ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

স্থলভাগে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে ৪ কোম্পানি নির্বাচিত

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১০ নভেম্বর ২০১৬

স্থলভাগে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে ৪ কোম্পানি নির্বাচিত

রশিদ মামুন ॥ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির জন্য স্থলভাগে টার্মিনাল নির্মাণে চারটি কোম্পানিকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করেছে সরকার। ভারত, চীন, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরের চার কোম্পানির সঙ্গে অবশ্যই পালনীয় নয় এমন সমঝোতা স্মারক (ননবাইন্ডিং এমওইউ) অথবা যৌথ মূলধনী কোম্পানি গঠন চুক্তি করার জন্য বুধবার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, ভারতীয় কোম্পানি পেট্রোনেট এলএনজি লিমিটেড, চায়না হুয়ানকিং কন্ট্রাক্টিং এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন (এইচকিউসি), সিঙ্গাপুরের সেম্বক্রপ ইউটিলিটিজ পিটি লিমিটেড, হংকং সাংহাই মানজেলা পাওয়ার লিমিটেড এবং গ্লোবাল এলএনজি এ্যান্ড পেট্রোনাস মালয়েশিয়া এর সঙ্গে গঠিত যৌথমূলধনী কোম্পানি। বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এর আগে জানান, সরকার দেশে চারটি স্থায়ী এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করতে চায়। এজন্য সরকারের কাছে থাকা প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। নীতিগত অনুমোদনের চিঠিতে বলা হয় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বিদ্যুত, জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ আইন-২০১০-এর অধীনে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য দরকষাকষি শুরু করবে। যেহেতু দরপত্র হবে তাই সঙ্গত কারণে আগের এলএনজি টার্মিনালের ব্যয়কে এখানে বেঞ্চমার্ক ধরা হবে। যদিও এর আগে পেট্রোবাংলা দরপত্র ডাকলে ইউএস এক্সিলারেট এনার্জি লিমিটেড প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজি রিগ্যাসিফিকেশনে ৩৮ সেন্ট দর হাকে। কিন্তু পরবর্তীতে ওই দরপত্র বাতিল করে একই কোম্পানির সঙ্গে ১৭ সেন্ট বাড়িয়ে ৪৯ সেন্টে চুক্তি করে পেট্রোবাংলা। তবে এর থেকে কম দামে ৩৫ সেন্টের মধ্যে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির রিগ্যাসিফিকেশন করা সম্ভব। তবে ওই এলএনজি টার্মিনালটি হবে ভাসমান (এফএসআরইউ)। সরকার দরপত্র ডাকা থেকে বিশেষ আইনে চুক্তি করতে অন্তত সাত বছর সময় নিয়েছে। এখন বিশ্ব বাজারে এলএনজির দর কম। কিন্তু দেশে টার্মিনাল না থাকায় এলএনজির কোন সুবিধা নিতে পারছে না সরকার। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদনের ক্ষেত্রে কয়লা পরিবহন এবং রক্ষণাবেক্ষণে বিরাট ঝক্কি পোহাতে হয়। অন্যদিকে এলএনজি টার্মিনাল থাকলে সরাসরি গ্রিডে গ্যাস দেয়া সম্ভব। এ গ্যাস দিয়ে বিদ্যুত এবং শিল্প উৎপাদন করা যায়। এলএনজি প্রাকৃতিক গ্যাস বলে এতে পরিবেশ দূষণ হয় না। ঝঞ্ঝাটমুক্ত পরিবহন, কম দাম এবং ক্লিন ফুয়েল বলেই এলএনজির প্রতি সরকার সম্প্রতি জোর দিচ্ছে। এছাড়া এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এলএনজি বিক্রির জন্য দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি করতে আগ্রহী। সরকার মনে করছে, এতে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পেলেও এলএনজির ক্ষেত্রে তার কোন প্রভাব পড়বে না। জ্বালানি বিভাগ সূত্র বলছে, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে ১৩টি কোম্পানি আগ্রহ প্রকাশ করে। এর মধ্যে চীনা কোম্পানি সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে। এগুলো হলোÑ হুয়ানকিং কন্ট্রাক্টিং এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন, অফশোর অয়েল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড, সিএএমসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড এবং গুয়াডং। আগ্রহ প্রকাশ করেছে জাপানের মিতসুই এ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড, বেলজিয়ামের এক্সামার, সিঙ্গাপুরের সেম্বক্রপ ইউটিলিটিস পিটি লিমিটেড ও গ্লেনকোর সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড, দক্ষিণ কোরিয়ার কেওজিএএস এবং থাইল্যান্ডের সিয়াম গ্যাস এ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যাল পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড। এছাড়া মালয়েশিয়ার দুটি কোম্পানি এবং ভারতের একটি কোম্পানি পেট্রোনেট দেশে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব দেয়। এর মধ্য থেকে বাছাই করে চারটি কোম্পানিকে নির্বাচন করেছে সরকার। জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, এ চারটি টার্মিনাল হবে ভূমিতে। এগুলো স্থায়ী টার্মিনাল হবে। এর আগে দেশে একটি ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে। ভাসমান টার্মিনালে গভীর সমুদ্রে এলএনজি বহনকারী জাহাজ রাখা হয়। সাবসি পাইপলাইন (সাগরের মধ্যে দিয়ে নির্মিত পাইপলাইন) দিয়ে গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এক্ষেত্রে সাবসি পাইপলাইনের দূরত্বের ওপর টার্মিনালের ব্যয় নির্ভর করে। অন্যদিকে ভূমিতে স্থাপিত টার্মিনালে মজুদ ব্যবস্থা থাকে। অর্থাৎ এলএনজি আমদানি করে সংরক্ষণাগারে রাখার পরে সেখান থেকে সরবরাহ করা হয়। এলএনজিভিত্তিক তিনটি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব এসেছে সরকারের কাছে। এর মধ্যে নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি খুলনায় ৭৫০ থেকে ৮৫০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করবে। বিদ্যুত কেন্দ্রটি ভারতীয় রাষ্ট্রীয় এইচ এনার্জির কাছ থেকে এলএনজির সরবরাহ নিয়ে পরিচালনা করবে। বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এর বাইরে দেশের বৃহৎ বেসরকারী কোম্পানি সামিট পাওয়ার এক হাজার ৬৫০ মেগাওয়াটের এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছে। তারা একই সঙ্গে একটি এলএনজি টার্মিনালও নির্মাণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে প্রস্তাব দিয়েছে। এমসিপি নামে অন্য একটি কোম্পানিও ৮৫০ মেগাওয়াটের এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করতে চায়। ভারতের প্রসিদ্ধ কোম্পানি রিলায়েন্স পাওয়ার বাংলাদেশে চার হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করার জন্য সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছে। সরকার ওই প্রস্তাবে প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছে। সরকার বলছে, গত কয়েক বছরে দেশের স্থলভাগে বড় কোন মজুদের খবর দিতে পারেনি পেট্রোবাংলা। আর বাইরে বাপেক্স যে দ্বিতীয়মাত্রার জরিপ পরিচালনা করছে সেখানেও বড় কোন সুখবরের কথা কেউ বলছেন না। সঙ্গত করণে এলএনজি দেশে গ্যাস সঙ্কটের প্রধান বিকল্প। সরকার ২০১১ সালে কাতার থেকে এলএনজি আমদানির জন্য একটি এমওইউ সই করে। পরে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে বিলম্ব হওয়ায় আর চুক্তি হয়নি। এখন এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের চুক্তি করার পর আশা করা হচ্ছে ২০১৭ সালের শেষে দেশে এলএনজি আসবে। এলএনজি ক্রয়ে দরকষাকষির জন্য সম্প্রতি জ্বালানি সচিবকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটিও করেছে সরকার।
×