ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার

বাগেরহাটের আকরামসহ ৪ আসামির বিরুদ্ধে তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১০ নভেম্বর ২০১৬

বাগেরহাটের আকরামসহ ৪ আসামির বিরুদ্ধে তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বাগেরহাটের খান আকরাম হোসেনসহ ৪ আসামির বিরুদ্ধে তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করেছে প্রসিকিউশন। অধিকতর তদন্তের জন্য আবারও প্রসিকিউটর তিন মাস সময় প্রার্থনা করেন। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। অন্যদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত গাইবান্ধার জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল আজিজ ওরফে ঘোড়ামারা আজিজসহ পলাতক ৬ আসামির বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের সপ্তম সাক্ষী মোঃ আব্দুর রশিদ সরকার (৬৫) জবানবন্দীতে বলেছেন, ঘোড়ামারা আজিজসহ কয়েকজন রাজাকার মিলে আমার বাবা ও মামা বয়েজউদ্দিনসহ ক্যাম্পে আটককৃত চেয়ারম্যান, মেম্বারগণকে হাতে ও কোমরে রশি দিয়ে বেঁধে তিস্তা নদীর পাড়ে লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। সাক্ষীর জবানবন্দী শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২৭ নবেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বুধবার এ আদেশ প্রদান করেছে। এ সময় ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মুখলেছুর রহমান বাদল, প্রসিকিউটর হৃষিকেশ সাহা, প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি, প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা বেগম চমন, প্রসিকিউটর সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, প্রসিকিউটর আবুল কালাম ও প্রসিকিউটর শেখ মোশফেক কবির। একই সঙ্গে বাগেরহাটের চার আসামিকে সেফহোমে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অনুমতি দেয়া হয়েছে। আগামী ২০ ও ২১ নবেম্বর এই চার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ মামলার চার আসামি হলেন- বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের তেলিগাঁতি গ্রামের মৃত মোক্তার আলী খানের ছেলে খান আকরাম হোসেন (৬০), কচুয়া উপজেলার যশোরদি গ্রামের মৃত গফুর আলী মোল্লার ছেলে ইদ্রিস আলী মোল্লা (৬৪) এবং উদনখালি গ্রামের মৃত সফদার মোল্লার ছেলে মোঃ মকবুল মোল্লা (৭৯)। এছাড়া এ মামলায় গ্রেফতারকৃত আরেক আসামি কচুয়া উপজেলার চাপড়ি গ্রামের মৃত শেখ মোসলেম উদ্দিনের ছেলে শেখ মোহাম্মদ উকিল মোল্লা (৮২)। এর আগে ট্রাইব্যুনাল ১২ জনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করার পর বাগেরহাট ও খুলনার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ চারজনকে গ্রেফতার করে। আসামিদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাগেরহাটের কচুয়া ও মোরেলগঞ্জ উপজেলায় গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের সাতটি অভিযোগ আনা হয়েছে। তদন্তে এসব আসামির বিরুদ্ধে ওই সময়ে সংঘটিত অপরাধের সত্যতা পায় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দল। গাইবান্ধার ৬ রাজাকার ॥ মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত গাইবান্ধার জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল আজিজ ওরফে ঘোড়ামারা আজিজসহ পলাতক ৬ আসামির বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের সপ্তম সাক্ষী মোঃ আব্দুর রশিদ সরকার (৬৫) জবানবন্দীতে বলেছেন, ঘোড়ামারা আজিজসহ কয়েকজন রাজাকার মিলে আমার বাবা ও মামা বয়েজউদ্দিনসহ ক্যাম্পে আটককৃত চেয়ারম্যান, মেম্বারগণকে হাতে ও কোমরে রশি দিয়ে বেঁধে তিস্তা নদীর পাড়ে লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এ মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২৭ নবেম্বর দিন ধার্য করেছে ট্রাইব্যুনাল। সাক্ষী আব্দুর রশিদ সরকার বলেন, আমার বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানার খামার পাঁচগাছি গ্রামে। একাত্তরে আমি শোভাগঞ্জ বাজারে ব্যবসা করতাম। একাত্তরে এপ্রিল মাসে পাক আর্মিরা গাইবান্ধা শহরের হেলাল পার্ক সুন্দরগঞ্জ সিও অফিসে একটি সেনাক্যাম্প স্থাপন করেন। আসামি আবু সালেহ মোঃ আব্দুল আজিজ মিয়াকে মাঠেরহাট রাজাকার ক্যাম্পের কমান্ডারের দায়িত্ব দেন। আসামি মোঃ রুহুল আমিন, মোঃ আব্দুল লতিফ, আবু মুসলিম মোঃ আলী, মোঃ নাজমুল হুদা, মোঃ আব্দুর রহিম মিয়াসহ অনেকে এ কমিটির সদস্য ছিলেন। সাক্ষী বলেন, একাত্তরের ৯ অক্টোবর রাজাকাররা আমার মামা বয়েজউদ্দিনকে ধরে মাঠেরহাট রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করে। আমরা আমার মামা বয়েজউদ্দিনকে ছাড়ানোর অনেক চেষ্টা করি। কিন্তু আসামিরা আমার মামাকে না ছেড়ে সুন্দরগঞ্জ সেনাক্যাম্পে নিয়ে যায়। ওই দিন বিকেলে ঘোড়ামারা আজিজসহ রাজাকাররা আমার দোকানে এসে আমার বাবাকে ওই ক্যাম্পে যেতে বলে। আমার বাবা ওই ক্যাম্পে না গেলে আমাদের পরিবারের সবাইকে হত্যা করবে। পরে আমার বাবা ও ছাপারহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নবী বক্র সরকার, মেম্বার আফসার ফকির ও মেম্বার বাইছউদ্দিনসহ অনেকেই ওই সেনাক্যাম্পে যায়। মিটিংয়ের কথা বলে তাদের সেনাক্যাম্পে নিয়ে আটকে রাখে। সাক্ষী বলেন, আমরা কয়েকজন তাদের খুঁজতে যাই। সুন্দরগঞ্জ সেনাক্যাম্পের ৫০-৬০ গজ দূরে আলীম হাজীর বাড়ির পশ্চিম পাশে একটি বাঁশের ঝাড়ের ভেতরে লুকিয়ে থাকি। ওই দিন দেখতে পাই, আসামি ঘোড়ামারা আজিজ, আসামি রুহুল আমিন ওরফে মঞ্জু, মোঃ আব্দুল লতিফ, মোঃ নাজমুল হুদাসহ কয়েকজন রাজাকারসহ আমার বাবা ও মামা বয়েজউদ্দিনসহ আটককৃতদের হাতে ও কোমরে দড়ি দিয়ে বেঁধে তিস্তা নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে তাদের লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। ওই হত্যাকা- আমি নিজের চোখে দেখেছি। আসামিরা ঘটনার আগে আমাদের গ্রামে গিয়ে নির্যাতন ও লুটপাট করেছে। এ কারণে আমি তাদের চিনতাম। আসামি লতিফকে ট্রাইব্যুনালের ডকে থাকায় শনাক্ত করেন সাক্ষী।
×