ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মোনায়েম খানের বনানীর প্লট বাতিল

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১০ নভেম্বর ২০১৬

মোনায়েম খানের বনানীর প্লট বাতিল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বাধীনতাবিরোধী অন্যতম কূচক্রী ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গবর্নর মোনায়েম খানের সব প্লট বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। বুধবার বিকেলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবনের বোর্ডরুমে রাজধানীর উত্তরা ফ্ল্যাট প্রকল্পের ক্রেতাদের জন্য অনুষ্ঠিত এক ঋণচুক্তি অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এ কথা বলেন। একই সঙ্গে রাজউকের উত্তরা ফ্ল্যাট প্রকল্পের ১০টি ভবনের ৮৪০টি ফ্ল্যাট এ বছরের ডিসেম্বর মাসে ক্রেতাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে ঘোষণা দেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, মোনায়েম খানের ঢাকার বনানীর বাড়িটির বরাদ্দ অতি দ্রুত বাতিল করা হবে। প্লটটি বাতিল করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আমি নির্দেশ দিয়ে দিয়েছি। তাই ওইটা ক্যানসেল হয়ে গেছে। আমি বলে দিয়েছি, যে স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে, তার প্লট বাতিল হবে। আর সেটা গণপূর্তের প্লটই হোক, রাজউকেরই হোক। সেটা বাতিল। তিনি রাজউককে উদ্দেশ করে বলেন, আপনারা সেইটা ক্যানসেল করে দেন, আমরা মন্ত্রণালয় থেকে ক্যানসেল করে দেব। উল্লেখ্য, একাত্তরে মুক্তিবাহিনীর হামলায় নিহত মোনায়েম খানের উত্তরাধিকাররা ওই বাড়ি সংলগ্ন সরকারী ১০ কাঠা জমি দখল করে রাখেন। গত ৩ নবেম্বর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের এ অবৈধ দখল উচ্ছেদের সময় সংস্থাটির মেয়র আনিসুল চিহ্নিত এই স্বাধীনতাবিরোধীর বাড়ির বরাদ্দ বাতিলে সরকারকে আহ্বান জানান। কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের মোনায়েম খান ছিলেন পাকিস্তান আমলে মুসলিম লীগের বড় নেতা। ১৯৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তানের গবর্নরের দায়িত্ব পেয়ে বাংলার মানুষের স্বাধিকার আন্দোলন দমনে আইয়ুব খানের হাতিয়ার ছিলেন তিনি। মোনায়েম খান ১৯৭১ সালের ১৩ অক্টোবর বনানীর এই বাড়ি বাগ-ই মোনায়েম এ মুক্তিবাহিনীর গুলিতে আহত হন। এরপর হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গী দমন অভিযানে কল্যাণপুরে নিহত যুবকদের মধ্যে মোনায়েম খানের এক নাতি আকিফুজ্জামান খানও ছিলেন। সূত্র জানায়, বনানীর ২৭ নম্বর সড়কের ১১০ নম্বর প্লটের ওই বাড়িটি আয়তনে পাঁচ বিঘা। পাকিস্তান সরকারের গবর্নর থাকার সময় ওই প্লটটি বরাদ্দ দেয়া হয় মোনায়েম খানের নামে। রাজউক সূত্র জানায়, বনানীর এ-ব্লকের ১১০ নম্বরের পাঁচ বিঘা ১৫ ছটাক প্লটটি তৎকালীন ডিআইটি হতে ১৯৬৬ সালে মোনায়েম খানের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়। ১৯৬৭ সালে লিজ দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি করা হয়। অনুষ্ঠানে ফ্ল্যাট ক্রেতাদের উদ্দেশ্যে গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, উত্তরা ফ্ল্যাট প্রকল্পের অবশিষ্ট ফ্ল্যাটের নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করা হচ্ছে এবং তা শীঘ্রই হস্তান্তর করা হবে। এ প্রকল্পে ফ্ল্যাটের প্রতি বর্গফুটের বিক্রয় মূল্য কমিয়ে চার হাজার ৫০০ টাকা এবং সুদের হার শতকরা নয়ভাগ করা হয়েছে। উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টরে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) নির্মিত ফ্ল্যাট ক্রেতাদের জন্য রাজউক ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের মধ্যে এক ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে রাজউকের চেয়ারম্যান এম বজলুল করিম চৌধুরী ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সিইও আবরার এ আনোয়ার নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজউকের উত্তরা প্রকল্পের ফ্ল্যাট কিনলে চুক্তি মোতাবেক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ক্রেতাদের সহজ শর্তে স্বল্প সুদের দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দেবে। এ ঋণে সুদের হার হবে শতকরা সাড়ে আট ভাগ এবং কিস্তিতে ঋণ পরিশোধের মেয়াদ হবে ২৫ বছর। তবে ক্রেতাকে ফ্ল্যাটের মোট মূল্যের ৩০ ভাগ অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। অবশিষ্ট অর্থ স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ঋণ হিসেবে প্রদান করবে। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টরে রাজউক ১৭৯টি ভবনে ১৫ হাজার ৩৬টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করবে। এর মধ্যে আট হাজার ৬৩৬টি ফ্ল্যাটের নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এসব ফ্ল্যাটের ১০টি ভবনের ৮৪০টি ফ্ল্যাট ডিসেম্বর মাসে হস্তান্তর শুরু করা হবে। ১০০টি ভবন মালয়েশিয়ার সঙ্গে চুক্তিভিত্তিতে নির্মাণ করা হবে। এখানে উন্নতমানের স্কুল, খেলার মাঠ, মার্কেট, লেকসহ নানা সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে। এসব ফ্ল্যাট নির্মাণ সম্পন্ন হলে বিপুলসংখ্যক লোকের আবাসন সমস্যার সমাধান হবে। উল্লেখ্য, ২১৪ দশমিক ৪৪ একর জমির ওপর উত্তরায় রাজউক এসব ফ্ল্যাট নির্মাণ করছে। এখানে মোট আয়তনের প্রায় ৪৫ শতাংশ জায়গায় সবুজ বেষ্টনী, স্কুল, খেলার মাঠ, মসজিদ, শপিংমল ইত্যাদি গড়ে তোলা হচ্ছে। দৃষ্টিনন্দন লেক ছাড়াও এখানে বেসমেন্ট ও নিচতলায় গাড়ি পার্কিং সুবিধা থাকবে। বর্তমানে রাজউক ৪০টি এবং গণপূর্ত বিভাগ ৩৯টি ভবন নির্মাণ করছে। এছাড়াও পূর্বাচলে ৬০ হাজার এবং ঝিলমিল আবাসিক এলাকায় ১১ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণ করবে রাজউক। বরাদ্দ বাতিল দাবিতে মানববন্ধন ॥ দেশে অনেক মুক্তিযোদ্ধাই অসহায় অবস্থায় জীবনযাপন করছে, অন্যদিকে দেশের স্বাধীনতার যারা বিরোধিতা করেছিল তারা ঠিকই রাজকীয় জীবনযাপন করছে। অবিলম্বে সকল স্বাধীনতাবিরোধীর সম্পত্তি বাজেয়াফত করে মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যায় করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় কমিটির ঢাকা মহানগর কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার চরম বিরোধিতা যারা করেছিল, তাদের মধ্যে অন্যতম মোনায়েম খান। সেই কুখ্যাত মোনায়েম খানের পরিবারের সদস্যরা এখনও সরকারী পাঁচ বিঘা সম্পত্তি দখল করে আছে। অবিলম্বে ওই পাঁচ বিঘা সরকারী সম্পত্তির বরাদ্দ বাতিল করতে হবে। বক্তারা আরও বলেন, দেশে অনেক মুক্তিযোদ্ধাই ঠিকমতো চিকিৎসা পায় না। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ কোন হাসপাতাল নেই। যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াফত করে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য হাসপাতাল নির্মাণসহ তাদের উন্নয়নকাজে ব্যবহারের দাবিও জানান বক্তারা। মানববন্ধনে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় কমিটির সভাপতি মোঃ আবুল খায়েরের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেনÑ সমন্বয় কমিটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মোঃ হারুন অর রশিদ, মহাসচিব সফিকুল বাহার মজুমদার টিপু, মহাসচিব (অর্থ ও পরিকল্পনা) শরিফউদ্দিন, মহাসচিব (কল্যাণ ও পুনর্বাসন) আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী বীরপ্রতীক, সম্মানী ভাতাবিষয়ক সম্পাদক হারুনুর রশিদ জিল্লুর, কেন্দ্রীয় নেতা আনোয়ার হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল বাশার, ডেপুটি কমান্ডার তাজুল ইসলাম, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের সভাপতি হুমায়ুন কবির, মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম কমান্ডের আমিনুল ইসলাম মানিক প্রমুখ।
×