ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টেস্টে ১৬ বছর পূর্তিতে রঙিন ইতিহাস টাইগারদের

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১০ নভেম্বর ২০১৬

টেস্টে ১৬ বছর পূর্তিতে রঙিন ইতিহাস টাইগারদের

মিথুন আশরাফ ॥ বাংলাদেশ ক্রিকেটে আজকের দিনটি বিশেষ দিন। ২০০০ সালের ১০ নবেম্বরে যে সাদা পোশাকে ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিল বাংলাদেশ। আজ তাই ১৬ বছর পূর্তি হচ্ছে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের। এই দিনটি উদযাপনের সঙ্গে ইতিহাস রচনাও সঙ্গী হয়ে থাকছে। ইংল্যান্ডকে দ্বিতীয় টেস্টে হারানোর পর সবার কণ্ঠে একই সুর, বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা অর্জন এটি। কেন? এর আগে যে কখনই এত শক্তিশালী দলকে টেস্টে হারান যায়নি। তাও আবার এমন দাপট দেখিয়ে। প্রতিপক্ষ দলটি আবার ইংল্যান্ড। যারা কিনা বরাবরই বাংলাদেশের টেস্ট খেলা নিয়ে ব্যঙ্গ করতেও ছাড়েনি। ইংলিশ মিডিয়ার মাধ্যমেতো আবার কখনও কখনও বাংলাদেশের টেস্ট খেলা উচিত নয়! এমন কথাও ভেসে বেড়িয়েছে। সেই ইংল্যান্ডকেই তিনদিনে টেস্টে হারিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। সেই টেস্ট জেতা স্বাভাবিকভাবেই ইতিহাসের সেরা অর্জন। এ অর্জন অবশ্য বিশেষভাবে পালিত হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ একটাই। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল টি২০) যে চলছে। সবাই নিজ নিজ দলের খেলা নিয়ে ব্যস্ত। মাঠের লড়াইয়ে নামতে হচ্ছে। নয়তো পরের দিনের খেলার জন্য প্রস্তুতি পর্ব সারতে হচ্ছে। তা না হলে হয়তো ইতিহাস রচনার বছরটি বিশেষভাবে পালন করা হতো। সেই সুযোগটি আপাতত মিলছে না। তবে ২০১৫ সালের মতো ২০১৬ সালটিও টেস্টে রাঙিয়ে তুলল বাংলাদেশ। এবারতো যে কোন বছরের চেয়েও সেরা সাফল্য মিলেছে। এ পর্যন্ত ২০০০ সাল থেকে ৯৫টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। ৮টিতে জিতেছে। ৭২টিতে হেরেছে। ১৫টিতে ড্র করেছে। এর মধ্যে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি ৫ বার টেস্ট জিতেছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জিতেছে দুইবার। আর সর্বশেষ ৩০ অক্টোবর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র জয়টি তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। যে জয়টি ইতিহাস রচনা করেছে। কারণ জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে যে ২০০৫, ২০১৩, ২০১৪ সালে তিনবার জিতেছে বাংলাদেশ, শুধু ২০০৫ সাল ছাড়া সবসময়ই বাংলাদেশই ফেভারিট ছিল। ২০০৯ সালে যে ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতেছে বাংলাদেশ, সেই সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছিল দুর্বল দল। ক্রিকেটার ও বোর্ডের মধ্যে দ্বন্দ্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলটিই হয়ে পড়ে ‘বি’ ক্যাটাগরির দল। সেই দলের বিপক্ষে সিরিজ জিতে বাংলাদেশ। তবুও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে যে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানো গেছে, সেটি অনেক বড় কীর্তিই হয়ে আছে। কিন্তু ইংল্যান্ডকে হারানোটা সব টেস্ট জয় থেকে বেশি মাহাত্ম্য পাচ্ছে। কারণ একটাই, এ দলটি যে টেস্টে অনেক শক্তিশালী দল। এর বাইরে আবার বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস নিয়ে কিংবা বাংলাদেশের টেস্ট নিয়ে সবচেয়ে বেশি কটূক্তি করেছে ইংলিশরাই। সেই ইংলিশদেরই যে একটা শিক্ষা দেয়া গেল, সেটিই বড় অর্জন হয়ে রয়েছে। তাইতো টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম বলেছেন, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জয় বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা অর্জন। সঙ্গে যোগ করেন, ম্যাচটি আমরা যেভাবে খেলেছি। যে ব্যবধানে জিতেছি (১০৮ রানে), তাতে এটাই আমাদের ক্রিকেটের ইতিহাসে এ যাবতকালের সেরা অর্জন বলে আমি মনে করি। আসলেই তাই। এমন অর্জন আগের কোন বছরেই চোখে পড়েনি। সময়ের স্রোতে ক্রিকেটে এত বেশি জয় পাচ্ছে বাংলাদেশ, শুধু আনন্দই মিলছে। আর তাই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জয়ের পরও আনন্দের স্রোত দেখা যায়নি। তবে ঐতিহাসিক জয়টিতো মিলে গেছে ঠিকই। ২০০০ সালে প্রথম বছরেই বাংলাদেশ একটি মাত্র টেস্ট খেলে। সেটি ভারতের বিপক্ষে এবং বাংলাদেশেরই প্রথম টেস্ট সেটি। ম্যাচটিতে ৯ উইকেটে হারে বাংলাদেশ। শুরু হয়ে যায় বাংলাদেশের টেস্টে পথচলা। এরপর ২০০১ সালে ৮টি টেস্ট খেলে ৭টিতেই হারে। একটি ম্যাচে ড্র করে। তাও আবার বৃষ্টির সুবাদে। ২০০২ সালেও ৮টি টেস্ট খেলে। এবার সবকটিতে হার হয়। ২০০৩ সালে ৯টি টেস্ট খেলেও সবকটিতে হারে। ২০০৪ সালে ৮ টেস্ট খেলে ৬টিতে হারে। ২টি ম্যাচ ড্র করে। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেন্ট লুসিয়ার ম্যাচটিতে দাপট দেখিয়েই ড্র করে বাংলাদেশ। তখন এই ড্রটিই বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের সেরা অর্জন হয়ে যায়। সময় বদলায়। বাংলাদেশ দলেরও দিন বদলায়। ২০০৫ সালেই সেই বদলের সুর মিলে যায়। এ বছর ৬ টেস্ট খেলে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো জিম্বাবুইয়েকে হারিয়ে বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের প্রথম জয়ের দেখাও মিলে। সঙ্গে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে ড্র করে সিরিজও জিতে নেয় বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো টেস্ট সিরিজ জয়ও হয়। হার হয় চার টেস্টে। তবে বছরটি বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটেরই তখন সেরা বছর হিসেবে বিবেচিত হয়। টেস্ট জয় যে মিলে। এরপর ২০০৮ সাল পর্যন্ত শুধু হার হয়। ২০০৬ সালে চার টেস্টের চারটিতে, ২০০৭ সালে ৫ টেস্টের চারটিতে হার ও ১টিতে ড্র, ২০০৮ সালে ৯ টেস্টের ৮টিতে হারে। ১টিতে ড্র করে। ২০০৯ সালে গিয়ে বাংলাদেশ আবারও জয়ের দেখা পায়। এবারতো বিদেশের মাটিতে টেস্ট জিতে বাংলাদেশ। এ বছরটিতে ৩টি টেস্ট খেলে বাংলাদেশ। ১টি ম্যাচে হারার বিপরীতে ২টি ম্যাচেই জিতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারায় বাংলাদেশ। সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতে নেয়। যদিও ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলটি দুর্বল ছিল। এরপরও দেশের বাইরে টেস্ট জয়টা ঐতিহাসিকই হয়ে থাকে। এরপর ২০১০ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত আবারও হার হয়। ২০১০ সালে ৭ ম্যাচের ৭টিতে হার হয়। ২০১১ সালে ৫ ম্যাচের ৪টিতে হার ও ১টি ম্যাচে ড্র করে। ২০১২ সালে ২ ম্যাচে ২টিতেই হারে বাংলাদেশ। ২০১৩ সালে গিয়ে আবার ভাল বছর মিলে বাংলাদেশের। ৬ ম্যাচ খেলে ২টিতে হার হয়, ৩টি ম্যাচে ড্র করে। জিতে আবার জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ১টি ম্যাচে। শ্রীলঙ্কায় গিয়ে গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুর্দান্ত খেলে বাংলাদেশ ড্র করে। আর চট্টগ্রামে নিউজিল্যান্ডকে টেস্ট জিততে দেয়নি। শুরু হয়ে যায় বাংলাদেশ টেস্টেও ওড়াওড়ি। ২০১৪ সালে ৭ ম্যাচের মধ্যে তিন ম্যাচে হারের সঙ্গে তিন ম্যাচে জিতেও। আরেকটি ম্যাচ যে ড্র হয়, সেটিতেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুর্দান্ত খেলে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে ৫ ম্যাচ খেলে ১টিতে শুধু হারে। ড্র করে ৪টি ম্যাচে। দ্বিতীয় ইনিংসে তামিম-ইমরুলের ৩১২ রানের উদ্বোধনী জুটিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ড্র করা ম্যাচটিতো স্মৃতিতে অমলিন হয়ে থাকবে। ২০১৬ সালেতো বাংলাদেশ মাত্র দুটি টেস্ট খেলে। প্রায় ১৫ মাস বিরতির পর টেস্ট খেলতে নেমেও কি দুর্দান্ত খেলে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডকে প্রথম টেস্টে হারানোর দ্বারপ্রান্তে গিয়েও পারেনি। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টে হারিয়ে দিয়ে ইতিহাস গড়ে। আজ ১৬ বছর পূর্তিতে সঙ্গী থাকছে সাদা পোশাকে ইংল্যান্ডকে হারানোর সেই রঙ্গীন ইতিহাস।
×