ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এনামুল হক

চলচ্চিত্র ব্যবসায় আলিবাবা!

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ১০ নভেম্বর ২০১৬

চলচ্চিত্র ব্যবসায় আলিবাবা!

জ্যাক মা এবং হলিউডের কিংবদন্তি চলচ্চিত্র পরিচালক-প্রযোজক স্টিভেন স্পিলবার্গ সম্প্রতি বেজিংয়ে আলিবাবা হেড কোয়ার্টারে এক বৈঠকে মিলিত হন। ই-কমার্সের অধীশ্বর সিনেমা নিয়ে কথা বলেন আর চলচ্চিত্র জগতের দিকপাল কথা বলেন অর্থ নিয়ে। দু’জনের কথোপকথন আকষনীয় অংশ দেয়া হলো। জ্যাক : স্টিভেন, আপনি কষ্ট করে সময় বের করে আমার এখানে এসেছেন তার জন্য আপনার তারিফ না করে পারছি না। আশা করি ক্যাম্পাস দেখে আনন্দ পেয়েছেন। স্টিভেন : হ্যাঁ, আনন্দ লেগেছে। ছায়াছবির জন্য এ জায়গাটা এক চমৎকার দৃশ্য হতে পারত। এখন বলুন জ্যাক, আমি আপনাকে কিভাবে সাহায্যে করতে পারি। জ্যাক : আমি চলচ্চিত্র বানাতে চাই [জ্যাক এবার দু’জনের মাঝখানে রাখা নিচু একটা টেবিল থেকে চায়ের কাপ তুলে তাতে একটা চুমুক দিলেন। তারপর কাপটা পিরিচের ওপর নামিয়ে রাখলেন। পরিবেশে নাটকীয়তা আনার জন্য নীরব থাকলেন] অতঃপর কণ্ঠটা একটু চড়িয়ে বললেন, আমার ছায়াছবি তৈরি করা দরকার। স্টিভেন স্মিত হেসে শরীরটাকে বিলাসবহুল লাল ভেলভেটের আরাম কেদারায় পেছন দিকে এলিয়ে দিলেন। স্টিভেন : (জ্যাকের অণুকরন করে) আপনার ছায়াছবি বানানো দরকার? কেন ছায়াছবি বানানো দরকার? আপনি তো এমনিতেই বেশ ভাল ব্যবসা করছেন। ছায়াছবির ব্যবসা কঠিন ব্যবসা। দারুণ ঝুঁকি আছে। আপনার প্রচুর অর্থ লোকসান হতে পারে। জ্যাক : টাকা পয়সা? আমি টাকা পয়সার পরোয়া করি না। আমার প্রচুর টাকা আছে আমি চীনের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি [জ্যাক এবার চায়ে আরেক চুমুক দিলেন। ভাবতে লাগলেন তার আসল উদ্দেশ্যটা কতদূর প্রকাশ করা উচিত। তারপর কাপটা পিরিচের ওপর ঠকাস করে এমনভাবে রাখলেন যেন সবকিছু বলার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন।] জ্যাক : (দীর্ঘশ্বাস ফেলে) আলিবাবা আমি নিজের হাতে বানিয়েছি। তারপর যুক্তরাষ্ট্রে শেয়ারবাজারে ওটাকে তালিকাভুক্ত করেছি। আমি বালতি বালতি টাকা রোজগার করেছি। প্রত্যেকেই কাড়ি কাড়ি টাকা বানিয়েছে। কিন্তু তারপর ই-বাণিজ্যে ভাটা পড়েনি। তবে অনলাইনে পণ্য বিক্রি এখন একঘেঁয়ে লাগছে এবং মুনাফা হ্রাস পাচ্ছে। আমি ভিন্ন কিছু করতে চাই। স্টার্ট-আপগুলোতে বিনিয়োগের পেছনে আমি শত শত কোটি ডলার ব্যয় করেছি। কিন্তু সেগুলোও সব এত বেশি নিস্তেজ ও নিষ্প্রাণ লাগে যে তা বলার নয়। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নিয়েও আমি শিহরিত হওয়ার ভান করছি। জ্যাক তার ভাবনাগুলোকে জড়ো করতে লাগলেন আর স্টিভেন ধৈর্য ধরে দেখতে লাগলেন। তিনি দেখতে পেলেন যে জ্যাক কিছু বলতে চাইছেন এবং তা বলার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন। সে জন্য পরিবেশটা তিনি নষ্ট করতে চাইলেন না। জ্যাক এবার সামনের দিকে ঝুঁকে এলেন যেন গোপন কিছু বলতে চান] জ্যাক : ছায়াছবি বানাতে চাই, স্টিভেন। ছায়াছবি একঘেঁয়ে ব্যাপার নয়। আমরা চীনারা হলিউড পছন্দ করি। আপনি হয়ত জানেন সরকার বিদেশী ছায়াছবির সংখ্যা বছরে ৩৪টিতে সীমিত করে দিয়ে দিয়েছেন। কাজেই প্রতিযোগিতাও সীমিত হয়ে পড়েছে। আমি ইতোমধ্যে একটা মুভি আউট ফিট কিনেছি এবং আমরা ‘মিশন ইমপসিবল’-এ বিনিয়োগ করেছি। [জ্যাক এবার শরীরটা পেছনের দিকে এলিয়ে দিলেন। হাত দু’খানা আড়াআড়িভাবে ন্যস্ত করলেন।] জ্যাক : কিন্তু সেটাই যথেষ্ট নয়। ওই ওয়াং জিয়ালিং লোকটা! ঝাঁটা মার ওকে। ও লিজেন্ডারি (মার্কিন বিনোদন কোম্পানি) কিনে নিয়েছে। ও যত সিনেমা স্ক্রিনের মালিক তেমনি দুনিয়ার আর কেউ নয়। ও সম্পত্তির ব্যবসা করে। রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা করে। একজন রিয়েল এস্টেটের ব্যবসায়ী আমাদের হারিয়ে দেবে এ কেমন কথা! তাই আমার ছায়াছবি তৈরি করা প্রয়োজন স্টিভেন। আমার মুভি বানানো দরকার। স্টিভেন সোজা হয়ে বসলেন। জ্যাকের কথাবার্তায় প্যাশন ও বেপরোয়া ভাব লক্ষ্য করে অভিভূত হলেন। স্টিভেন : বুঝতে পারছি জ্যাক। বুঝতে পারছি তবে এতে তো অনেক টাকার দরকার। জ্যাক : টাকা আমার আছে। সমস্যা নেই। কত টাকা হলে চলবে? স্টিভেন : (মুখ টিপে হেসে ) কত আছে তোমার? এক হাজার কোটি? জ্যাক : এক হাজার কোটি ইউয়ান হলে চলবে? সমস্যা নেই। ওই টাকা দিয়ে সত্যিকারের ভাল ছায়াছবি কতগুলো বানাতে পারব? ওটা তো প্রায় দেড় শ’ কোটি ডলার। ও দিয়ে কি চলবে? স্টিভেন : হ্যাঁ, হ্যাঁ, ওটাই যথেষ্ট। ওদিয়ে নিশ্চয়ই কয়েকটা ছায়াছবি বানাতে পারবেন। জ্যাক : দারুণ! আমি একটা বড়সড় তহবিল দাঁড় করাব এবং ছায়াছবিতে টাকা ঢালতে শুরু করব (স্মিত হেসে)। আমি ছায়াছবি বানাব। প্রচুর ছায়াছবি।
×