ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রবাসীদের মধ্যে অবশ্য দুশ্চিন্তা বেড়েছে

ট্রাম্পের বিজয়ে দুই দেশের সম্পর্কে পরিবর্তন হবে না

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১১ নভেম্বর ২০১৬

ট্রাম্পের বিজয়ে দুই দেশের সম্পর্কে পরিবর্তন হবে না

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দেশটির নীতিতে তেমন কোন পরিবর্তন আসবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটও নির্বাচনের আগেই এমন কথা বলেছিলেন। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় সেখানে প্রবাসীদের মধ্যে দুশ্চিন্তা বেড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরেই বিশ্বনেতাদের মধ্যে প্রথম যারা ট্রাম্পকে স্বাগত জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যতম। সেই অভিনন্দনবার্তায় ট্রাম্পের নেতৃত্বগুণের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, আগামীতে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে তিনি আশা করছেন। নির্বাচনের আগের দিন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেছিলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকার পরিবর্তন হলেও বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কের কোন পরিবর্তন হবে না। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আগামী দিনে আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন মনে করছেন, ট্রাম্প ওভাল অফিসের দায়িত্ব নেয়ায় বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির খুব একটা হেরফের হবে না। তিনি বলেছেন, আসলে পররাষ্ট্রনীতি রাতারাতি বদলে যায় না। এতে সময় লাগে। আর বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ এমন কোন পক্ষ নয় যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক স্বার্থ জড়িত। তিনি বলেন, ট্রাম্প মেক্সিকো সীমান্ত বরাবর দেয়াল তুলে দেয়ার কথা বলেছেন। এটা কি সম্ভব? আমি তা মনে করি না। অভ্যন্তরীণ অভিবাসন ইস্যুতে তার সিদ্ধান্ত সিনেটরদের ভেটোর মুখে পড়তে পারে। প্রেসিডেন্ট যা করবেন বলে ভাবছেন তারা তার বিরোধিতা করতে পারেন। তাই এটা সহজ নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অভিবাসীদের দেশ’ হিসেবে বর্ণনা করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও বলেছেন, ট্রাম্পের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি একেবারে বদলে যাবে বলে তিনি মনে করছেন না। বুধবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আগেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সরকার হস্তক্ষেপ করে অভিবাসন নীতি পরিবর্তনের চেষ্টা করেছে, কিন্তু তারা পারেনি। এবারও কিছুই ঘটবে না। এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ জানিয়েছেন, একজন ব্যবসায়ী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ায় তিনি আনন্দিত। কারখানার কর্মপরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা বন্ধ করে দেয়ার প্রসঙ্গ মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, বারাক ওবামার আট বছরে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কিছুই পাইনি। তাই আমাদের হারানোরও কিছু নেই। ফলে ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসার মধ্য দিয়ে বাণিজ্যের বিচারে বাংলাদেশের সামনে একটি নতুন সূচনার সুযোগ হয়েছে বলে মনে করছেন নিটল-নিলয় গ্রুপের প্রধান মাতলুব। তিনি বলেন, এখন ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্য কূটনীতি বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে আমাদের। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়াদের ছয় মাসের মধ্যেই বাংলাদেশের বিষয়টি তার সামনে তুলে ধরতে হবে। তিনি একজন ব্যবসায়ী। আমার ধারণা, তার কাছ থেকে আমরা কিছু পেতে পারি। ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, তা নিয়েও দুশ্চিন্তার তেমন কিছু দেখছেন না এফবিসিসিআই সভাপতি। ভোটের প্রচারের সময় রাজনীতিবিদরা অনেক ধরনের কথা বলেন। কিন্তু ক্ষমতায় এলে তারা হুবহু সবকিছু করতে পারেন না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও ভোটের সময় বাংলাদেশ নিয়ে অনেক কথা বলেছিলেন। কিন্তু এখন বাস্তবতা পুরো উল্টো। এমনকি অনেক দিন ধরে আটকে থাকা অনেক জটিলতাও তিনি সমাধান করেছেন।
×