ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উপজেলা নির্বাচন অফিসে তাদের নিবন্ধন করা হবে ॥ ইসির সিদ্ধান্ত

১ জানুয়ারিতে যাদের বয়স ১৮ হবে তাদের ভোটার করা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১০ নভেম্বর ২০১৬

১ জানুয়ারিতে যাদের বয়স ১৮ হবে তাদের ভোটার করা হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী ১ জানুয়ারিতে যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হচ্ছে অথচ নিবন্ধিত হননি তারা ভোটার হতে ৩ সপ্তাহ সময় পাচ্ছেন। কমিশনের পক্ষ থেকে তাদের ভোটার করতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগামী ২৫ নবেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য নিবন্ধনের সুযোগ পাচ্ছেন। উপজেলা নির্বাচন অফিসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য নিবন্ধন করতে হবে। বুধবার নির্বাচন কমিশনের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জানা গেছে, কমিশনের সভা শেষে ইসি সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, নিবন্ধন থেকে বাদ পড়াদের ভোটার হওয়ার সুযোগ দিতেই ২৫ নবেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধনের এ সুযোগ দেয়া হয়েছে। ১৯৯৯ সালের জানুয়ারি বা তার আগে যাদের জন্ম, ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারিতে তারাই কেবল ভোটার হচ্ছে। তাদের ভোটার করতেই কমিশনের পক্ষ থেকে এ সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনি বলেন, গত বছর ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নাগরিক বিভিন্ন কারণে নিবন্ধনের বাইরে থেকে গেছে। তাদের তালিকাভুক্ত করতে এখন উপজেলা নির্বাচন অফিসে যেতে হবে। এ সুযোগে যারা নিবন্ধিত হবেন আগামী ২ জানুয়ারি ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশের সময় তাদের নামও থাকবে ভোটার তালিকায়। এর বাইরে তিনি উল্লেখ করেন আগামী বছরের যে কোন সময় নতুন করে ফের হালনাগাদের কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। গত বছর মে থেকে নবেম্বর পর্যন্ত ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় ভোটারযোগ্যদের পাশাপাশি কমবয়সীদেরও (১৫-১৭ বছর) তথ্য নেয় ইসি। এ সময় বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহকারীরা ফরম পূরণ করে নেয়। হালনাগাদে যারা যোগ্য ছিলেন তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে এ বছর জানুয়ারিতে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। হালনাগাদে নিবন্ধিত ১৭ বছর বয়সীরা আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যে ভোটারযোগ্য হবেন। ফলে তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হবে আগামী ২ জানুয়ারি। এরপর ৩১ জানুয়ারির মধ্যে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। তবে ইসি জানিয়েছে, গত বছর হালনাগাদের সময় কমবয়সীদের নিবন্ধনের হার ছিল একেবারেই কম। মাত্র ২৫ লাখ নিবন্ধনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। অথচ এ হার দ্বিগুণ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে যারা নিবন্ধন করতে পারেনি তাদের বিশেষ সুযোগ দিতেই নতুন করে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। ইসি জানিয়েছে, ১৯৯৮ সালের ২ জানুয়ারি থেকে ২০০০ সালের ১ জানুয়ারি যাদের জন্ম সেসব নাগরিকদের নিবন্ধন তথ্য নেয়া হবে এবার। উপসচিব নুরুজ্জামান তালুকদার জানান, বিশেষ সুযোগ দেয়ায় এবার বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে না তথ্য সংগ্রহকারীরা। এক্ষেত্রে নির্ধারিত তিন সপ্তাহের মধ্যে ভোটার হতে হলে যোগ্য নাগরিকদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে স্ব স্ব উপজেলা নির্বাচন অফিসে যেতে হবে। দেশে প্রথম ২০০৮ সালে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা তৈরি করা হয়। এরপর নতুন করে ভোটার তালিকা না করে প্রতি বছর যারা ভোটারযোগ্য হচ্ছে তাদের হালনাগাদের মাধ্যমে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। ২ জানুয়ারির মধ্যে তালিকার খসড়া প্রকাশ করা হবে। প্রতিবছর এভাবে ভোটার তালিকায় নতুন ভোটার যোগ হচ্ছে ৫০ লাখের মতো। যারা ভোটার যোগ্য হচ্ছেন তারা আগামী যে কোন নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। কিন্তু কমবয়সী যাদের নিবন্ধনের আওতায় আনা হয়েছে তারা ভোটারযোগ্য না হওয়া পর্যন্ত ভোট দিতে পারবে না। ভোটারযোগ্য হলেও কেবল প্রতিবছর স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভোটার তালিকায় স্থান পাবেন। তবে গত বছর ভোটার তালিকায় ভোটারযোগ্য হওয়ার পাশাপাশি একই সঙ্গে ১৫ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের নিবন্ধনের আওতায় আনা হয় হালনাগাদে। এতে প্রায় ৪৭ লাখ নতুন ভোটার যুক্ত হয়। ইসি জানিয়েছে, নিবন্ধনের তালিকায় থাকা ১৭ বছর বয়সীরা আগামী জানুয়ারির মধ্যে ভোটার যোগ্য হয়ে যাবে। ফলে এদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে প্রকাশ করা হবে। এছাড়া পরের বছর নিবন্ধিত ১৬ বছর এবং তার পরের বছরের ১৫ বছর বয়সীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন। ইসির যুক্তি কমবয়সী যাদের নিবন্ধনের আওতায় আনা হচ্ছে মূলত ১৮ বছর পূর্ণ হলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে। কিন্তু গত বছর হালনাগাদের সময় কমবয়সীদের ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় কমবয়সীদের নিবন্ধনে অপেক্ষাকৃত কম সাড়া পড়েছে। অনেকে নিবন্ধন করতে পারেনি। অথচ এ নাগরিকরা ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি ভোটারযোগ্যও হচ্ছেন। নতুন করে নিবন্ধনের মাধ্যমে খসড়া ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। এ জন্য নতুন করে তাদের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, কমবয়সীদের নিবন্ধন তথ্যে সংগ্রহ নিয়ে আদালত পর্যন্ত গড়ালে নিবন্ধনের ক্ষেত্রে অনেকের অনাগ্রহ তৈরি হয়। এতে আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। জানা গেছে এবার বাদ পড়া ভোটারদের পাশাপাশি ১৯৯৯ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে যাদের জন্ম তাদের ভোটার তালিকায় তালিকাভুক্ত করা হবে। অর্থাৎ বর্তমানে যাদের বয়স ১৭ বছর, আগামী ১ জানুয়ারি ১৮ বছর বয়স হলেই এ সুযোগে নিবন্ধিত হতে পারবেন তারা। ২০০৮ সালে প্রথম ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ শুরু হয়। সে সময় ৮ কোটি ১০ লাখের বেশি নাগরিককে তালিকাভুক্ত করে জাতীয় পরিচয়পত্রও দেয়া হয়। ইতোমধ্যে ২০১০, ’১২, ’১৪ ও ’১৬ সালে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সর্বশেষ হালনাগাদ অনুযায়ী দেশের মোট ভোটার সংখ্যা ৯ কোটি ৯৮ লাখ ৯৮ হাজার ৫৫৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫ কোটি ৩ লাখ ২০ হাজার ৩৬২ এবং নারী ভোটার ৪ কোটি ৯৫ লাখ ৭৮ হাজার ১৯১।
×