ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্র;###;সিয়াটলে গুলিতে আহত ৫, আটক ১৫;###;ওয়াশিংটনে জাতীয় পতাকায় আগুন

শুরুতেই কঠিন পরিস্থিতির মুখে ট্রাম্প

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১১ নভেম্বর ২০১৬

শুরুতেই কঠিন পরিস্থিতির মুখে ট্রাম্প

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ হাজার হাজার বিক্ষোভকারী বুধবার যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বিক্ষোভ করেছে। পাশাপাশি যারা এই রিপাবলিকান প্রার্থীকে প্রেসিডেন্ট হতে সহায়তা করেছে তাদেরও বিরোধিতা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে বিক্ষোভকারীরা। ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ও প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাদের সমর্থকদের প্রতি ট্রাম্পের বিজয় মেনে নিতে এবং তার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে সমর্থনের আহ্বান জানিয়েছেন। তা সত্ত্বেও হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। এর ফলে বিভক্ত দেশটিতে ঐক্য আনতে ট্রাম্পকে কতটা কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সদ্যসমাপ্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলে দেখা যাচ্ছে পরাজিত ডেমোক্র্যেটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে অন্তত দুই লাখ পপুলার ভোট বেশি পেয়েছেন। দেশটিতে যদি সবচেয়ে বেশি প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের নিয়ম থাকত দেশটির ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হতেন হিলারি। মোট প্রাপ্ত ভোটে হিলারি ক্লিনটন ৫ কোটি ৯৭ লাখ ৯৬ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন। আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৫ কোটি ৯৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০৬ ভোট। রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পের জয়ের খবরে বুধবার যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের যেসব দেশের শেয়ার বাজারে মন্দাভাব দেখা দিয়েছিল তা আস্তে আস্তে কমে আসছে। বৃহস্পতিবার এশিয়াসহ অন্যান্য অঞ্চলের শেয়ার বাজারে চাঙ্গাভাব দেখা যায়। বৃহস্পতিবার জার্মানি, লন্ডন, টোকিও, প্যারিসসহ অন্যান্য শহরের শেয়ারবাজারের সূচক বেড়েছে। খবর এএফপি, বিবিসি, ওয়াশিংটন পোস্ট, এক্সপ্রেস ট্রিবিউন ও ডন অনলাইনের। বুধবার থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ চলছে এবং ক্রমে তা বাড়ছে। নিউইয়র্ক, শিকাগো ও লস এ্যাঞ্জেলসের মতো গুরুত্বপূর্ণ মেট্রোপলিটন কেন্দ্রগুলোতে যেমন বিক্ষোভ হয়েছে, তেমনি রিচমন্ড ও পোর্টল্যান্ডের মতো ছোট শহরেও বিক্ষোভ হয়েছে। এসব ঘটনায় আটক হয়েছে অন্তত ১৫ জন। এমনকি আটলান্টা, ডালাস ও কানসাসের মতো রিপাবলিকান ঘাঁটিতেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে সিয়াটলে বিক্ষোভের কাছে এক ব্যক্তির গুলিতে পাঁচজন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বোস্টন, লস এ্যাঞ্জেলেস, নিউইয়র্ক, আটলান্টা, অস্টিন, টেক্সাস, শিকাগো, ডেনভার, ফিলাডেলফিয়া, অরেগন, সানফ্রান্সিসকো, সিয়াটল, ওয়াশিংটনে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে হাজার হাজার মানুষ অংশ নেয়। নানা শ্রেণী, পেশা ও বয়সের নারী-পুরুষ এসব বিক্ষোভে অংশ নিয়ে ট্রাম্পের প্রতি তাদের অনাস্থার কথা জানিয়ে দেন। হোয়াইট হাউসের কাছেও বিক্ষোভকারীরা জড়ো হয়। বিক্ষোভকারীরা ট্রাম্পবিরোধী নানা সেøাগান লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করেন। তারা ‘ট্রাম্প আমাদের প্রেসিডেন্ট নয়’, ‘ট্রাম্পকে চাই না’ বলে সেøাগান দিতে থাকে। বিক্ষোভে ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি, মুসলিমবিদ্বেষ, বর্ণবিদ্বেষ, নারী নিগ্রহসহ অন্যান্য বিতর্কিত বিষয় তুলে ধরেন প্রতিবাদকারীরা। তারা বলেন, ট্রাম্পের মতো লোকের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার ঘটনায় তারা বিস্মিত, ব্যথিত, ভীত। তারা এটা মানতে পারছেন না। টেক্সাসের অস্টিনে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা। ওয়াশিংটনে আমেরিকান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা জাতীয় পতাকা পুড়িয়ে দেন। লস এ্যাঞ্জেলেসে সিটি হলের সামনে বুধবার জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা। সেখানে এক বিক্ষোভকারী ‘ঘৃণা জয়ী হতে পারে না’ লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করেন। বিক্ষোভকারীরা একটি সড়কে ঢোকার সময় গাড়ির ধাক্কায় একজনের আহত হওয়ার খবর জানিয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া হাইওয়ে পুলিশ। শিকাগোর বিক্ষোভে অংশ নেয়া বিক্ষোভকারীরা ‘ট্রাম্প আমাদের প্রেসিডেন্ট নয়’ বলে সেøাগানে দিতে থাকেন। নিউইয়র্ক সিটির সমাবেশের বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য ট্রাম্প টাওয়ারের দিকে যাত্রা। সোশ্যালিস্ট অলটারনেটিভ নিউইয়র্ক শাখা এই বিক্ষোভের আয়োজন করেছে। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, জাতিগত বিদ্বেষ, নারী বিদ্বেষ ও মুসলিম বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াই গড়ে তোলা তাদের উদ্দেশ্য। মার্কিন কোন নির্বাচনের ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে এ রকম বিক্ষোভ নজিরবিহীন বলে বলে জানিয়েছেন সংবাদদাতারা। ট্রাম্পের বিজয়কে ‘খুব দুঃখজনক’ বলে মনে করেন ড্যানিয়েল কলিন নামের এক শিক্ষার্থী, যিনি গুয়াতেমালা থেকে মার্কিন নাগরিকত্ব পেয়েছেন। আরও কয়েকজন লাতিন শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিক্ষোভে যোগ দেয়া কলিন বলেন, লাতিন আমেরিকা থেকে আসা অভিবাসীদের নিয়ে ট্রাম্পের অবস্থানের কারণে তার আমলে তাদের বন্ধু ও স্বজনদের কী হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা। ওয়াশিংটনে বিক্ষোভ আয়োজনকারীদের একজন উদার এ্যাডভোকেসি গ্রুপ মুভঅনডটওআরজির ওয়াশিংটনের পরিচালক বেন উইকলার বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে বলেন, পুরো দেশে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের হাজার হাজার লোক সমবেত হচ্ছে। জনগণ ভীত। আমরা এখানে সমবেত হয়েছি কারণ এই অন্ধকার সময়ে আমরা একা নই। এরপর জনতা ‘আমরা একা নই’ বলে সেøাগান দিতে থাকে। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর নিউইয়র্কে কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, আমি আমাদের ভূখণ্ডের প্রত্যেক নাগরিকের কাছে অঙ্গীকার করছি, আমি সব আমেরিকানের প্রেসিডেন্ট হব। কিন্তু তার আগেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাধারণ মানুষের অনেকেই ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। হ্যাশট্যাগ ‘#হিজ নট মাই প্রেসিডেন্ট’-এর মাধ্যমে অনেকেই প্রকাশ করেছেন নিজেদের উদ্বেগ, ক্ষোভ। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এটি শেয়ার হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি বার। ছদ্মনাম ‘রয়্যালটি ফ্রি’ নামের একটি এ্যাকাউন্ট থেকে হিলারি যেসব অঙ্গরাজ্যে জয়ী হয়েছেন সেই অঙ্গরাজ্যগুলোকে নীল রঙে চিহ্নিত করে দেয়া মানচিত্রসহ #হিজ নট মাই প্রেসিডেন্ট”-হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে একজন লিখেছেন, আমি যতদূর সম্ভব সচেতনভাবেই মনে করছি, এই ভূখণ্ডেই বিরাজ করছে মুক্তি ও স্বাধীনতা, এটাই সত্যিকার অর্থে ইউএসএ। ট্রাম্পের জয় পাওয়া অঙ্গরাজ্যগুলোকে মার্কিন এই মানচিত্র থেকে মুছে দেয়া হয়েছে। মোদির ভাল বন্ধু হবেন ট্রাম্প ॥ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাল বন্ধু হবেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার মার্কিন রিপাবলিকান পার্টির উপদেষ্টা শলব কুমার রয়টার্সকে দেয়া এক একান্ত সাক্ষাতকারে এই কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই ব্যবসায়ী বলেন, ট্রাম্পের জয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র ভাল বন্ধুরাষ্ট্র হবে। শুধু তাই নয় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও ভাল বন্ধু হবেন। এই রিপাবলিকান উপদেষ্টা আরও দাবি করেন, ট্রাম্প আমার কাছ থেকে মোদি সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছেন। আর মোদির বিষয়ে তার জানার অনেক অগ্রহ রয়েছে। ভারত-পাকিস্তানের আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস বিষয়ে তিনি বলেন, আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস বিষয়ে ট্রাম্প ইতোমধ্যে কথা বলেছেন এবং তিনি বলেছেন এসব সন্ত্রাসের মূল হোতা পাকিস্তান। ট্রাম্পের জয়ে চিন্তিত পাকিস্তান ॥ ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় চিন্তায় পড়েছে পাকিস্তান। ইসলামাবাদের এই চিন্তার প্রধান কারণ হলো ট্রাম্প পাকিস্তানের চেয়ে ভারতের প্রতি বেশি আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে। পাকিস্তান বরাবরই ওয়াশিংটনের ভাল বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত।
×