তৎপরতায় যুক্ত আছে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০১৩ সালের পর থেকে নিখোঁজ আবু তারেক মোহাম্মদ তাজউদ্দিন কাওসারও জঙ্গী তৎপরতার জন্য দেশের বাইরে অবস্থান করছে এমন তথ্য পাচ্ছে গোয়েন্দারা। আসিফ আদনানকে ২০১৪ সালে ঢাকায় জঙ্গী তৎপরতার অভিযোগে গ্রেফতার করা হলে জামিনে বেরিয়ে তিনি ফের একই রকম কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া ঢাকার আদাবরের পাইলট মাহমুদুল আহসান রাতুলকে ঘিরেও সন্দেহ করছে গোয়েন্দারা। র‌্যাব সূত্র জানান, র‌্যাবে যে পাঁচ মাস আগে নিখোঁজের তালিকা তৈরি করেছে তার মধ্যে অন্তত ২৬ জনের উগ্রপন্থায় জঙ্গীগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকার তথ্য ও পাচ্ছে। গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার পর সারাদেশ থেকে রহস্যজনক নিখোঁজদের একটি তালিকা প্রকাশ করে র‌্যাব। সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে নিখোঁজদের ব্যাপারে বিস্তারিত খোঁজ-খবর নিয়ে ঢাকায় প্রতিবেদন পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়। র‌্যাবও নিখোঁজদের ব্যাপারে বিশদভাবে তথ্য সংগ্রহ করেছে। প্রাপ্ত প্রতিবেদনে ২৬ জন জঙ্গী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ার তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেলেও অন্যদের ব্যাপারে তদন্ত চলছে বলে জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, উগ্রপন্থায় বা জঙ্গীগোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িয়ে পড়া নিখোঁজ সন্দেহভাজনরা কে কোথায় রয়েছে, কী করছে, জঙ্গী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েছে কি-না সবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রবাসে কেউ জঙ্গীবাদে সম্পৃক্ত হলে তাদের বিষয়েও খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। ভারতে পলাতক জেএমবি নেতা সালাউদ্দিন ওরফে সালেহীন, বোমা মিজান এবং মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজসহ কয়েকজনকে ধরতে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে বলে জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
×